আমাকে বেশ কয়েকজন জিজ্ঞেস করেছেন যে আমি প্রায়ই ধর্মান্ধ শব্দটা লিখি, তো ধর্মান্ধটা আসলে কী? যারা জিজ্ঞেস করেছেন তারা সকলেই উচ্চশিক্ষিত। সুতরাং শব্দটা সম্পর্কে তারা জানেন বলেই মনে করি। তবু তারা আমার কাছে জানতে চেয়েছেন সম্ভবত এজন্য যে আমাকে তারা বিশ্বাস করেন না। মনে মনে অনেকে গালিও দেন। কেউ বলেন আমি নামধারী মুসলমান, কেউ বলে নাস্তিক আবার কেউ বলেন…! থাক, ওদিকে আর না যাই। যে যাই বলুক ভাই, আমার তাতে কিছু এসে যায় না। সক্রেটিসকে যখন নাস্তিকতার দায়ে দণ্ডিত করা হলো তখন তিনি বলেছিলেন : I to die, you to live, only God knows what is right or wrong!
ধর্মান্ধের সংজ্ঞার্থ বোঝার জন্য বাংলাদেশে সক্রেটিস বা এরিস্টটল হতে হয় না। হাতের কাছেই এই জিনিস সহজলভ্য। ধর্মান্ধ শব্দটাকে সমাসসিদ্ধ মনে করা যায় : ধর্মে অন্ধ- সপ্তমী তৎপুরুষ! আবার ‘ধর্মে অন্ধ যে’- বললে কর্মধারয় সমাস বলা যায়। তবে আমি মনে করি শব্দটি বহুব্রীহি। ধর্মান্ধ কেবল শাব্দিক অর্থে প্রযোজ্য নয়। এর বহুবিধ অর্থ করলেও বিষয়টি সংক্ষিপ্ত ও সহজ নয়। ধর্মান্ধ মানে গোড়ামি। যার কাছে কোনো লজিক নেই সে-ই ধর্মান্ধকে লালন করে। এদের আর যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি নেই তা হলো মানবিকতা। এদেশে যারা ‘লালসালু’, ‘হুজুরকেবলা’ পড়েছেন তাদের ধর্মান্ধতার জ্ঞান দেওয়া অর্থহীন। তবে ‘লালসালু’ উপন্যাস বাজেয়াপ্ত হলে এদেশে কয়েক কোটি তালি বাজবে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বাঙালির পালস বুঝতে পারেন নি। তাই এদেশে তিনি জনপ্রিয় হতে পারেন নি। অবশ্য জনপ্রিয় লেখকরাও কালভেদে আপেক্ষিক হয়ে পড়েন। নব্বই দশকের জনপ্রিয়তা আর আজকের জনপ্রিয়তায় আকাশ পাতাল তফাৎ। এখন মাঠে ময়দানে জনপ্রিয় হওয়া সহজ, যৌনপ্রিয় হলেও সমর্থন কমে না।
এদেশে প্রচুর ইসলামপ্রিয়, কোরানপ্রিয় সুন্নি মুসলমান আছেন। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে ৯৯ ভাগ মামলা ফৌজদারি! আদালত চত্ত্বরে গেলে বুঝা যায়। এর কারণ কী? লোভ, ক্ষমতা, আমিত্ব, অংশীদারিত্ব ইত্যাদি। কিন্ত এসব থেকে ইসলাম তো বিরত থাকতে বলেছে। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে কত ভাগ মুসলমান সচেতন? ইদের নামাজ পড়তে গিয়ে কতজন জানাজার নামাজ আবার জানাজার নামাজে কতজন যে ইদের নামাজ পড়ে তাকালেই দেখবেন।
নারীরা ফুটবলে জিতেছে। বাংলাদেশের পতাকাকে তারা সমুন্নত করেছে। তাদের একটা অংশ যখন ময়মনসিংহে ফিরছিল লোকজন তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। এদেশে একদল মানুষ আছে যাদের প্রতিনিয়ত অজু নষ্ট হয়। কারণে অকারণেই হয়। একজন প্রকৃত মুসলমান কি নারীকে গালি দিতে পারে? হযরত মুহম্মদ স. যখন নারীদের উচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন সেখানে একজন বেশ্যা হলেই তাকে আপনি গালি দিতে পারবেন? ইসলাম কী বলে?
ফুটবল খেলোয়ার আঁখির পাঁচ শতাংশ জায়গা জবরদখল করে রেখেছে কে? সে কি ইন্দোনেশিয়া, উগান্ডা বা নাইজেরিয়ার মুসলমান? এরা ইসলামকে কতটুকু লালন করে? সুদ-ঘুষ তো আমাদের কাছে খুবই সহজ সরল একটি বিষয়! অথচ কোরান কী বলে? নবি স. কী বলেছেন? মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি নিয়ে লক্ষ লক্ষ মুসলমান মিথ্যা বলে, ওজনে কম দেয়, গীবত করে, অন্যের হক নষ্ট করে। এদের জন্য আল্লাহ কোন জান্নাত রেখেছেন?
অথচ নারীর পর্দা নিয়ে সবাই সোচ্চার। সুদ, ধর্ষণ, ঘুষ, দুর্নীতি নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। নিজেদের শুদ্ধতাকে নিয়ে কেউ ভাবে না। অন্যের জাহান্নামের চিন্তায় অনেকের ঘুম হারাম।
বাংলার মুসলমান পরচর্চায় যতটা নিবেদিত ততটা গবেষণায় যায় না। ইনোভেশনে যায় না। সভ্যতার অগ্রগতিতে অবদান রাখতে চায় না। সভ্যতার সমস্ত সুবিধা ভোগ করে আর বেদাত, হারাম বলে বলে জিকির তোলে। এরা শুধু চোখে দেখে কাফের, মুরতাদ, ইবলিশ! অথচ নিজেরা ইসলাম থেকে কবেই হয়েছে এবোলিশ!!!