আওয়ামী দুঃশাসনের অন্যতম হাতিয়ার ছিল এই সাইবার নিরাপত্তা আইন। শুরুতে এটি সাইবার নিরাপত্তা আইন ছিল না। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে প্রথম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন তৈরি হয়। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ২০১৩ সালে এর সংশোধনী এনে আইনটিকে আরও শক্তিশালী করে।
বিতর্কিত এই আইনটির ৫৭ ধারা বাক স্বাধীনতার গলা টিপে ধরে এবং এই আইনের অনেক অপব্যবহার শুরু হয়।
বহু সাংবাদিক, শিক্ষক, লেখককে এই আইনের আওতায় হয়রানি করা হয়।
এরপর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬-সহ মোট ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পাস হয়।
দেশ-বিদেশে ‘ড্রাকোনিয়ান ল’ হিসেবে নিন্দিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নিপীড়িতের সংখ্যা অগণিত। এএফপির বরাতে ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান এক রিপোর্টে জানায়, ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর থেকে প্রায় তিন হাজার মানুষের বিরুদ্ধে এ আইনে মামলা হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২৮০ জনই সাংবাদিক (৩০ মার্চ ২০২৩, দ্য গার্ডিয়ান)।
ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন রাজনীতিবিদেরা। এক্ষেত্রে প্রধান শিকার হয়েছেন বিরোধীরা। এই আইনে এরপর সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয়েছেন সাংবাদিকেরা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
সরকারের কোনো মন্ত্রী বা প্রভাবশালী ব্যক্তির সমালোচনা করলেও ‘রাষ্ট্রদ্রোহে’র অভিযোগ তুলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যখন-তখন মামলা দেয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো এই আইন প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সরকার এই আইনটি পরিবর্তন করে “সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩” পাশ করে।
সাইবার নিরাপত্তা আইনে অনুমতি ছাড়াই যেকোনো ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইন অনলাইন কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের সুবিধা দেয় এবং ব্যক্তির বাক্স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে আইনটি সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের লক্ষ্য করে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ও অসংখ্য ব্যক্তিকে এই আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বর্তমানে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন আমরা দেখছি তা বাস্তবায়ন করতে হলে এই সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল অথবা আমূল পরিবর্তন করতে হবে।