প্রথম পাতা » জীবনযাপন » পহেলা বৈশাখে যা করবেন, যা করবেন না

পহেলা বৈশাখে যা করবেন, যা করবেন না

Boishakh

শহরের পিচঢালা পথ, কিংবা গ্রামছাড়া ঐ রাঙামাটির পথে হাঁটবেন দলবলসহ। শালীশালাভাইবোনবন্ধু সব একসাথে দলে দলে যাবেন বৈশাখী মেলায়। ঘুরবেন। ফুচকা খাবেন। । উড়হা খাবেন। মিষ্টি খাবেন। দধি খাবেন। মিষ্টি পান খাবেন। বাতাসা খাবেন। বাতাসও পাবেন। বিকেলে ঈশাণ কোণে একটা উল্টাপাল্টা বাতাস আসবে। মুহূর্তে সব শান্ত হবে। তারপর হঠাৎ শুরু হবে ঝড়। তখন কবিতা লিখবেন। বিদ্রোহী সাজবেন। প্রেমিক হবেন। দ্রোহ করবেন। বিরহে পুড়বেন। রোদে পুড়বেন। পোলাপানরে পুড়াইবেন। চৈত্রসংক্রান্তির দাবদাহে পুড়ে এরা খাঁটি বাঙালি হবে একদিন।

মেলায় যাবেন। বাসন্তি রঙের শাড়ি পরবেন। লাল পাঞ্জাবি পরবেন। ললনাদের দিকে একবার তাকাবেন। ফরজের তরফ হবে না। নিজের বৌ সাথে থাকলে তাকে বারবার দেখবেন। সওয়াব হবে। জার্নিটাও ভালো লাগবে। যদিও বাঙালি পুরুষ নিজের বৌ এর দিকে বেশি তাকায় না। বরং বাইরের প্রকৃতি দেখে বেশি। দেখেন। নো প্রবলেম। তরমুজ খাবেন। বাঙ্গি খাবেন। মাঙ্গির পুতেগো ধার ধারবেন না। এরা আমাগো সব নিছে। শবে বরাত নিছে। শবে কদর নিছে। মিলাদ নিছে। আশেকে রাসুল নিছে। এখন সব ফকফকা ঠেকে। বরাতে মসজিদে খালি। কদরে মসজিদ খালি। বেদাত বেদাত কইরা আমাগো আনন্দগুলার তেইশ মারছে। শবে বরাতের রাইতে আমরা গোসল করতাম। মায় রুটি বানাইতো। আতর সুরমা মাইখা মসজিদে যাইতাম। নামাজ পড়তাম। বাইরে ঘুরতাম। আবার আইসা নামাজ পড়তাম। হালুয়া রুটি খাইতাম। এর ওর বাড়ি যাইতাম। এরপর আফগান পাঠা এসে সব বন্ধ করলো। আমরা মসজিদ বিমুখ হইলাম। শবে বরাত বলে আর কিছু থাকলো না। বরাতের পথে কদরও গেলো। আমাদের জেগে থাকা রাতগুলো থেকে বিদায় নিলো শিল্প-সাহিত্য-আড্ডা, কাতারে কাতারে নফলপড়া, হালুয়া রুটির সম্প্রীতিগাঁথা।

ফিলিস্তিনের শিশুরা, গাজার বৃদ্ধরা ধুকে ধুকে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ছাল নাই কুত্তার বাঘা নাম। বাপে মরে আন্ধারে পোলার নাম বিদ্যুৎ। যুদ্ধ বাঁধায়ে সব সটকে পড়ছে৷ ফিলিস্তিনে আমার শিশু কাঁদে। খাদ্য নাই। পানি নাই। আরবের মরুভূমিতে সোনা ফলে। হীরা মাণিক্যের চাষ হয়। শেখের পুতেরা এখন হালাল নটি জোগাড় করছে। পশ্চিমের ঘর, দক্ষিণের চর বেবাগ দূরে ভাসে। ফিলিস্তিনের যুবকরা ঘরছাড়া। দুধের জন্য শিশু কান্দে। মায়ে বুকে পাথর বান্ধে। আহ! ফিলিস্তিন, আহ!!

পান্তা খাইতে চাইলে খাবেন। শাক, শুটকি এইসব দিয়ে খান। ইলিশ মারাইতে যাবেন না। এইদেশের মানুষ কোনো কালে পান্তাভাত ইলিশ দিয়ে খায় নাই। কনজিউমারানিরা এইসব নিয়া আসছে। আমাগো পহেলা বৈশাখ বেইচ্চা দিছে। রমনার রমণীরা জাতীয় সঙ্গীত গাইবে। কবিগুরু বুড়ো ঠাকুরের গান গাইবে- এসো হে বৈশাখ এসো এসো…! এই বুড়ো বাংলার আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। এঁরে সরাইতে গেলে আরো জুড়ে বসে। যতবার চক্রান্ত হয় ততবার তিনি আসীন হন পূর্বের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে। আপনিও গলা ছেড়ে গাবেন- এসো হে বৈশাখ, এসো এসো…!

নাগরদোলায় চড়বেন। কোমরের প্যান্টের হুঁক ছিড়ে যেতে পারে। শক্ত বেল্ট লাগাবেন। জোরে চিৎকার দিবেন। মায়েরে ডাকবেন। বাপেরে ডাকবেন। মেলা থেকে উড়হা, বাতাসার প্যাকেট নিয়ে আসবেন। বাপমায়ের হাতে দিবেন। তাগো পুরনো স্মৃতি মনে পড়বে। গল্প শুনবেন। দেখবেন, তাদের চোখের কোণে চিকচিকে জল। ওগুলোই আনন্দ। পাঁচ টাকা দিয়ে তাঁরা এত্তোগুলো আনন্দ কিনতো। এগুলো আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কালচার। হাজার বছরের পুরনো এইসব দিনরাত্রি।

এইসব দিনরাত্রি বাঁচায়ে রাখেন। কাক যখন কোকিলের ভেঁক ধরে তখন তার সব যায়। আমরা বাঙালি। আমাদের ধর্মও আছে আবার নিজস্ব সংস্কৃতিও আছে। সবারই আছে। নিজের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখাই দেশপ্রেম। দেশপ্রেম ইমানেরই অঙ্গ।

পহেলা বৈশাখের জয় হোক। সকলের জীবন হোক মঙ্গলময়।

জীবনযাপন থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Sujon Hamid
সুজন হামিদ
জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৮৭ খ্রি., শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম তাওয়াকুচায়। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পারিবারিক জীবনে তিন পুত্র আরিয়ান হামিদ বর্ণ, আদনান হামিদ বর্ষ এবং আহনাফ হামিদ পূর্ণকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। একসময় থিয়েটারে যুক্ত থেকেছেন। রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয় করেছেন অনেক পথনাটকে। মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শকে লালন করেন হৃদয়ে। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের। গ্রন্থ: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞানগ্রন্থ 'বাংলাকোষ'(২০২১)।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *