প্রথম পাতা » জীবনযাপন » পুষতে পারো বিড়াল

পুষতে পারো বিড়াল

Cute Cat

বিড়াল বন্ধুসুলভ ও আদুরে প্রাণী। মানুষের কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে। বিড়াল পছন্দ করেন না, এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। গৃহে পালনের জন্য পোষা প্রাণীর মধ্যে বিড়ালই অধিকাংশের পছন্দ। কারণ এরা খুবই আদুরে হয়। গৃহপালিত এই প্রাণী মানুষের সঙ্গে মুহূর্তেই মিশে যেতে পারে। সামান্য আদর—যত্ন ও খাবার দিলেই বিড়াল আপনার পোষ মেনে যাবে। অনেকেই বিড়াল পছন্দ করেন। এ কারণে শখেরবশে পুষে থাকেন বিড়াল।
বিড়ালকে ভালবেসে আমরা হুলো, মিনি, পুষি কত নামেই না ডাকি। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রাচীন মিশরে বিড়াল পালন শুরু হয়েছিল। বর্তমান আধুনিক শহুরে জীবনে শিশু—কিশোর/কিশোরীদের মধ্যে বাসা—বাড়িতে দেশি—বিদেশি বিড়াল পালার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, বিড়ালের প্রতি তাদের এতো মায়া আর আহ্লাদ, যা অন্য কারো প্রতি নেই। বিড়ালকে শ্যাম্পু দিয়ে গোসল, খাবার খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, সঙ্গে করে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় শিশু—কিশোর/তরুণ—তরুণীদের।

বিড়াল পালন ভালো

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়ালের কদর সবচেয়ে বেশি। কারণ বিড়াল শান্তশিষ্ট প্রাণী। বিড়ালের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ যুগ যুগ লক্ষ্যণীয়। প্রাক—ইসলামি যুগ থেকে শুরু করে নবী করিম (সা.)—এর জামানায় অনেকেই বিড়াল পুষতেন। এমনকি সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী (৫৩৭৫টি হাদিস তিনি বর্ণনা করেছেন) সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.)—কে বিড়ালের পিতা বলে ডেকেছেন নবী করিম (সা.)। তার প্রকৃত নাম আবদুর রহমান ইবনে সাখর। ‘আবু হুরায়রা’ (বিড়ালের বাবা) নামটির পেছনে একটি মজার কাহিনী রয়েছে। এক দিন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) জামার আস্তিনের নিচে একটি বিড়ালছানা নিয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)—এর দরবারে উপস্থিত হন। সে সময় বিড়ালটি হঠাৎ করে সবার সামনে বেরিয়ে পড়ল। এ অবস্থা দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে রসিকতা করে, ‘হে বিড়ালের পিতা’ বলে সম্বোধন করলেন। এরপর থেকে তিনি আবু হুরায়রা নামে খ্যাতি লাভ করেন। আর সেদিন থেকে তিনি নিজেকে আবু হুরায়রা নামেই পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন। উপরোক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বোঝা যায়, ইসলামে বিড়াল পালনে কোনো বাধা নেই। যারা মসজিদের হারাম কিংবা মসজিদে নববিতে যান, তারা সেখানে প্রচুর বিড়াল ছোটাছুটি করতে দেখেন। আগত মুসল্লিরাও তাদের পানি কিংবা খাবার দিয়ে থাকেন।

পোষা বিড়ালকে কতক্ষণ একা রাখা যাবে

সম্প্রতি বিড়ালের সামাজিকতা এবং সম্পৃক্ততার ওপর দুটি গবেষণা থেকে জানা যায়, বিড়াল খুবই সামাজিক এবং মানুষের সঙ্গে শক্তিশালী এবং দৃঢ় বন্ধনের প্রতি বেশ আগ্রহী। তবে বিড়ালরা একাকীত্ব অনুভব করে না বলে মনে করার কোন কারণ নেই এবং তাদের মধ্যে একঘেয়েমিতাও দেখা যায়। পোষা বিড়াল কতক্ষণ একা থাকা সহনীয় এবং একাকীত্ব দূর করতে করণীয় নিয়ে বিড়ালের মালিকদের জন্য নির্দেশিকার অভাব থাকায় এ বিষয়টি আড়ালেই রয়ে গেছে এতদিন। এ ক্ষেত্রে কারও পোষা বিড়াল বাইরে যেতে পারলেও, যাদের সে সুযোগ নেই সেসব বিড়ালের জন্য একাকীত্ব বেশ দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া প্রত্যেক বিড়াল একে অন্যের থেকে আলাদা। যেহেতু প্রতিটি বিড়ালের চাহিদা বিড়ালের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব, তার মানুষের সঙ্গে বিড়ালের সম্পর্ক, বাড়িতে অন্যান্য প্রাণীর উপস্থিতি (কুকুর সহ) ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে, তাই কোন বিড়ালের কী প্রয়োজন সে সম্পর্কে সাধারণীকরণ করা বেশ কঠিন। তবে পোষা বিড়ালের জন্য আলাদা অভিজ্ঞতাভিত্তিক নির্দেশিকা না আসা পর্যন্ত পোষা কুকুরের জন্য যে ৪ ঘণ্টা একা থাকার বিষয়টি অনুসরণ করা ভালো।

বিড়ালকে সঙ্গ দেওয়ার মতো কেউ না থাকলে কী করবেন

যদি কাজের সূত্রে বা ভ্রমণের জন্য বাহিরে থাকার প্রয়োজন হয়, তখন কাউকে দিনের কিছু সময় বিড়ালকে সঙ্গ দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। যার ফলে বিড়াল সঙ্গীর মনোযোগ, মানসিক উদ্দীপনা এবং ভালবাসা পাবে। তবে প্রতিদিন ক্যাট—সিটারের ব্যবস্থা না করতে পারলে বাড়ির পরিবেশকে ক্যাটিফাই বা বিড়াল উপযোগী করা যেতে পারে। অর্থাৎ, বাড়িতে ক্যাট ট্রি, অটোমেটিক ফিডারস, ফুড পাজলস, স্ক্যাটার টয় ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা যাতে বিড়াল আনন্দে তার একাকী সময় কাটাতে পারে। এ ছাড়া বিড়ালকে সঙ্গ দিতে আরেকটি বিড়ালও আনা যেতে পারে। এতে তারা নিজেদের মধ্যে খেলাধুলা, খুনসুটিতে ব্যস্ত থাকবে।

জেনে রাখো- বিড়ালের কোন আচরণের কী মানে

বিড়ালের আচরণ নিয়ে গবেষণা করা বিশেষজ্ঞ অনিতা কেলসি। ‘লেটস টক অ্যাবাউট ক্যাটস’ নামে একটি বইও লিখেছেন তিনি। অনিতা বলছেন, মনে কী ঘটছে সেটা প্রকাশের জন্য বিড়ালের নিজস্ব ‘ভাষা’ রয়েছে। তাকে পোষ মানানো মালিকের উচিত সেই ভাষাটি পড়তে পারার দক্ষতা অর্জন করা। তাহলে জেনে নাও বিড়ালের ভাব ও ভাষা মানে-

মানুষের আশপাশে ঘুরঘুর করা: বিড়ালের আচরণ এবং শরীর বিশেষজ্ঞ জ্যাকসন গ্যালাক্সি বলেছেন, একটি বিড়ালের রাজকীয় উপস্থিতিই তার ইতিবাচক আচরণের নির্দেশক হতে পারে। গ্যালাক্সি ব্যাখ্যা করেছেন, বিড়াল প্রায়ই এক ধরনের রাজকীয় ভাব নিয়ে বসে থাকে। যেমন— বুক উঁচিয়ে, কান খাড়া রেখে এবং স্বচ্ছ চোখে তাকিয়ে থেকে। এর অর্থ হলো সে তখন আশপাশের অঞ্চলের মালিকানা অনুভব করছে। এই ‘স্বাধীন অঞ্চলে’ সে স্বাধীনভাবে ঘোরাঘুরি করা বা ইচ্ছে মতো শুয়ে—বসে থাকার অধিকার রাখে। বিশেষজ্ঞ অনিতা কেলসির মতে, আরেকটি ইতিবাচক লক্ষণ হলো যখন একটি বিড়াল আপনার মতো একই ঘরে থাকতে আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আপনার কোলজুড়ে বিড়ালের বসে থাকা বা এর পেট আপনার সামনে উন্মুক্ত করে দেয়াও আরাম উপভোগের লক্ষণ।

ঘ্রাণ নেয়া: ঘ্রাণ নেয়া অথবা বিড়াল আপনার শরীরে বা কোনো বস্তুর ওপর মাথা ঘষলে ধরে নিন এটি তাদের ভালোবাসা প্রকাশের লক্ষণ। বিড়াল এভাবে গন্ধ ছড়িয়ে নিজের প্রিয় অঞ্চল চিহ্নিত করে থাকে। বিড়াল চেটেও এটি করতে পারে।

দলিত মথিত করা: অনেক সময়েই বিড়ালকে নরম কোনো বস্তু যেমন কম্বল বা চাদরকে দলিত মথিত করতে দেখা যায়। সে মনে করে, এভাবেই সান্নিধ্যে নিরাপদ আছে। প্রশান্তি, ভালোবাসার মধ্যে থাকা বিড়াল এ কাজটি করে থাকে। এটি হলো ঘনিষ্ঠতা প্রকাশের একটি ভাষা।

সোজা লেজ : বিশেষজ্ঞ জ্যাকসন গ্যালাক্সি বলছেন, বিড়ালের লেজও তার খুশির একটি চিহ্ন হতে পারে। যেমন— একটি বিড়াল আপনার কাছে এসে লেজ সোজা করে রাখলে বা শেষের দিকটি সামান্য বাঁকানো থাকলে ধরে নিতে পারেন, এটি তার ভালোবাসা প্রকাশের চিহ্ন।

চোখ দেখে বুঝুন ভালোবাসা: বিশেষজ্ঞ জ্যাকসন গ্যালাক্সি বলেন, বিড়ালের আরো একটি ইতিবাচক আচরণ হলো, চোখে ধীর পলক। খোলা চোখ, ধীরে পলক ফেলা একটি বিড়াল মানেই সে সুখী ও মানসিকভাবে প্রশান্ত। অথচ পলক না ফেলে সরাসরি তাকিয়ে থাকা বিড়ালকে ভয় পান অনেকে।

হিস হিস শব্দ করা: রাগ বা অস্বস্তি প্রকাশেরও নিজস্ব ধরন রয়েছে বিড়ালের। বিশেষজ্ঞ অনিতা কেলসি বলেছেন, হিস হিস করা বা গর্জন করার অর্থ একটি বিড়াল কিছু বিষয় নিয়ে অখুশি। আর গ্যালাক্সি বলেছেন, হিস হিস শব্দ সাধারণত অন্য ব্যক্তি বা প্রাণীর জন্য একটি সতর্কবার্তা। বিড়ালটি তাকে সরে যেতে বলছে। বিড়াল সাধারণত পরিচিত জিনিস পছন্দ করে, এটি তার মধ্যে নিরাপত্তা বোধেরও জন্ম দেয়। গ্যালাক্সি বলেন, ‘তাই কখনও কখনও বিড়ালের হিস হিস করার কারণ তাদের পরিচিত পরিবেশে একটি নতুন বস্তু দেখা যাচ্ছে (যেমন— একটি খেলনা বা আসবাবের টুকরা)। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে বিড়ালকে অভ্যস্ত করার জন্য বাড়িতে আস্তে আস্তে নতুন সামগ্রী আনার পরামর্শ।

লিটার বক্সে অনাগ্রহ: অনিতা কেলসি বলেন, লিটার ট্রের বাইরে বিড়ালের টয়লেট করার ঘটনা বিড়ালের কোনো একটি সমস্যা অথবা অসন্তুষ্টির চিহ্ন। জ্যাকসন গ্যালাক্সি বলেন, এর সহজ অর্থ হতে পারে আপনি যে ধরনের লিটার ব্যবহার করছেন বিড়াল তা পছন্দ করছে না অথবা এটা বক্সের বেশ গভীরে রয়েছে। সাধারণ ধারণাটি হলো, লিটার বক্স ব্যবহারের সময় বিড়াল গোপনীয়তা পছন্দ করে। বিড়াল এ সময় তাদের চারপাশটি পরিষ্কার দেখতে চায়। আবৃত লিটার বক্স বিড়ালের একদমই পছন্দ নয়।

আঁচড় কাটা: জ্যাকসন গ্যালাক্সি বলছেন, বিড়াল অনেক কারণে আঁচড় দেয়। যেমন— উত্তেজনা প্রকাশ, উত্তেজনা কমানো, চাপ প্রশমন, নিজের অঞ্চল চিহ্নিত করতে এরা আঁচড় দিয়ে থাকে। আবার মরে যাওয়া নখ ফেলে দেয়া এবং থাবা ঠিকঠাক রাখতেও এটা করা প্রয়োজন। আঁচড়ানো কোনো খারাপ স্বভাব নয়, তবে বিড়াল শক্ত কাঠের মেঝেতে আঁচড় কাটতে শুরু করলে সমস্যা হতে পারে।

হামলে পড়ে সব খেয়ে নেয়া: জ্যাকসন গ্যালাক্সি বলছেন, বিড়ালের অতিরিক্ত ক্ষুধা বা খাবারের জন্য মালিকের পিছে পিছে ঘোরা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। কারণ এমন আচরণ হাইপারথাইরয়েডিজম বা টেপওয়ার্মের মতো স্বাস্থ্য—সম্পর্কিত সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এ ধরনের লক্ষণ দেখা গেলেই মালিকদের সঠিক পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

Cute Cat

বিড়ালের মজার তথ্য

মাপযন্ত্র গোঁফ: গোঁফহীন বিড়াল হয়ইনা, দেখবে কি করে! গোঁফ দিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজও করে বিড়াল। ছোট্ট গর্ত দিয়ে যেতে চাইলে বিড়াল কিন্তু ওই গোঁফ দিয়েই মেপে নেয়, তারপর ঠিক করে যাওয়ার চেষ্টা করবে কিনা।

নাক করে জিভের কাজ : মানুষের জিভে ৯ হাজার এমন ধরনের ‘সেন্সর’ আছে যেসবের কাজই হলো খাবারের স্বাদ পরীক্ষা করা। বিড়ালের জিভে সেরকম সেন্সর মাত্র ৪৭৩টি। ফলে স্বাদ বোঝার কাজে তাদের জিভ অনেক কম কার্যকর। বিড়াল তাই বাধ্য হয়ে খাবারে স্বাদ বোঝে নাক দিয়ে গন্ধ শুঁকে।

মানুষের রক্তচাপ কমায় বিড়াল: গায়ে হাত বোলালে বা কোলে নিয়ে আদর করলে বিড়াল যে আহ্লাদ করে ঘরঘর আওয়াজ করে, সেই আওয়াজ শুনলে নাকি মানুষের উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়। এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে এটা।

অন্ধকারে দেখে ভালো: অন্ধকারে খুব ভালো দেখে বিড়াল। কোনো কিছু পরিষ্কার দেখার জন্য মানুষের যতটা আলোর প্রয়োজন তার ছয় ভাগের একভাগ আলোতেই সেই বস্তুটি পরিষ্কার দেখতে পারে বিড়াল।

সবচেয়ে বড় চোখ: পৃথিবীর সব প্রাণীর মধ্যে শরীরের অনুপাতে বিড়ালের চোখই সবচেয়ে বড়। হাতি খুব বড়, তিমি মাছও বিশাল, তাদের চোখ কিন্তু শরীরের অনুপাতে বিড়ালের তুলনায় অনেক ছোট।

মজার সব ডাক: মানুষের মতো বিড়ালও কিন্তু একেক দেশে একেক ভাষায় কথা বলে, অর্থাৎ বিড়ালের ‘মিঁউ, মিঁউ’ নাকি সবদেশেই একরকম নয়। তাই কাটালুনিয়া বিড়ালরা ডাকলে সেই ডাক শোনায় ‘মিঁউ’—এর মতো, ক্যান্টনের বিড়াল ডাকে ‘মাও, মাও’, ডেনমার্কের ‘মিয়াভ’, নেদারল্যান্ডসের ‘মিয়াউ’, ইংল্যান্ডের ‘মিয়ো’, ফ্রান্সের ‘মিয়াও’, গ্রিসের ‘নাইউ’ এবং জাপানের বিড়ালের ডাক নাকি ‘ন্যায়ান, ন্যায়ান’—এর মতো শোনায়।

