প্রথম পাতা » জীবনযাপন » বাইশের বারমাইস্যা

বাইশের বারমাইস্যা

Happy New Year

নতুন বছর নিয়ে আমার তেমন আতিশয্য নেই। গতবছরও এরকম নতুন বছর এসেছিল। এক বছরের বেশি তো টিকল না! আজ আবার নতুন বছর এলো। বেঁচে থাকলে একেও চলে যেতে দেখব। তারপর আবার…!

রাশিয়া-ইউক্রেনের একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধ দেখছে বিশ্ব। এটি বাইশের বিষ! বাংলাদেশে এবছর বেশকিছু অর্জন আছে। এগুলো সুখের। বিশেষত, পদ্মাসেতু এবং মেট্টোরেল। বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় তুলে ধরেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাঁর জন্য শুভকামনা। মানুষ প্রতিনিয়ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। কেউ ভস্ম হয় সেই আগুনে। আবার কেউ আগুনে পুড়ে খাঁটি সোনা হয়। আমিও বিচিত্র অভিজ্ঞতায় নিজেকে মজবুত করার চেষ্টা করেছি।

অনেক বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা মনে করেছিল এ বছরও আমি কোনো সুসংবাদ দিব। কিন্তু তারা এতোটা অবিবেচক কেন? আমিও তো মানুষ! আমি তো আর মেশিন না! সেকথা থাক। আপনারা দোয়া করতে থাকেন। ইনশাল্লাহ, হালি পূরণের পবিত্র ইচ্ছা আছে। অচিরেই হবে না, আল্লাহ আমাকে তিনটি পুত্রধন দান করেছেন (নরমাল ডেলিভারি)। আলহামদুলিল্লাহ! একজন কন্যা ছাড়া জীবনের অর্থ নাই! বেহেশত বানানোর চিন্তায় মশগুল আছি। বাকিটা রাব্বুল ইজ্জতের বিষয়। তিনি যেন মান রাখেন। আমিন।

বাইশ সালটা আমার জন্য তেমন ঢাকঢোল পিটানোর কোনো বিষয় না। ম্যারম্যারা টাইপ বছর। তেমন উন্নতি- অবনতি নাই। তবে পরিমণির পোলায় বাপ ডাক শিখনের আগে সে তার স্বামী রাজকে মুক্তি (?) দিয়েছে শুনলাম। এদিক থেকে আমি ভাগ্যবান। গেলো বছর আমরা বিবাহের দশ বছর পূর্ণ করলাম। আমার তিন পোলায় মুখ ভইরা ‘আব্বা’ ডাকে! আমাগো কালে পরিমল নামে একজন ছিল। তিনি ভিকারুননিসায় পড়াইতেন। ধরা খাওয়ার পর একজন বলছিলেন – ‘পরিমলের পরি উইড়া গেছে, মলটা পড়ে আছে জেলে!’ এ মেয়ের পরি নাই, সবটাই মল! তিনি আমাদের বাংলা সিনেমার আইডল! প্রীতিলতা চরিত্রটি তাকে দিয়ে করানোটা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল! আমরা এ লজ্জা রাখব কোথায়? নারীবাদীরা অবশ্য বলবেন বিয়া-হাঙ্গা ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু যার জন্য এ কথা প্রযোজ্য তিনি এতোদিনে আর ব্যক্তিক নাই, সামষ্টিকে পরিণত হয়েছেন। চেংড়া পোলাপাইন বারোভা… না কি যেন বলে! পোলাপাইনের মুখের নাই বেড়া! সে কি কারো ভাত খায় নাকি যে ভাতারি বলবি? বজ্জাত ছাওয়াল-পাওয়াল কোনেকার ???

