তিনি জন্মেছিলেন আজ থেকে শতবছর আগে। এদেশে তখনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেনি। তাঁর জন্মের বছরখানেক পরে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নামে। আমাদের হৃদয়ের অন্ধকার দূর করতে প্রতিষ্ঠিত হয় যে বাতিঘরটি, সেটি তৈরির আগেই পৃথিবীতে, এই বাংলায় এসেছিলেন তিনি মুক্তপথের আলো জ্বেলে। তিনি ছিলেন আমাদের প্রমিথিউস। নিজে জ্বলে অঙ্গার হয়েছিলেন আর আমাদের জন্য আলোর ঝর্ণাধারা রেখে গিয়েছেন।
তিনি ছিলেন কৌশলী, সম্মোহনী শক্তি ছিল তাঁর। ছিলেন ক্যারিশমেটিক লিডার। মন্ত্র জানতেন অনেক। লোকজনকে কাবু করতেন কণ্ঠের মায়ায়। তাঁর পুরো শরীরজুড়েই ছিল কলিজা। যন্ত্রণা সইতে পারতেন খুব। সাড়ে চার হাজার দিনের মতো অন্ধকার প্রকোষ্ঠে থেকেছেন কিন্তু অবিচল হননি, লক্ষ্য ছিল অটুট। ভবিষ্যৎ দেখতে পেতেন। রিপোর্টারের মতো রাজনীতির পথ বলে দিতেন। নাবিকের মতো কাণ্ডারির তরীর হাল ধরেছিলেন। একজনই পির ছিলেন তখন। আর কোনো গাউস, কুতুব ছিল না এই বাংলায়। একাই সাতকোটি বাঙালির অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর একটি আঙুলও কথা বলতো- তর্জনী। তর্জনীর গর্জন ছিল ভয়াবহ! তিনি হুঙ্কার দিতেন- আর যদি একটা গুলি চলে….!
তিনি হয়ে উঠেছিলেন রাজনীতির কবি। ছন্দে, কবিতার মৃদঙ্গে স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন। ছান্দসিক কবির কণ্ঠে স্বাধীনতা এতো মোহনীয় আর অর্থবহ শোনায় না। রাজনীতির কবি খোলাকণ্ঠে মুক্তির গান গেয়ে গেছেন। সব কবিতাই গান হয়। তাঁর কবিতা মহাকাব্য হয়ে উঠেছিল।
শতবর্ষ পরেও তাঁর কণ্ঠ গর্জে ওঠে প্রমত্ত পদ্মার মতো। তিনি বলতে থাকেন…! আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনি। আমরা ‘রোজনামচা’য় বুঁদ হই, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে তাঁহারে খুঁজিয়া বেড়াই! তাঁকে খুঁজি জীবনানন্দের রূপসী বাংলায়, বিশ্বকবির সোনার বাংলায়, নজরুলের বাংলাদেশে!
তিনি আসেন বারবার ফিরে ফিরে, মধুমতী পার হয়ে, কাঁশবনের তীর ছুঁয়ে, নাটাবনের পথবেয়ে! আসেন তিনি দুখিনী বর্ণমালা হয়ে, উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোলে, বিরহীর বাঁশি হয়ে, বিদ্রোহীর শির হয়ে!
আজি হতে শতবর্ষ পরে….
আবার আসিবেন ফিরে উজ্জ্বল নক্ষত্রবেশে!!
প্রমত্ত পদ্মা শুকিয়ে গেছে
যমুনার প্রেম গেছে মরে
গৌরীর বুকে জল নাহিরে
মেঘনার কূল ভরে চরাচরে
পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা…
তেরোশত নদী শুকায়ে মরে
মরানদীর চরায় তবু যে,
শেখ মুজিবের মুখটা ভাসে!!