তখন আমরা আয়োজন করে দেশভ্রমণে যেতাম। এই ধরেন, ১৫০০ টাকা পকেটে নিয়া সমুদ্রবিলাস টাইপ ভ্রমণ। কেউ তো চাকরি করি না। তো ডালভাতে আমাদের আনন্দভ্রমণ হতো বেশ। আমরা ভ্রমণ করা শুরু করলাম : মানিকগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার করতে করতে কথিত পুণ্যভূমি সিলেট! জাফলং ভ্রমণ। স্লোগান ঠিক হলো। ট্রেনে কার্ড খেলতে খেলতে চুরি করে রঙের গোলাম ট্রাম হওয়ার হওয়ার কারণে হালকা মারামারির মধ্যে খেলা শেষ। আমরা জাফলং-এ পৌঁছলাম। ঘোরাঘুরি, গোসল, পাথরপ্রেম নানা আয়োজনের পর আমরা কতিপয় চরম ক্ষুধার্ত প্রাণি একটি হোটেলে গেলাম।
৮০ টাকা করে খাবার ঠিক করা হলো। খাবার যেমনই হোক খেয়ে বিল দিতে গিয়ে মারামারি অবস্থা। খাবার নাকি দেড়শ টাকা করে! আমি বললাম, ভাই, এটা হযরত শাহ জালালের দেশ! আপনারা এভাবে মিথ্যা বলে গায়ের জোরে এসব করেন? উত্তরে তারা বলল : ধূর মিয়া! বাদ দেও! তোমরা কি আর আইবানি? বেশি মাতিও না! মাইর খায়া দিশা খুঁজি পাইতা না! টেকা দিয়া জলদি ভাগো!
হ, তার একটা কথা খুব ভালো লেগেছে! আমি আর জীবনেও সিলেট যাব না, এই অনুমান করার কথাটা। কিন্তু বিধি বাম! আমাকে আরেকবার সিলেট যেতে হলো! জকিগঞ্জে। সিলেট শহর থেকে ভোরে জকিগঞ্জের গাড়িতে বসেছি। একজন অপরিচিত আমার পাশে বসল। জিজ্ঞেস করল আমি কোথায় যাব। জবাবে সে জানাল: সাক্ষাৎ শয়তান দেখতে চাইলে জকিগজ্ঞত পাইবা! আমি শুনে হাসি, আঁখিজলে ভাসি! এই ছিল মোর ঘটে! যা হোক, পরে অবশ্য সেখানে থাকা লাগে নি।
বন্যায় সিলেট অচল! অথচ ব্যবসায় কিন্তু থেমে নেই। মরমি সাধক হাছনরাজার দেশে, অলি-আল্লাহর দেশে আজ মানবতার হদিশ নেই। বিশ টাকার মোম একশ, পাঁচ হাজারের নৌকা ভাড়া পঞ্চাশ হাজার, ডালভাত তিনশ এমন আরো ভয়াবহ বাণিজ্য শুরু করেছে ‘পুণ্যভূমি’র মানুষেরা!
আল্লাহ তাদের হেদায়েত করুন। আমিন