সদ্যভূমিষ্ঠ শিশু, মা-বাবার কোল আলোকিত করে আসে একটি পরিবারে। অনেক রঙিন স্বপ্ন রচিত হয় শিশুটিকে ঘিরে,বাবা- মা স্বপ্ন দেখে শিশুটির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎের। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে শিশুটি।
কিন্তু যখন সামাজিক কিছু ব্যাধি বাধা হয়ে দাড়ায় শিশুটির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের, যখন রাষ্ট্র দিতে পারে না শিশুটির ভবিষ্যত নিরাপত্তা তখন বিষয়টি রূপ নেয় উদ্বেগে। তেমনই একটি সামাজিক ব্যধির নাম ধর্ষণ,যা বর্তমানে সমাজের নিত্যদিনের চিত্র হয়ে দাড়িয়েছে।প্রতিদিনের সংবাদপত্র খুললেই চোখে পড়ে ধর্ষণের মত অপকর্মের সব চিত্র,রেহায় পাচ্ছে না ১ বৎসেরে শিশু থেকে ষাঠোর্ধ বৃদ্ধা পর্যন্ত।শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না,ধর্ষণের পর নির্মম হত্যকান্ডের শিকার হচ্ছে ধর্ষিতরা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়,শুধুমাত্র ২০১৯ সালের প্রথম ৬ মাসেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩১ জন নারী ও শিশু,গত বছরের পরিসংখ্যান আরও ভয়াবহ।ধর্ষণের পর নির্মম হত্যাকান্ডের শিকারও হয়েছেন অনেক নারী ও শিশু। ধর্ষণের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ব্যক্তি মানসিকতা পারিবারিক,সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়,বিচারহীনতা ও বিচারের দীর্ঘসূত্রিতাকে দায়ী করছেন বিষেষজ্ঞরা।ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে,এখন অপেক্ষা শুধু সময়ের।তাছাড়াও নারী ও শিশু ধর্ষণ প্রতিরোধে রয়েছে কঠোর আইন,
নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)এর ৯(১)ধারায় বলা হয়েছে,যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে তবে সে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হবে।৯(২)ধারায় বলা হয়েছে ,ধর্ষণ বা পরবর্তী অন্যবিদ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটলে ধর্ষকের মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হবে,সাথে সর্বনিন্ম এক লাখ টাকা জরিমানা,তাছাড়াও ৯(৩)ধারায় বলা আছে যদি একাদিক ব্যক্তি নারী ও শিশুকে ধর্ষণ করে এবং উক্ত ধর্ষণের ফলে কোন নারী বা শিশু মারা যায় তবে প্রত্যেকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা মৃত্যুদন্ড এবং কমপক্ষে এক লাখ টাকা জরিমানা হবে।এই আইন গুলোর যথাযত প্রয়োগ হলেই কেবল এর প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভবপর হবে।
তাছাড়া এই অপসংস্কৃতির কষাঘাত থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হলে অভিবাবক,শিক্ষক ও সমাজের বিবেকবান ব্যক্তিদের সোচ্চার হতে হবে।এক্ষেত্রে পারিবারিক মূল্যবোধ অনস্বীকার্য কেননা নারীর প্রতি সম্মানের শিক্ষটা পরিবার থেকে শিশু শিখে নেয়।শিক্ষক ,যুবক,ও বিবেকবানদের ধর্ষণ রোধে বিভিন্ন সভা,সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে,ব্যক্তি মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রতকরণ,এবং সঠিক ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিতকরণই পারে ধর্ষণমুক্ত সুন্দর সমাজ গড়তে,উপহার দিতে পারে শিশুর সুন্দর ভবিষ্যত।
মো: ইমরান. আইন বিভাগ. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যলয়,ঢাকা