প্রিয় শিক্ষার্থীরা, বিপ্লবী শুভেচ্ছা রইল। এদেশটা নতুনভাবে গড়ার একটা সময় এসেছে। আশা করি, তোমরাই গড়বে আগামীর বাংলাদেশ। গত দু একদিনের অনেক বিষয়ই আমাকে আশাহত করেছে। তবু বিশ্বাস করি, সব ঠিক হয়ে যাবে। ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। এবং এটি করতে হবে তোমাদেরকেই। সেজন্য প্রয়োজন একটি গুণগত ও টেকসই শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর আন্দোলনে নামবে শিক্ষকরা, অচিরেই। নতুনত্বের সেই আন্দোলনে তোমরাই হবে আলোকবর্তিকা।
শিক্ষকদের মেরুদণ্ড শক্ত করা ছাড়া এ জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। সরকারও বিভিন্ন সময় একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে গিয়ে শিক্ষকদের করে রেখেছে তাদের ক্রীড়নক। ফলে, শিক্ষকরা নিষ্পেষিত হয়েছে, নিভৃতে কেঁদেছে, কিন্তু মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। আজো আমাদের মাথা ডেস্কের নিচে, ডায়াস ছু্ঁইছুঁই। ফলে, একটি বিপ্লবী সংগ্রামে তোমরা শিক্ষকদের সেভাবে পাওনি, যেভাবে পাওয়া উচিত ছিল। তবে তোমাদের জন্য শিক্ষকসমাজের শুভকামনা ছিল অনাবিল। ক্লাসে ক্লাসে ন্যায় সংগ্রামের যে স্ফূলিঙ্গ আমরা ছড়িয়েছি তার শক্তিকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
এখন একটা কাজের কথা বলি। শিক্ষকদের মেরুদণ্ড বাঁকা হওয়ার পেছনে ছাত্র রাজনীতির লেজুড়বৃত্তিই দায়ী সবচেয়ে বেশি। তোমরা জেনে থাকবে এদেশে কলেজের অধ্যক্ষকে যিনি পদমর্যাদায় ডিসির ওপরে তাঁকে লাথি মারা, চড় মারা, ময়লা পানিতে চুবানো পর্যন্ত হয়েছে প্রায় নিয়মিত ! কোনো বিচার চেয়েও আমরা পাইনি। শিক্ষককে ছুরি মেরেছে, পা ভেঙে দিয়েছে, চিরদিনের মতো পঙ্গু করে দিয়েছে পরীক্ষায় কড়া গার্ড দেওয়ার অপরাধে! পরীক্ষায় অসুদোপায় অবলম্বন থেকে নিবৃত্ত করা কি অন্যায়? নকল ঠেকানো কি অপরাধ? ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া কি অন্যায়? অথচ এসব করে আমরা মার খেয়েছি প্রতিনিয়ত। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেঁদেছি। বিচার পাইনি। এরপর তোমরাই বল, আমাদের ঘাড় কি সোজা থাকে?
ধরো, আমি একটি স্ট্যাটাস দিলাম। সরকারের পছন্দ হলো না। আমাকে শোকজ, বদলি, বরখাস্ত করা হলে আমার সংসারটা টিকবে? আমার স্ত্রী সন্তানরা রাস্তায় নামবে না ভিক্ষার জন্য? তাহলে বলতো আমরা কি সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর সরকারি কলেজের শিক্ষকদের চাকরির ধরনে রাতদিন তফাত। সাইবার মামলা নামে ভয়ঙ্কর জিনিস তো আছেই।
ছাত্রদের আন্দোলনে আমি শুরু থেকেই পক্ষে লিখেছি। আমাকে ফোন করে বলা হয়েছে : ‘সব স্ক্রিন শর্ট আছে। বিপদে পড়বেন। এগুলো লিখবেন না।’
আমি একবার সন্তানদের দিকে তাকিয়েছি। আরেকবার আমার ছাত্রদের দিকে তাকিয়েছি। লিখেছি, মুছেছি, আবার লিখেছি। বিশ্বাস ছিল, ছাত্ররাই জিতবে। তারা জিতে গেছে। ন্যায়ের জয় হয়েছে। এই আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষে না থাকলে বিবেকের দংশনে শেষ হয়ে যেতাম। সব বিজয়েরই কিছু ক্ষত থাকে। আশা করি, ক্ষত কেটে যাবে।
শিক্ষকজাতির মাথাকে সুউচ্চ করতে প্রয়োজন লেজুড়বৃত্তি, দলকানা ছাত্র রাজনীতির শেকড় উপড়ে ফেলা। এ ধরনের রাজনীতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কলুষিত করা ছাড়া কিছুই দিতে পারে না যা আজ প্রমাণিত।
ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক হোক পরিপূরক। শিক্ষকদের মেরুদণ্ড সেদিনই শক্ত হবে যেদিন শিক্ষাঙ্গনটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়ে উঠবে।