বিড়ালদের রাজত্ব জাপানের দ্বীপে

দ্বীপটির নাম ‘তাশিরোজিমা’ এখানে মানুষের বসবাসের জন্য নেই তেমন কোনও ভালো ব্যবস্থা। খুব ভালো খাবারও পাওয়া যায় না। তবুও মানুষ সেখানে অদ্ভুত আকর্ষণে ছুটে যায়। আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে বিড়াল। প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ওশিকা উপদ্বীপের কাছে তাশিরোজিমা দ্বীপ। এটি জাপানে অবস্থিত। এই দ্বীপের পথে ঘাটে বিড়ালগুলো ঘুরে বেড়ায়। এসব বিড়ালকে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করেন স্থানীয়রা। ২০১৫ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, তাশিরোজিমা দ্বীপে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা মাত্র ৮০ জন। আর বিড়ালের সংখ্যা প্রায় দেড়শো। এই দ্বীপের অধিবাসীরা মাছ ধরে অথবা পর্যটকদের আতিথেয়তা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দ্বীপে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই দ্বীপের সৌন্দর্য অন্য দ্বীপের থেকে আলাদা। জানা যায়, ১৯৫০ সালের দিকে এই দ্বীপে বিড়ালের থেকে মানুষের সংখ্যা বেশি ছিল। জাপানের এই দ্বীপে ২০১১ সালে সুনামি হয়। বদলে যায় দ্বীপের পরিবেশ। এরপর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। অনেক মানুষ দ্বীপ ছেড়ে চলে যান।

পোষা বিড়াল ও কুকুরের নামে সম্পত্তি লিখে দিলেন বৃদ্ধা

চীনের বাসিন্দা ‘লিউ’ তার সব সম্পত্তি সন্তানদের নামে লিখে না দিয়ে, দিয়েছেন নিজের পোষা বিড়াল এবং কুকুরকে। লিউ এর ২৩ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক এখন তার পোষা বিড়াল এবং কুকুর ছানা। এর আগে লিউ তার সম্পত্তির একটা অংশ সন্তানদের নামে লিখে দিলেও এখন সেখানে বড় পরিবর্তন এনেছেন । কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, পুত্রকন্যারা কখনও তার পাশে থাকেনি। তাই বৃদ্ধ বয়সে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। হতাশা এবং ক্ষোভ থেকেই জীবনের বড় সিদ্ধান্তে বদল এনেছেন তিনি। দলিলে লিউ উল্লেখ করেছেন, তার পরিবারে কেউ নেই, তাই তার প্রায় ২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি পোষ্য বিড়ালছানা ও কুকুরছানাদের নামেই থাকবে। তার মৃত্যুর পর পোষ্যদের যত্ন ও তাদের লালন—পালনের কাজে সেই টাকা ব্যবহার করা হবে।

নিউজিল্যান্ডের এক গ্রামে বিড়াল পালন নিষিদ্ধ

নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলের ছোট্ট একটি শহর ওমাউই। সেখানে বন্য প্রাণী রক্ষার চেষ্টা হিসেবে চরম এক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে— আর তা হল সব ধরনের পোষা বিড়ালের ওপর নিষেধাজ্ঞা। এনভায়রনমেন্ট সাউথ—ল্যান্ড—এর প্রস্তাবিত এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, ওমাউইতে যত বিড়াল—প্রেমী আছেন তাদের বিড়ালকে বন্ধ্যা করতে হবে, সেগুলোর শরীরে মাইক্রোচিপ বসাতে হবে এবং বিড়ালকে নিবন্ধিত করতে হবে। তাদের পোষা বিড়ালের মৃত্যু হলে ওই স¤প্রদায়ের বিড়াল—প্রেমী লোকজন নতুন করে বিড়াল পালনের অনুমতি পাবেন না।
এটা বাড়াবাড়ি বলে মনে হতে পারে বটে, কিন্তু উদ্যোক্তাদের যুক্তি— প্রতিবছর কোটি কোটি পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর মৃত্যুর জন্য দায়ী এসব বিড়াল।

পোষা বিড়াল থেকে ‘সিজোফ্রেনিয়া’!

‘সিজোফ্রেনিয়া’ ও ‘বাইপোলার ডিসঅর্ডার’—এর মতো জটিল মানসিক ব্যাধির কারণ হতে পারে ঘরের পোষা বিড়াল। বিজ্ঞানীদের স¤প্রতি এক গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। অধিকাংশ বিড়ালের মধ্যেই এ দুটি রোগের জীবাণুর উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন গবেষকরা। জীবাণুটির নাম ‘টোক্সোপ্ল্যাজমা গোন্ডি’। ‘সিজোফ্রেনিয়া বুলেটিন’ সাময়িকীতে গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানলি মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসএমআরআই) পূর্বে পরিচালিত দুটি গবেষণার তথ্য—উপাত্ত সংগ্রহ করে, তা বিশ্লেষণ ও তুলনামূলক পর্যালোচনা করেন। তারা দেখেন, শৈশবে খেলার সঙ্গী প্রিয় পোষা বিড়ালটির ওই জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে শিশুর মধ্যে এবং এক পর্যায়ে মারাত্মক মানসিক বৈকল্য সিজোফ্রেনিয়া বা বাইপোলার ডিসঅর্ডার দেখা দিতে পারে। শৈশবে শিশুরা বিড়ালের সঙ্গে যদি বেশি খেলাধুলো করে বা সময় কাটায়, জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে তা মানসিক বিকার সৃষ্টিতে অন্যতম ভূমিকা রাখতে পারে।

