প্রথম পাতা » সেরা » জামাল নজরুলরা এদেশের রিফিউজি

জামাল নজরুলরা এদেশের রিফিউজি

Jamal Nazrul Islam

বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞানী সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, “সে সেরা। আমি তার কাছে কিছুই না।”

“সায়েন্স ওয়ার্ল্ড” নামে একটি বিজ্ঞান ম্যাগাজিন ২০০৭ সালে জামাল নজরুল ইসলামকে নিয়ে একটি ফিচার ছাপিয়েছিল। বাংলাদেশের কোনো ম্যাগাজিনে উনাকে নিয়ে লেখা এটিই ছিলো প্রথম ও শেষ ফিচার।

“কৃষ্ণবিবর” নামে উনার একটি বই আছে যেটা বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া কষ্টকর ।

শুধু এটাই নয়, “কৃষ্ণবিবর” “দ্য আল্টিমেট ফেইট অব ইউভার্স” “রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি” বইগুলো অক্সফোর্ড কেমব্রিজ আর হার্ভার্ড এর মত বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও ১০০ টারও বেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো পড়ানো হয়।
কিন্তু যে দেশে তিনি জন্মেছিলেন, সেই বাংলাদেশের কোন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বই থেকে কোন লেকচার দেয়া হয় বলে আমার জানা নেই…

২০০১ সালে যখন পৃথিবী ধ্বংস হবার একটা গুজব উঠেছিল তখন জামাল নজরুল ইসলাম অংক কষে বলেছিলেন পৃথিবী তার কক্ষপথ থেকে ছুটে চলে যাবার কোনো সম্ভাবনা নেই।

স্টিফেন হকিং কে চিনে না এমন মানুষ খুব কম আছে। উনার লেখা “আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম” বইটি এক কোটি কপিরও বেশী বিক্রি হয়েছে সারাবিশ্বে । সে বইটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৮ সালে।

কিন্তু এই বইটি প্রকাশের প্রায় ৫ বছর আগেই ১৯৮৩ সালে জামাল নজরুল ইসলাম “দ্যা আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স” বইটি লিখেছিলেন। দুটো বই-ই প্রায় একই সব টপিকের উপর লিখা। ব্লাকহোল, ওয়ার্ম হোল, সুপারনোভা, কসমিক রেডিয়েশন, প্যারালাল ইউনিভার্স, বাটারফ্লাই ইফেক্ট ইত্যাদি সব জোতিপদার্থর্বিজ্ঞানীয় ব্যাপারগুলোই ঘুরেফিরে দুটো বইতেই উঠে এসেছে। কিন্তু তুলনামূলক বিচারে জামাল নজরুল ইসলামের বইটিকেই বিশ্বখ্যাত বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগন অধিক মূল্যায়ন করেছেন, যেটি প্রকাশিত হয়েছিল হকিং এর বইয়েরও প্রায় ৫ বছর পূর্বে।
অথচ হকিং এর বই নিয়ে যতটা না মাতামাতি সারাবিশ্বে হয়েছে, তার ছিঁটেফোঁটাও হয়নি জামাল নজরুল ইসলামের কোন বই নিয়ে.. কেনো? পরে বলছি।
বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের ৭ জন শ্রেষ্ট বিজ্ঞানীর নাম বলতে গেলে সে তালিকায় নাকি জামাল নজরুলের নামও চলে আসবে।
বিশ্বের বুকে বাংলার গর্ব জামাল নজরুল ইসলাম
.
১৯৮১ সালে লন্ডনের লাখ টাকা বেতনের চাকরি এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধা ছেড়ে মাত্র ৩ হাজার (২৮ শত) টাকা বেতনের চাকরি নিয়ে তিনি চলে আসেন মাতৃভূমি বাংলাদেশে। বাংলাদেশের বিজ্ঞান শিক্ষা এবং বিজ্ঞান গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তিনি। তাই সব সুযোগ সুবিধা ছেড়ে দেশে চলে এসেছিলেন।

এদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেই সব হয় না। তাঁর অবস্থান একজন নব্য সহকারী কমিশনার কিংবা পুলিশের এসআইয়ের চেয়েও নিচে। ভার্সিটির একজন পাতি নেতা কিংবা হলের একজন পিকেটার কর্মীর চেয়েও ক্যাম্পাসে তাঁর দাপট কম। এদেশের সমাজ সভ্যতা একজন স্টিফেন হকিন্সকে চ-ও করে না। একজন জামাল নজরুল ইসলামের চেয়ে পাড়ার জর্দা জামাল বেশি প্রভাবশালী কারণ সে চুরি করলেও বিশেষ দলের সমাজকল্যাণ সম্পাদক! এদেশে বিজ্ঞানকে লালন করা হয়নি, ধর্মীয় গোড়ামিকে পালন করা হয়েছে। ভোটের আগে আগে চিরসন্ন্যাসীও টুপি লাগিয়েছে। এদেশে আমলা নামক যে জিনিসটি সবচেয়ে শক্তিশালী তাঁদের প্রতাপে স্বয়ং আইনস্টাইনও নস্যি। বেটা নিউটন এদেশে জন্মালে বুঝতেন বিপরীতমুখী ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া তাঁরই সাবেক ছাত্র বর্তমানের সরকারি আমলা কিংবা রাজনীতিবিদ তাঁর পিছন দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এদশের বিশ্ববিদ্যালয় কেবল শিক্ষক নিয়োগ দেয় না একই সাথে দলবাজ চামচা, নীল-সাদার ভোটারও নিয়োগ দেয়। পাচাটার দৌঁড়ে যে এগিয়ে থাকে সে-ই হয় ভবিষ্যত ভিসি-প্রোভিসি-প্রক্টর। পা চাটতে চাটতেই এদেশে এসে ফতুর হতেন গ্যালিলিও, এরিস্টটল, নিউটনরা। ভাগ্যিস তাঁরা এদেশে জন্মান নাই।

এখানে বেনজির তার করের হিসেব দিয়েছে মতিউরের কাছে। এদেশ বেনজির মতিউর ফয়সাল সাকলাইনদের কাছে আমরা বিক্রি করে দিয়েছি। জামাল নজরুলরা এদেশের রিফিউজি।

সেরা থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Sujon Hamid
সুজন হামিদ
জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৮৭ খ্রি., শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম তাওয়াকুচায়। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পারিবারিক জীবনে তিন পুত্র আরিয়ান হামিদ বর্ণ, আদনান হামিদ বর্ষ এবং আহনাফ হামিদ পূর্ণকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। একসময় থিয়েটারে যুক্ত থেকেছেন। রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয় করেছেন অনেক পথনাটকে। মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শকে লালন করেন হৃদয়ে। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের। গ্রন্থ: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞানগ্রন্থ 'বাংলাকোষ'(২০২১)।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *