প্রথম পাতা » মতামত » এই বাংলা ভাষার জন্য কি যুদ্ধ হয়েছিল?

এই বাংলা ভাষার জন্য কি যুদ্ধ হয়েছিল?

21 February

গভর্ণমেন্ট কর্তৃক নতুন সিলেবাস অনুসারে সমগ্র বঙ্গদেশের মক্তব সমুহে অবশ্য পাঠ্যরূপে অনুমোদিত। কলিকাতা গেজেট-১১.১১.২৬।
প্রকৃতি পাঠ দ্বিতীয় ভাগ জোরারগঞ্জ হাইস্কুলের ভূতপূর্ব এসিস্ট্যান্ট মাষ্টার, জী, এম, ফররোখ আহমদ বি, এ, প্রণীত তৃতীয় সংস্করণ ১৯২৮ মূল্য ছয় আনা মাত্র।

উপরিউক্ত কথাগুলো ১১.১১.২৬ কলিকাতা গেজেট অনুযায়ী বাংলা ভাষায় রচিত বইয়ের প্রচ্ছদে লেখা আছে যার তৃতীয় সংস্করণ হয় ১৯২৮ সালে এবং বইটি প্রকৃতি পাঠ দ্বিতীয় ভাগ নামে সমধিক পরিচিত।

১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের প্লাকার্ডে লেখা থাকত “মোদের গর্ব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা।”

বাংলা আমার ঝিনুক বুকে মুক্ত মানিক হিরে।
তাইতো আমি স্বপ্ন আঁকি এই ভাষাকে ঘিরে।।

“বাংলাকে কেন্দ্রের অন্যতম এবং পূর্ববঙ্গের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব” এটি ভাষা আন্দোলনের সমসাময়িক একটি পত্রিকার শিরোনাম। এই শিরোনামের অধীনে যে খবর লেখা আছে তাহলো- “ঢাকা ৮ই এপিলঃ- অদ্য ( ৮ই এপিল, ১৯৪৮) পূর্ববঙ্গ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী খাওয়াজা নাজিমুদ্দিন কর্তৃক উত্থাপিত নিম্নোক্ত প্রস্তাবটি গৃহিত হইয়াছেঃ “এই পরিষদের অভিমত এইযে, পূর্ববঙ্গ প্রদেশে ইংরাজীর পরিবর্তে বাংলা ভাষা সরকারী ভাষা হইবে এবং বাস্তব অসুবিধা সমুহ দূরীভূত হওয়ার পর মুহুর্তেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকরী করা হইবে। পূর্ববঙ্গের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহে যতদূর সম্ভব বাংলা ভাষা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাগুরু ছাত্রদের মাতৃভাষাই শিক্ষার বাহন হইবে।”
অন্য আরেকটি পত্রিকার তৎকালীন শিরোনাম-“বাংলা ভাষা আন্দোলন দমনে যশোহরে পুলিশের অত্যাচার-বালক-বৃদ্ধ নিব্বিশিষে নিগৃহীত।”

1952 News
১৯৫২ সালে পত্রিকার শিরোনাম

৪ঠা ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সালে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা যেটির প্রতিষ্ঠতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান (ভাসানী) শিরোনাম করেছে- নাজিমুদ্দিনের বিশ্বাসভঙ্গে বিক্ষোভের বিসুবিয়স পূর্ববঙ্গ-রক্তের স্বাক্ষরে জঙ্গী জনতার শপথ-রেইসম্যান রোয়েদাদ নয়-প্রাদেশিক আর্থিক সংস্থার গোটা কতৃর্ত্ব চাই।” জঙ্গী শব্দটি তৎকালীন সময়ে ইতিবাচকভাবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমান এটি নেতিবাচক শব্দে পরিণত হয়েছে। “অবসানের বাইবেল দিয়া পাকিস্তানকে বিদ্রুপ করা চলিবেনা” ইত্যাদি।

21 February

এদিকে একই পত্রিকার ১০ই ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সালে শিরোনাম হয়-“সংগঠন শক্তি ও সফলতা ৪ঠা ফেব্রুয়ারীর ডাক-রাজধানীর রাজপথে সমগ্র প্রদেশের বজ্রকঠোর শপথ ঘোষিত-মজলুমের ইনকেলাবী আওয়াজ ও আন্দোলনই জালেমের প্রলয় বিষাণ”। “২১ ফেব্রুয়ারী প্রদেশের সব্বর্ত্র সাধারণ ধম্মর্ঘট”।

21 February

দেখলাম আমরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সমসাময়িক ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সালের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার শিরোনাম বা খবরের ভাষা কেমন ছিল বিভিন্ন পেপার কাটিং পর্যবেক্ষণ করে যেটি গুগল থেকে সংগৃহিত। ভাষা আন্দোলনের প্রায় তিন দশক পূর্বে এতদঞ্চলে সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য ১১.১১.২৬ কলিকাতা গেজেট অনুযায়ী প্রকাশিত এবং ১৯২৮ সালের সংস্করণকৃত প্রকৃতি পাঠ দ্বিতীয় ভাগ বইয়ের ভাষা কেমন ছিল।

21 February

এখন একটু দেখতে চাই ভাষা আন্দোলনের প্রায় তিন দশক পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন পত্রিকাগুলোর শিরোনাম বা খবরের ভাষা কেমন ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সমসাময়িক সময়ে এদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম হয় সেই খবর কিভাবে পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং তার ভাষা কেমন ছিল সেটি লক্ষণীয়-“জাহাঙ্গীরনগর মোছলেম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভোদন” এই শিরোনামের অধীনে যে খবর প্রকাশিত হয় তার ভাষা কেমন ছিল দেখি-(ষ্টাফ রিপোর্টার) প্রাদেশিক গভর্ণর ভাইস এডমিরাল এস, এম আহসান গতকাল মঙ্গলবার সাভারে জাহাঙ্গীরনগর মোছলেম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভোদনী অনুষ্ঠানে বলেন যে, শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রেই নহে, বিশ্ববিদ্যালয় মূলত আদর্শ মূল্যবোধের লালন ক্ষেত্র হিসেবেই সংরক্ষিত রাখা উচিৎ।

স্বাধীন্তা যুদ্ধকালীন আরো কিছু পত্রিকার শিরোনাম বা তৎকালীন শ্লোগান হলো- এবারের সংগ্রাম স্বাধীন্তার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম মূলত এই শ্লোগানেই উজ্জীবিত হয়ে আজ বাংলাদেশ নামক পৃথক ভূখন্ড পৃথিবীর মানচিত্রে শোভা পাচ্ছে। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা শিরোনাম করেছিল “পশ্চিম পাকিস্তান আক্রান্ত”, “পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হইয়া গিয়াছে” এবং ১৯৭১ সালের দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকাটি তার ৮ই এপ্রিলের পত্রিকায় শিরোনাম করেছিল “পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারত হস্তক্ষেপ করছে”। অন্যদিকে সাপ্তাহিক রণাঙ্গণ তার সমসাময়িক একটি সংখ্যায় শিরোনাম করেছিল “ডিসেম্বরে বাংলা মুক্ত”।

এখানে প্রকাশিত পত্রিকা বা পুস্তক থেকে কোট করছি এই কারণে যে কোন দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি, ভাষা, জাতীয় চেতনা ইত্যাদি ঐদেশের সমসাময়িক কালের পত্রিকা, সাহিত্য বা প্রকাশিত পুস্তকে ফুটে উঠে। উদ্বৃতিগুলো দ্বারা কোন নির্দেশনা গুলো বুঝাচ্ছে সেটি আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। সময়সুযোগ পেলে সেটি কোন এক আলোচনায় তুলে ধরা যেতে পারে। বরং আজকের আলোচনার বিষয় হলো ১৯৫২ সালে আমাদের পূর্বসূরীরা কোন বাংলা ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন এবং আমরা তাদের উত্তরসূরীরা কোন বাংলা ভাষা ব্যবহার করছি আজ ২০২৪ সালে?

এখানে ১৯২৬ সালে প্রকাশিত অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর পূর্বে প্রকাশিত পুস্তকের উদ্বৃতি তুলে ধরা হয়েছে এবং তার প্রায় তিন দশক পর ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সালের পত্রিকায় প্রকাশিত উদ্বৃতি তারও প্রায় তিন দশক পর পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের উদ্বৃতি তুলে ধরা হয়েছে যেটি এই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ের কথা। প্রত্যেকটি সময়ের ভাষায় আমরা ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখতে পেয়েছি। এমনকি প্রাথমিক দিকের উদ্বৃতির মধ্যে ব্যবহৃত কয়েকটি শব্দের অর্থ আমি নিজেও বুঝতে পারিনি। আমরা দেখছি যে ভাষাকে বলা হয় স্রোতিস্বীনি নদীর মত প্রবাহমান সেটি কেউ কোনদিন কোন সামরিক শক্তি দিয়ে রদ করতে পারেনা এবং ভবিষ্যতে কেউ পারবেও না বোধ করি।

পৃথিবীতে প্রায় ২০০টি স্বাধীন রাষ্ট্র রয়েছে এবং পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র অনেক রাষ্ট্রের সাথে অনেকবার রাজনৈতিক স্বাধীনতা বা পৃথক হওয়ার জন্য আগেও যুদ্ধ করেছে বর্তমানেও বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে বিভিন্ন রাষ্ট্রের যুদ্ধ চলমান। কিন্তু ভাষার জন্য কোন জাতি বা রাষ্ট্রকে আন্দোলন করতে হয়েছে এমনটি শোনা যায় না শুধুমাত্র বাঙ্গালী জাতিকেই দেখা গেছে যেটির প্রতিপক্ষ হতে দেখা গেছে পাকিস্তান সরকারকে।

প্রাসঙ্গিক একটি কথা এখানে বলতে হচ্ছে সেটি হলো আফঘানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলনে আমার অংশগ্রহন করার সুযোগ হয়েছিল বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসাবে ২০১৭ সালে যেটির আয়োজনে ছিল আফঘানিস্তান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ। এই আয়োজনে ভারতের পক্ষ থেকে যিনি প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি হলেন অভিষেক ঠাকুর।

অভিষেক ঠাকুরের সাওয়ালের মাধ্যমেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পাকিস্তান থেকে পৃথকীকরণ বা দ্বন্দ্বের সূচনা নিয়ে আমাদের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় কথোপকথন হয়েছিল তার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো-তার এক সাওয়ালের জবাবে আমি বলেছিলাম ভাষার পার্থক্য এবং পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ভিন্ন ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ১৯৫২ সালে বাঙ্গালী জাতি এক আন্দোলন করে যেটির নাম ভাষা আন্দোলন।

এখান থেকেই দ্বন্দ্বের সূচনা এবং পরবর্তীতে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বিভিন্ন যুলুম, বঞ্চনা ইত্যাদির কারণে ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তান যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথক হয়ে যায়। প্রতি উত্তরে তিনি বলেছিলে ভাষার জন্য পৃথিবীর আর কোন জাতি বা দেশকে যুদ্ধ করতে হয়নি। ভাষার জন্য যুদ্ধ হলে শুধু ভারতবর্ষে যে কতশত যুদ্ধ হতো আর ভারতবর্ষকে কতশত পৃথক পৃথক রাষ্ট্রে পরিণত হতে হতো তার কোন ইয়ত্তা নেই কারণ শুধু ভারতবর্ষেই রয়েছে কয়েকশত ভাষা। আর ভাষা কি কখনো চাপিয়ে দেওয়া যায় এটিতো স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া? আমার কাছে আর তেমন কোন জবাব ছিলনা।

ভাষার জন্য পৃথিবীর কোন জাতিকে যুদ্ধ করতে হয়নি আর প্রতিহত করতেও হয়নি কোন জাতিকে শুধুমাত্র বাঙ্গালী জাতি এবং তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান ছাড়া।

আমরা জানি ল্যাটিন, ফ্রেন্স, স্প্যানিশ বা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা ইংরেজি অক্ষর দিয়ে লেখা হয় যেমন ঊর্ধ ভাষায়ও ৭টি ঊর্ধ ব্যতিত আরবির ২৯টি অক্ষর ব্যবহৃত হয়। তেমন ভাবে সামাজিক যোগাযোগ বা যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে বর্তমান বাংলা ভাষাও ইংরেজি অক্ষর দিয়ে লেখা একটি বহুল প্রচলিত বিষয় শুধু আনুষ্ঠানিকতার বাকি। এটি ফেসবুক, ওয়াটস্যাপ, লিঙ্কডইন, ইমেইল বা টুইটারে বেশি দেখা যায়। কারখানার শ্রমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদেরও এ ধরনের ভাষার ব্যবহার করতে দেখা যায়। আর আমাদের দেশের এফএম রেডিও গুলো ভিবিন্ন ভাষার মিশ্রনে কোন বাংলা ভাষা ব্যবহার করে তা আমি ঠাহর করতে পারিনি আজ অব্ধি।

আমাদের পূর্বসূরীরা ১৯৫২ সালে যে ভাষার জন্য আন্দোলন করেছিলেন আজ ২০২৪ সালে সেই ভাষা কোথায়? আমাদের পূর্বসূরীরা যে ভাষার জন্য জীবন দিলেন আজ সেই ভাষা বিকৃত হয়ে গেছে তাহলে আমরা তাদের যোগ্য উত্তরসূরী হিসাবে ভাষার বিকৃত হওয়াকে কি প্রতিহত করব? করলে কিভাবে কার সাথে যুদ্ধ করব বা কার বিরদ্ধে আন্দোলন করব কে বা কারা হবে আমাদের প্রতিপক্ষ? এগুলো আমাদের সামনে বড় সাওয়াল এই সাওয়ালের জবাব যদি না পাওয়া যায় তাহলে কি আমাদের পূর্বসূরীদের প্রতিপক্ষ এবং পূর্বসূরীদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল? তাহলে সেইদিন পশ্চিম পাকিস্তানিরা ক্ষমতায় থেকেও কি আমাদের পূর্বসূরীদের প্রতিপক্ষ হয়ে সবচেয়ে বেশি নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছিলেন?

ভারতবর্ষে অসংখ্য ভাষা সেখানে এক অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা বুঝতে পারেনা এমনকি বাংলাদেশের সিলেটের, নোয়াখালীর, চট্টগ্রামের ভাষা অন্য অঞ্চলের মানুষের বুঝা কষ্টসাধ্য এমন অবস্থা বিশ্বব্যাপী বিরাজমান তাহলে সেখানে তো আন্দোলন হয়না এবং কেউ প্রতিপক্ষের ভূমিকায়ও অবতীর্ন হয়না। আজ সাওয়াল হয়ে আমাদের সামনে দাড়িয়েছে ১৯৫২ সালে কি উভয়পক্ষের ভুল বুঝাবুঝির ফলে আমাদের সূর্য সন্তানদের জীবন দিতে হয়েছিল এবং ক্ষমতায় থেকেও তখনকার পাকিস্তানী সরকার সবচেয়ে বড় নির্বুুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছিল?

মুহাম্মদ আল্-হেলাল
এমফিল গবেষক (এবিডি)
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
+৮৮০ ১৯১১ ৯৮১১৪৪
alhelaljudu@gmail.com

মতামত থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

মুহাম্মদ আল্-হেলাল
মুহাম্মদ আল্-হেলাল
এমফিল গবেষক (এবিডি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *