প্রথম পাতা » মতামত » তারুণ্যের উন্মাদনা ভালো, অতিরিক্ত উন্মাদনা খারাপ

তারুণ্যের উন্মাদনা ভালো, অতিরিক্ত উন্মাদনা খারাপ

Youth's madness

ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে যা ঘটছে, তা দিনকে দিন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে৷ নির্দিষ্ট কয়েকটা দেশ ও খেলোয়াড়ের সমর্থকেদের কারণে গোটা বিষয়টা একধরনের ফুটবলতিক্ততা জন্ম দিচ্ছে। 

বিশেষ করে খেলার মৌসুম ও ফুটবল বিশ্বকাপ সামনে এলেই চিহ্নিত দলগুলোর সিংহভাগ সমর্থকদের কাদা ছোড়াছুড়ি, পরস্পর-পরস্পরের প্রতি বিরুদ্ধাচারণ, অশালীন মন্তব্য প্রকাশ ইত্যাদি এগুলো অসহ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করছে। 

অসংখ্য ফুটবল দলের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার উর্ধ্বে যে দুটো দল ইতোমধ্যে অবস্থান করছে, তা হলো আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। 

ইংরেজি নয় বর্ণের আর্জেন্টিনা আর ছয় বর্ণের ব্রাজিল সমর্থকদের অবস্থাটাও এখন নয়-ছয় পর্যায়ে। এই দুটো দলের বাংলাদেশি সমর্থকদের বিশাল একটা অংশ রীতিমতো একে-অপরকে খোঁচাখুঁচি, পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্কের বাটখারায় একে-অপরের পাল্লা ভারি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের বাকযুদ্ধ অনলাইনে রূপ নিয়েছে কিবোর্ড যুদ্ধে। তারা অনেকেই মনে করেন, একদিন এই কিবোর্ড যুদ্ধের মধ্য দিয়েই তাদের প্রিয় দলকে বিশ্বকাপ পাইয়ে দেবে।

আবার অনেক যায়গায় কিবোর্ড যুদ্ধ পরিণত হয়েছে সম্মুখযুদ্ধে। সংঘর্ষের রাজধানী খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে শুরু করে দেশের প্রায় প্রত্যেকটা যায়গায় ফুটবল উন্মাদনা রূপ নিয়েছে সহিংসতায়। বছর কয়েক আগে খুলনাতেও এক দম্পতিকে মারাত্মকভাবে কুপিয়েছিল তাদের বিপক্ষ সমর্থকেরা।  পছন্দের-অপছন্দের দল খেলায় জিতলে কিংবা হারলেই আপনি ফেইসবুকে পক্ষে-বিপক্ষে খোঁচাখুঁচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।  অথচ ভাবছেন আপনাকে দিয়ে এমন উগ্রতা-সহিংসতা আশা করা যাবেনা! দুদিন পর আপনিও যে অন্যের ঘাড়ে কোপ দিয়ে বসবেন না- তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই!

আপনাদের এই সবকিছুই প্রমাণ করে, আমাদের খেলাধুলা ও বিনোদনের জগতটা এখনো বিকশিত হয়নি। সহনশীলতা তো দূরের কথা, আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানেই পৌঁছাতে পারিনি! আপনার সমর্থনের উন্মাদনা যখন অন্যের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, তখন বুঝে নিবেন আপনি সমর্থক নয়- সহিংসতার পর্যায়ে আছেন। 

ধরুন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মেসির ভক্ত। এখন আমাকে মেসি ভক্ত হওয়ার জন্য নেইমারের বিরুদ্ধাচারণ করতে হবে- এমনটা কিন্তু নয়! অথবা ধরুন আমি দলের দিক থেকে ব্রাজিলের সমর্থক। ব্রাজিল সমর্থক হয়েছি বলে আর্জেন্টিনার বিজয়ে আমাকে কটুক্তি করতে হবে- এমনটাও তো না! একজন খেলোয়াড় যখন ভালো খেলে, একটা দল যখন ভালো কিছু উপহার দেয়- অবশ্যই তারা প্রশংসার দাবিদার। গুণ ও গুণীর কদর তো করতেই হবে। এই যে পছন্দের ভিন্নতা, সমর্থনের ভিন্নতা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ এগুলো থাকবে। আপনি না চাইলেও থাকবে। এটা যদি আপনি মেনে নিতে না পারেন, নিজের উপরে প্রয়োগ করতে না পারেন তাহলে বিশ্বাস করুন, ফুটবলের প্রেমে পড়ার, ফুটবল খেলা দেখবার-বুঝবার মতো পরিপক্বতা ও মানসিকতা আপনার কোনোটাই তৈরি হয়নি। চালানো না শিখেই সড়কে গাড়ি নিয়ে ওঠা যেমনটা ভয়ংকর, ঠিক তেমন ফুটবলের সৌন্দর্যের জন্যও আপনি ক্ষতিকর।

ফুটবল কেন্দ্রিক উন্মাদনা এভাবেই যদি চলতে থাকে, তাহলে তা আমাদের জাতীয়তাবাদ ও ভ্রাতৃত্ববোধের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। অজ্ঞতাবশত সমর্থকগুলো নিজেদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করছে, পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করছে। এটা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলকর কিছু নয়। 

প্রয়াত নেতা মইন উদ্দীন খান বাদল একবার বলেছিলেন, “তারুণ্যের উন্মাদনা ভালো, তবে অতিরিক্ত উন্মাদনা খারাপ।”

লেখক : শিক্ষার্থী

মতামত থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *