সামাজিক নিরাপত্তাবলয় বলতে সমাজের দূস্থ, গরীব, অসহায় মানুষদের সামাজিকভাবে পূর্ণবাসনের জন্য গৃহিত ব্যবস্থাপনা সমুহকে বুঝায়।
বাংলাদেশ সরকার সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের আওতায় বেশ কিছু কর্মসূচি চালু করছে সেগুলোর নাম শুনলে সহজেই অনুমেয় যে সেগুলো কার জন্য প্রযোজ্য।
একবার হঠাৎ করে মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা আসছে বীরমুক্তিযোদ্ধা অমুক মারা গেছেন ইন্না লিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহী রজীঊন। এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারা চিনতে পারলেননা উক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। বেশ পরে খোঁজ করে এলাকাবাসী জানতে পারলেন যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি অন্য নামে পরিচিত এলাকায়। ইতোমধ্যে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আইনশৃঙখলা বাহিনী নিয়ে এসে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্নও করেছেন।
দেশে বয়স্ক ভাতা নামে আরেকটি ভাতা চালু আছে যেটি ৬২(মহিলা)/৬৫(পুরুষ) বছর বয়ষের ঊর্ধ্ব লোকেরা পেয়ে থাকেন। একজন বয়স্ক মহিলা যার নামে ভাতা চালু আছে অন্যান্য লোকেরা এই ভাতা পাইলেও তিনি পাননা পরপর তিন বার কিন্তু তার নাম ঠিকানা সবই ঠিক আছে। এই ভাতা টা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আসে পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল নাম ঐ মহিলার থাকলেও মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব নম্বর টা অন্য লোকের যিনি রীতিমত ভাতা ভোগ করছেন যদিও বয়ষ্কভাতা পাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত নয় বয়সে বেশ তরুন লোকটি।
যাইহোক ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলো এবং লোকটি সমুদয় টাকা উক্ত মহিলাকে ফেরত দিয়ে তার কৃত অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানা যায়। কিছু দিন পর মহিলাটি মারা গেলেন।
০৬ মে ২০২৩ দৈনিক যুগান্তরে এক খবর প্রকাশিত হয় ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব জহর লাল দাস উক্ত ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের চরকালাচাঁদ গ্রামের বাসিন্দা আমির হোসেনের স্ত্রী জীবিত রওশন আরা বেগম কে মিথ্যা মৃত ঘোষণা করে তার বয়স্ক ভাতা বন্ধ করতঃ অন্য একজনের জন্য বয়স্ক ভাতার আবেদন করেন। হঠাৎ করেই বয়স্ক ভাতা বন্ধ হওয়ায় রওশন আরা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন তিনি ২০২২ সালের ০২ মার্চ বার্ধক্যজনিত কারনে ৭৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। যেটি ইউনিয়ন পরিষদের ২০২২ সালের মৃত নিবন্ধনকরণ রেজিস্ট্রারের ২৮ নং ক্রমিকে নিবন্ধন করা হয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মাছুদ জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ সচিব কর্তৃক একটি মৃত সনদ দেওয়ায় ভাতাটি বন্ধ হয়েছে।
২০ শে মে ২০২৩ তারিখের দৈনিক মানবজমিনের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ময়মনসিংহের নান্দাইলে মোছা. নুরুন্নাহার আক্তার ও মোছা. রাশিদা বেগম নামে দুই ভাতাভোগী নারীর দুই বছরের ভাতার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে রিনা পণ্ডিত দেবনাথ নামে এক আওয়ামী লীগের নেত্রীর বিরুদ্ধে। ওই নারী নেত্রী বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ চণ্ডীপাশা ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক। জানা গেছে, চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের খামারগাঁও গ্রামের বিধবা নারী মোছা. নুরুন্নাহার আক্তারের ভোটার আইডি দিয়ে ২০২১ সালে বিধবা ভাতার কার্ড করেন নেত্রী। এতে নেত্রী তার ব্যবহৃত নম্বর দেন। ফলে দুই বছর ধরে নেত্রীর মোবাইলেই টাকা যাচ্ছে।
অপর দিকে বয়স্ক নারী মোছা. রাশিদা বেগমের আইডি দিয়ে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে ঐ নেত্রী দুই বছর ধরে নিজের ব্যবহৃত আরেকটি নম্বরে টাকা নিচ্ছে। বিধবা নারী মোছা. নুরুন্নাহার আক্তার বলেন, দুই বছর আগে রিনার কাছে বিধবা ভাতা কার্ডের জন্য কাগজ দিছিলাম। পরে আমার কাছে টাকা চাইছে কিন্তু দিতে পারিনি। নেত্রী জানাইলো কার্ড হয়নি। কার্ড হলে তো আমার মোবাইলে টাকা আসতো।
ইদানীং শুনছি আমার কার্ড আরও দুই বছর আগে হয়ছে টাকা যাচ্ছে নেত্রীর মোবাইলে। আমার ভাতার টাকা ফেরত চাইলেও তিনি দেন না। রাশিদা বেগমের পুত্র সুমন মিয়া জানান, আমার মায়ের বয়স্ক ভাতা কার্ডের জন্য তার (নেত্রী) কাছে গেছিলাম। পরে কাগজপত্র নিছে কিন্তু কার্ড আর করে দেয়নি। গত কয়েকদিন আগে সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মায়ের নামে ভাতার কার্ড হয়েছে।
নম্বর মিলিয়ে দেখি ঐ নেত্রীর নম্বর। দুই বছর ধরে আমার মায়ের ভাতার টাকা খাচ্ছে নারী নেত্রী। জানতে চাইলে চন্ডিপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী মহিলা লীগের সাধারন সম্পাদক রিনা পন্ডিত দেবনাথ বলেন, ভাই আমরা তো রাজনীতি করি, এক সাথেই তো থাকবো। একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে, এরা আমারই লোক। তবে কেন ওদের কার্ডে আপনার নাম্বার জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নাম্বার দিয়ে দিছি টাকাও ওরা নিচ্ছে। বিষয়টি আমি ম্যানেজ করে নিব।
নান্দাইল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ইনসান আলী মোবাইল ফোনে বলেন, এইভাবে ভাতাভোগীর টাকা কেহ নিতে পারে না। সরজমিনে পরিদর্শন করে এর সত্যতা পেয়েছি। আবেদনের পরিপেক্ষিতে ভাতাভোগীর নাম্বার পরিবর্তন করা হবে। আর অভিযোগ দিলে টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাধারণত বয়স যত বৃদ্ধি পায় এই বয়ষ্ক ভাতা পাওয়ার সম্ভাবনা তত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বিপরীত চিত্রও আছে বেশ কিছু লোক এই বয়ষ্ক ভাতা আজ থেকে ১০/১২ বছর পূর্বে ইউনিয়ন পরিষদ বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগ সাজসের মাধ্যমে ভোগ করতেন যদিও তারা এখনও উক্ত নির্দিষ্ট বয়সে পৌছাননি।
এক মহিলা প্রতিবন্ধি ভাতা পান কিন্তু তিনি প্রকৃতপক্ষে প্রতিবন্ধি নন। তিনি হাস্যোচ্ছলে মহিলাদের মাঝে গল্প করছিলেন অফিসার রা তাকে বলছেন টাকা তোলার সময় তিনি যেন মুখ বাঁকা করে প্রতিবন্ধি অভিনয় করেন। উক্ত মহিলা সম্প্রতি এককালীন পঞ্চাশ হাজার টাকাও সহযোগিতা হিসাবে পেয়েছেন। উল্লেখ্য এই সুবিধাভোগীর জেলা শহরে বাড়ি আছে দুটি ছেলে প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্যে এবং একটি ছেলে জেলা শহরেই ব্যবসা করেন সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগও ভালো।
প্রতিবন্ধি ভাতার তালিকাভুক্ত একজন জানালেন তার হাতের আঙ্গুলের মাথা একটু কাটা আছে তাই তিনি তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এগুলো প্রতিবন্ধি হিসাবে তালিকাভু্ক্ত হওয়ার জন্য যে শর্ত তার মধ্যে আছে কি না তা আমরা বাংলাদেশ প্রতিবন্ধি কল্যাণ আইন, ২০০১-এ কি বলা হয়েছে তা জানলে সহজে বুঝতে পারি।
এই আইনে বলা হয়েছে “প্রতিবন্ধি অর্থ এমন এক ব্যক্তি যিনি জন্মগতভাবে বা রোগাক্রান্ত হয়ে বা দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বা অপচিকিৎসায় বা অন্য কোন কারণে দৈহিকভাবে বিকলাঙ্গ বা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীনতার ফলে স্থায়ীভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতাহীন।”
সামাজিক বৈষম্য নিরসনের জন্য এসকল ভাতা ছাড়াও ন্যায্য মূল্যে বিভিন্ন পণ্যসহ কম মূল্যে চাল বিক্রয় করা হয়। কম মূল্যে চাল ক্রয় করার একটি কার্ডে দেখা যায় যে তথ্য এক ব্যক্তির এবং ছবি আরেক ব্যক্তির। এই চাল পাওয়ার জন্য এই দুই ব্যক্তির কোন ব্যক্তিই উপযুক্ত নয় কারণ রাষ্ট্রের অন্য কোন সুবিধাভোগী বা আর্থিকভাবে স্বচ্ছলদের জন্য এইধরনের সুবিধা নয়। কারন যে ব্যক্তির তথ্য দেওয়া সে ব্যক্তি সরকারি চাকরিজীবি কিন্তু পেশা হিসাবে সেখানে দেখানো হয়েছে কৃষি এবং যার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে তার প্রকৃতপক্ষে বাড়ি অন্য জেলায় এবং সে একজন প্রবাসী। দেখা যায় এধরনের লোকেরা এই সরকারি মোটা চাল নিজেরা না খেয়ে বিক্রয় করে দেন গরিবদের নিকট।
এগুলো হলো কয়েকটি উদাহরণ মাত্র তবে অনুসন্ধান করলে এরকম হাজার হাজার ঘটনা হয়তো বের হবে। এছাড়া গরিব কৃষকদের সার বীজ দেওয়ার বিভিন্ন কর্মসূচী রয়েছে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে হয়ত যারা প্রকৃতপক্ষে এই সুবিধা পাওয়ার উপযুক্ত কৃষক তারা পাচ্ছেননা এবং যারা পাচ্ছেন তাদের সরকারি অফিসের সাথে যোগাযোগ থাকে এবং তারা এই পণ্যগুলো বিনামূল্যে গ্রহন করে বিক্রয় করে দেন। এসবের পিছনে আছে বেশ মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্য এবং স্বজনপ্রীতি যা সঠিক তথ্যানুসন্ধানেই শুধুমাত্র বেরিয়ে আসতে পারে।
কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের এধরনের বিভিন্ন কর্মসূচি থাকা বাঞ্ছনীয় সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরনের জন্য।
সরকার যে লক্ষ্যে এধরনের কর্মসূচি গ্রহন করছেন দেখা যাচ্ছে সে লক্ষ্য ব্যহত হচ্ছে কারণ দেখা যায় যিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান তিনি বা তারই কোন আত্মীয়স্বজন বা দলীয় লোক প্রতিবন্ধি ভাতা, কৃষি উপকরণ বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গ্রহন করছেন।
উক্ত লোকগুলো স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান বা বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকতার্দের সাথে যোগসাজস করে বিনিময়ের মাধ্যমে উক্ত সুবিধাগুলো গ্রহন করে থাকেন। সুতরাং দেখা যায় রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুবিধাগুলো একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর ব্যক্তিরাই ভোগ করেন।
একটি গল্প প্রচলিত আছে যে একদা দুইজন মহিলা একটি সন্তানের মা হিসাবে দাবি করছেন নিজেদেরকে। উভয় মহিলাই সন্তানটিকে নিজের অধীনে রাখতে চান কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। স্থানীয় লোকজন এই সমস্যার সমাধান করতে না পেরে স্থানীয় আদালতের দারস্থ হলেন। বিচারক আসল মা কে চিহ্নিত করার জন্য কৌশল অবলম্বন করে ঘোষণা করলেন এই সন্তানটিকে দ্বিখন্ডিত করে দুইজন মহিলার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।
তখন মা হিসাবে দাবি করছিলেন এমন একজন মহিলা রাজী হলেন কিন্তু অপরজন চিৎকার করে কেঁদে বলে উঠলেন এই সন্তানের মা আমি নই মহামান্য আদালত সন্তানের মিথ্যা মা হিসাবে নিজেকে দাবী করার জন্য আমি অপরাধী অতএব আমাকে শাস্তি দিন এবং ঐ মহিলাই সন্তানের আসল মা তাকেই সন্তান দিয়ে দিন।
অবশেষে যিনি সন্তানকে দ্বিখন্ডিত করার ভয়ে মিথ্যা মা হিসাবে দাবী করার জন্য নিজেরই শাস্তি দাবী করলেন তিনি যে সন্তানের আসল মা একথা বুঝতে আর কারো বাকী থাকলো না। কারণ আসল মা কখনো সন্তান কে দ্বিখন্ডিত করা বা সন্তানের অকল্যানের কথা ভাবতে পারেননা।
আমাদের আসল মুক্তিযোদ্ধা যারা তারা এই সামান্য ভাতা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা চাকরিতে কোটা সুবিধার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েননি। বরং তারা দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যানের জন্য দেশকে স্বাধীন করেছেন। সুতরাং আমাদের উচিত নয় এই সামান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মহান আত্মত্যাগকে ম্লান করে দেওয়া। অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আছেন যারা রাষ্ট্রের প্রদত্ত সুবিধা গ্রহন করেননা শুধুমাত্র রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের মানুষের কল্যানের জন্য হতে পারে তারা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
কিন্তু এমন অনেক আছেন যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের সংকটকালীন মূহুর্তে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েননি বা ভোগবিলাসে মত্ত ছিলেন কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহন করার জন্য ঝাপিয়ে পড়ছেন। এই সুযোগ-সন্ধানীদের বিষয়ে আমাদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।
এই সমস্যার সমাধান হতে পারে সকল ধরনের ভাতা বাতিল করে সমাজের সবচেয়ে ঘৃনিত পেশা হলো ভিক্ষুক। এই ভিক্ষুক পূণর্বাসন কর্মসূচি চালু করতে হবে এবং প্রত্যেক গ্রাম বা মহল্লায় একটি সাইনবোর্ডে এই ভিক্ষুকদের নামের তালিকা এবং প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধার তালিকা টানিয়ে রাখতে হবে যেন কেহ প্রকৃতপক্ষে ভিক্ষুক না হলে সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করে এই তালিকাভুক্ত হওয়ার চেষ্টা না করে বরং তালিকা থেকে নাম কাটানোর চেষ্টা করে।
অথবা কাবিখা বা কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্প গ্রহন করতে হবে। যেমন দেশে প্রচুর পরিমানে খাল ছিল কালক্রমে সেগুলো ভরাট হয়ে দেশ এক মরু প্রান্তরে পরিণত হয়েছে ফলে দেশ মুক্ত পানির মাছ পুষ্টির নির্ভেজাল উৎস, কৃষি উৎপাদন যেমন হারিয়েছে তেমন এদেশের জলবায়ু নাতিশীতষ্ণ রূপ হারিয়েছে। সম্প্রতি কয়েক বছরের জলবায়ুর রূপ লক্ষ্য করলে আমরা বুঝতে পারি বিশ্বের সর্ববৃহৎ সাহারা মরুভূমির থেকেও বেশি শীত এবং বেশি গরম আমাদের দেশে পড়ছে কখনো কখনো। খাল খননের মাধ্যমে আমরা ফিরে পেতে পারি আমাদের হৃত সুজলা, সুফলা, শষ্য-শ্যামলা বাংলাদেশ এবং প্রচুর পরিমানে মুক্ত পানির মাছ যেটি হবে আমাদের জন্য বিষমুক্ত পুষ্টির আধার।
এছাড়া দেশের রাস্তা, খাল, নদী ইত্যাদির পাশে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি গ্রহন সেটি হতে পারে কাঠ বা ফলের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি বা যেসব এলাকায় ভিক্ষুক শ্রেণির লোক বেশি সেসব এলাকায় জমি অধিগ্রহন করে সরকার কৃষি উৎপাদন বা মৎস চাষ প্রকল্প গ্রহন করতে পারে। সুতরাং অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, শৈতপ্রবাহ বা চলমান তাপদাহ থেকে বাচতে পর্যাপ্ত খাল খনন বা বনায়নের মত কর্মসূচি গ্রহন করে দেশকে আবার নাতিশীতষ্ণ জলবায়ুতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এসকল প্রকল্প থেকে উৎপাদিত কাঠ, মাছ, কৃষিপণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার্জন করা সম্ভব শুধু দরকার দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং নৈতিকতার মাধ্যমে সঠিকভাবে প্রকল্প গ্রহন এবং প্রয়োগ। এসকল প্রকল্প থেকেই দেশের দূস্থ বা অভাবগ্রস্থ মানুষের অভাব মিটিয়ে সরকারের রাজস্ব আরো সমৃদ্ধ হবে এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
প্রথমোক্ত মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে পরবতীর্তে লোকমুখে জানা যায় লোকটির মৃত্যুরদিনে মসজিদের মাইকে যে নামে ঘোষণা করা হয় উক্ত নামে অন্য কোন গ্রামে একজন মুক্তিযোদ্ধার গ্রামের নাম পরিবর্তন করে উক্ত ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধার প্রতি মাসে যে কুড়ি হাজার টাকা ভাতা সেটি ভোগ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। স্বস্তির বিষয় ইতোমধ্যে সরকার ৮ হাজার ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ বাতিল করেছেন।
সুতরাং এখনই উপযুক্ত সময় এই সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের যথোপযুক্ত ব্যবহার করে রাষ্ট্রটিকে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করার এবং এধরনের অপরাধকে ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে গণ্য করে উক্ত অপরাধের সাথে জড়িতদের রাষ্ট্রের সকল ধরনের প্রাপ্ত সুবিধা বাতিল ও ফেরৎদানে বাধ্যকরণসহ চাকরিচ্যুত করে প্রচলিত আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করা।
অন্যথায় এই ধরনের ফৌজদারি কাজ বৃদ্ধি পেতে থাকবে। অন্যায়ভাবে ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে সমাজে অসৎ এবং ফৌজদারী অপরাধীদের দীর্ঘ দিন এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।
এই ধরনের ফৌজদারী অপরাধী কার্যক্রম বর্তমান একটি জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে এখনই যদি আমরা দলমত নির্বিশেষে রুখে দিতে না পারি অদূর ভবিষ্যতে আমাদের জাতির অস্তিত্ত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাড়াবে তখন আফছোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবেনা।
মুহাম্মদ আল্-হেলাল
এমফিল গবেষক(এবিডি)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
+৮৮০ ১৯১১ ৯৮১১৪৪
alhelaljudu@gmail.com