লোকের অন্দ-মন্দ কথা বলে লাভ নাই। তারচেয়ে ভালো নিজের কথা বলি। বাইশ সালটা আমার জন্য বাসাবদলের বছর। নিজের ঘরদোর নাই, তাই ভাড়া বাসায় দিন গুজরান। শ্রীবরদী থেকে বাসা পাল্টে এলাম শেরপুর। আমার দুই পুত্র যে স্কুলে পড়তো সেখান থেকে তারা কিছুতেই আসবে না। প্রয়োজনে তারা মেসে থাকবে। (তাদের স্যার মেসে থাকতো তাই এ বিষয়ে কিঞ্চিত জানাশোনা আছে।) শেষ বিদায়ের দিন আমার বড় পুত্রকে নিয়ে স্কুলে গেলাম। সেখানে তার একটিই বন্ধু। তাকে শেষবার দেখে আসবে। ছেলেটা গেলো ঠিকই তার সেই বন্ধু সেদিন স্কুলেই আসেনি! তার হাউমাউ কান্না দেখে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়লাম। নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আমার এ ছেলেটা একবুক ভালোবাসা নিয়ে এসেছে কেন? এ তো পদে পদে ধাক্কা খাবে। সারা রাস্তা সে কারো সাথেই কথা বললো না। ঐদিন কিছুই খেলো না। আর কোনোদিন স্কুল পাল্টাবো না- এমন প্রমিজ করলাম। ছেলেটা খাওয়া শুরু করল।

বাড়িওয়ালারা আমার কাছে হাফবয়েলড টাইপ। না ভালো, না খারাপ। তবে একজন খারাপ লোকের দেখা পেলাম। তিনমাসের মাথায় বাসাটা পাল্টাতে হলো। দুই ছেলে ভীষণ জেদ ধরলো। বাসা পাল্টানো যাবে না। কারণ বাসা পাল্টালেই স্কুল পাল্টে। এখানে নতুন স্কুলে দুই তিনজন বন্ধু হয়েছে। তারা আর নতুন বন্ধু চায় না। কিন্তু বাসা পাল্টাতে হলো। ছেলেদের স্কুলও পরিবর্তন হলো।

আগামিকাল নতুন স্কুলে বই-উৎসব হবে। ছেলেরা নতুন এক উদ্দীপনা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমানোর আগে বড় ছেলেটা গলা জড়িয়ে বলেছে- আব্বু, এই বাসাটা আর কোনোদিন ছাড়বে না। আর এই স্কুলটাও না, প্রমিজ কর।

আমি মিছেমিছি প্রমিজ করলাম। শিশুদের সাথে মিথ্যা বলতে নেই। তবু আমাদের বলতে হয়। আমার ছেলেটা এখনো জানে না- মধ্যবিত্তরা শেকড়হীন বৃক্ষ। এদের এক জায়গায় শেকড় গজাতে না গজাতেই শেকড় বিচ্ছিন্নের ডাক পড়ে।

ওদিকে থার্টি ফার্স্টের গান চলছে, সবই পুরনো দিনের গান। পুরাতনকে ছেড়ে যাওয়া আসলে সহজ কথা নয়! মাঝে মাঝে বিকট শব্দে পটকা ফাটছে। ফাটুক। আমরা ফাটাইন্না জাতি। বিশ্ব জানুক। বাইরে ঘনকুয়াশা। প্রায় কিছুই দেখা যায় না। তবু একদল মানুষ নতুনের স্বপ্নে বিভোর। ছোট ছেলেটার একটা পা আমার ওপর পড়ে আছে। ওরা চারজন নিশ্চিন্তে আরামের ঘুমে আচ্ছন্ন। নতুন বছরের কোনো বিড়ম্বনা ওদের স্পর্শ না করুক।

দোয়া চাই। সকলের জন্য শুভকামনা।

জীবনযাপন থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Sujon Hamid
সুজন হামিদ
জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৮৭ খ্রি., শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম তাওয়াকুচায়। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পারিবারিক জীবনে তিন পুত্র আরিয়ান হামিদ বর্ণ, আদনান হামিদ বর্ষ এবং আহনাফ হামিদ পূর্ণকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। একসময় থিয়েটারে যুক্ত থেকেছেন। রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয় করেছেন অনেক পথনাটকে। মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শকে লালন করেন হৃদয়ে। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের। গ্রন্থ: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞানগ্রন্থ 'বাংলাকোষ'(২০২১)।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *