প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে আরেকটি সৌন্দর্য জাহাঙ্গীরনগরকে দিয়েছে নতুন রূপ। সেটি হচ্ছে দেয়াল চিত্র।
বলা হয়ে থাকে, A picture is worth a thousand words. যদি সেই ছবি হয় হাতে আঁকা, তবে সেখানে যোগ হয় শিল্পীর কল্পনা এবং মায়া। ছবিগুলো জাগ্রত করবে আপনার সৌন্দর্যবোধ, কখনো মনে হবে আপনাকে কী যেন বলতে চাইছে। ক্যানভাস নিয়ে যখন শিল্পী ছবি আঁকতে বসে যান, তখন সেই ছবি কারো জন্য উপহার হিসেবে তৈরি হতে পারে। কিন্তু উন্মুক্ত ক্যানভাসে আঁকা ছবি সবার জন্য উপহার।
জাহাঙ্গীরনগরের উন্মুক্ত ক্যানভাসে আঁকা ছবিগুলো যেন প্রকৃতির মতোই জীবন্ত। চলুন দেখে নেই জাবির কিছু দেয়াল চিত্র।
ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ভেতর দিকের দেয়ালে বিখ্যাত অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র “সং অব দ্য সি”র একটি দৃশ্যের আদলে শৈশবের কল্পনা জগৎ:
ফেসবুকের মাধ্যমে এই চলচ্চিত্রের বিখ্যাত পরিচালক টম মুরের চোখে তাদের আঁকা ছবিগুলো পড়েছিল। তিনি ছবিগুলো দেখে অনেক খুশি হন।
ক্যাম্পাসের দেয়ালগুলোকে ভাষা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ মামুর ও তার বন্ধুরা। প্রথমেই তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন একই বিভাগের অর্পণ অধিকারী। সঙ্গে জুটে গেল ক্যাম্পাসের আরও অনেক শিক্ষার্থী।
মামুরের কাছে মনে হয়েছে গতানুগতিক দেয়ালকে ব্যবহার করা যেতে পারে, সৌন্দর্যে ভরিয়ে দেওয়া যেতে পারে। পোস্টার লাগিয়ে সেগুলোকে এতদিন দৃষ্টিকটূই করা হয়েছে। বন্ধুদের সহযোগিতায় শুরু করলেন, একের পর এক শিল্পকর্ম তৈরি হতে থাকলো।
একেকটি চিত্রকর্মের জন্য যে পরিমাণ রংয়ের প্রয়োজন তার খরচ কিন্তু কম নয়। শুরুতে নিজেদের হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে ছবি আঁকলেও একটা সময় গিয়ে দেখা দিলো অর্থাভাব। থমকে যেতে হলো।
এগিয়ে এলেন একাধিক সাবেক শিক্ষার্থী। আবার শুরু হলো মামুরদের দেয়ালচিত্রের কাজ। আবদুল্লাহ মামুর বলেন, “ক্যাম্পাসের দেয়ালে যখন কোনো ছবি আঁকা হয়, এরপরের কিছুদিন সেটার সামনে রীতিমতো ছবি তোলার উৎসব শুরু হয়ে যায়।”
ক্যাম্পাসের বটগাছকেও তারা সাজিয়েছে রঙিন সাজে।
পরিবহন চত্ত্বরের যাত্রী ছাউনির পেছনের দেয়ালের চিত্র:
খ্যাতিমান তিন অভিনেতার দেয়াল চিত্র আপনার নজর কাড়বে:
প্রসঙ্গত বলে রাখি, খ্যাতিমান এই তিন অভিনেতার মধ্যে হুমায়ূন ফরীদি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র।
তফাৎ হোক শিরদাঁড়ায়। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং অর্গানাইজেশনের জন্য আঁকা দেয়াল চিত্র:
জাকসু ভবনের দেয়াল ফুঁড়ে যেন বেরিয়ে আসছে গিরগিটি:
জাকসু ভবনের আরেকটি দেয়াল চিত্র:
আন্দোলন সংগ্রামের কিছু ইতিহাস আপনাকে মনে করিয়ে দেবে এই অঙ্কন:
অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রের আরো একটি দেয়াল চিত্র:
প্রান্তিক গেটের যাত্রী ছাউনিটিকে দেওয়া হয়েছে মস্তবড় এক ব্যাঙের মাথার রূপ:
হলের দেয়ালে আঁকা চিত্র:
আবদুল্লাহ মামুর এবং Shabuz Hossen Muhib, Farzad Dihan, Aporno Adikary Sikto, Abir Arya, Iffat Tasnim, Nawshaad Ul Sabereen, Shamsuzzoha Sthir, Jennifar Ehsan, Tahsin Imtiaz Towsif, Sadia Farha Liza, মোঃ নাঈম খান মিলে সম্প্রতি যাত্রী ছাউনির দেয়ালে এঁকেছেন নিচের চিত্রকর্মটি।
জাহাঙ্গীরনগরে হাঁটতে গিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের এই গ্রাফিতি আপনার চোখে পড়বে:
সংযোজন: জাহাঙ্গীরনগরের পুরনো কিছু দেয়াল চিত্র নিচে দেওয়া হলো।