বিড়ালের দাম

গুগল সার্চ করলে বিক্রয়ডটকমে একটি বিড়ালের দাম ২ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায় দেখা যাচ্ছে। পার্সিয়ান বিড়ালেরও বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। যত উন্নত প্রজাতি দামও তত বেশি। পারস্য দেশ থেকে আমদানি করা এই প্রজাতির বিড়াল কিনতে গেলে বাজেট রাখতে হবে ৮ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা প্রর্যন্ত। শরীরের আকার, লোমের মান, চোখের মণির রং, স্বভাব এর উপর দাম নির্ভও কেও বলে জানিয়েছেন রাজধানীর কাটাবনের এক বিড়াল বিক্রেতা।

বিড়ালের হাট

অনুসন্ধানে দেখা দেখা গেছে রাজধানী ঢাকার নিউ মার্কেট, ঢাকা ইউনিভার্সিটির আশেপাশে এলাকাগুলোতে বিড়ালের দোকান রয়েছে। রাজধানীর ঢাকার কাটাবনে বিড়ালের মার্কেট রয়েছে।

বিড়ালের খাবার

বিড়াল পালে এমন পরিবার থেকে বিড়ালের খাবার সম্পর্কে জানা যায় চমৎকার তথ্য। তারা জানান, ‘তাদের নরমাল খাবার হলো জেলি, চিকেন। মিষ্টি কুমড়া, গাজর বেলেন্ডারে নরম করে খাওয়াতে হয়। তারা আরো জানান, ওদেরকে মাঝে মাঝে ওরস্যালাইন গুলে পানি খাওয়াই। মাছ পছন্দ হলেও কাঁটা বেছে দিতে হয়। না হলে গলায় বিঁধে যেতে পারে। টুনা, স্যামনের মতো সামুদ্রিক মাছ যেমন প্রিয়, তেমনই টিনজাত খাবার খেতেও ভালোবাসে এরা। এ ছাড়া হাড় ছাড়া মুরগি সেদ্ধ কেও খাওয়াই।’

বিড়াল নিয়ে নানা উদ্যোগ

প্রাণীদের নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এখন আয়োজিত হচ্ছে নানান ধরনের অনুষ্ঠান। পশুপ্রেমী সংগঠন ‘ক্যাট কনসার্ন অ্যাসোসিয়েশন’য়ের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্যাতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান ‘ক্যাট শো’। এতে অংশ নিয়েছিল দেশি—বিদেশিসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৩০টি বিড়াল। এছাড়া কম খরচে বিড়ালের ভ্যাকসিন দেওয়ার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে ফেইসবুক গ্রুপ ‘ক্যাট সোসাইটি বাংলাদেশ’। প্রিয় বিড়ালের অসুস্থতা কিংবা যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য এখন সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেইসবুকেই পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় সাহায্য ও তথ্য। ‘ক্যাট সোসাইটি বাংলাদেশ’ ছাড়াও রয়েছে ‘অ্যানিম্যাল লাভারস অফ বাংলাদেশ’য়ের মতো বেশ কয়েকটি গ্রুপ, যেখানে পাওয়া যাবে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পশু চিকিৎসকদের ফোন নম্বর এবং ঠিকানা। অনলাইন শপিং এখন বহুল জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। ঘরে বসে অর্ডার দেওয়া যাবে বিড়ালের জন্য খেলনা, খাবার কিংবা পোশাক।

তথ্যসূত্র: সাইনিউজ ও বিগথিংককম, ডয়েচে ভেলে, সাইকোলোজি টুডে

জীবনযাপন থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

S M Mukul
এস এম মুকুল
লেখক-কলামিস্ট, হাওর ও কৃষি অর্থনীতি বিশ্লেষক

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *