প্রথম পাতা » মতামত » বিষয় ভিত্তিক নিয়োগ-যোগ্যতা অনুযায়ী সুবিধা

বিষয় ভিত্তিক নিয়োগ-যোগ্যতা অনুযায়ী সুবিধা

Al Helal

৩৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া এবং ময়মনসিংহ বিভাগে পদায়নকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় নিকটতম অনুজ, তার প্রশাসন ক্যাডারে যোগদানের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিল “বিভাগীয় কমিশনার স্যার বলেছেন আমি জানি অনেকে আজ ২২ হাজার টাকা বেতনের চাকরিতে যোগদান করতে এসেছেন ৫০/৬০ বা তদুর্ধ্ব বেতনের চাকরি ছেড়ে। এখানে কি উদ্দেশ্যে এসেছেন জানিনা যদিও এখানে সৎভাবে বেশি উপার্জন করার সুযোগ নেই।

তবে কারো যদি অসৎ কোন উদ্দেশ্য থাকে আমার অনুরোধ তারা দেশ ও জাতির ক্ষতি করে গাড়ি-বাড়ি করার হীন উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে যোগদান করবেননা। বরং পূর্বে অধিক বেতন-ভাতার সুবিধায় যারা ছিলেন তাদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে যাওয়ার এখনও সুযোগ আছে। হয়ত বলবেন দেশের সেবা করতে এসেছেন কিন্তু ইচ্ছা থাকলে দেশের সেবা সৎভাবে কাজ করে সব জায়গা থেকে করা যায়।”

ওরিয়েন্টশন প্রোগ্রামে বিভাগীয় কমিশনারদের এমন বক্তব্যে কেউ উক্ত প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান না করে ফিরে গেছেন এমন কোন তথ্য আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বরং যারা এখানে আসে তারাও কি সুযোগ সুবিধা আছে এই প্রশাসন ক্যাডারে তা সাধারণত জেনেই আসেন।

তবে এমন দেখা গেছে যে ৩০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান করেছিলেন সেখান থেকে বেসরকারি চাকরিতে ফিরে আসার চেষ্টা করতে। যে বেসরকারি ব্যাংক ছেড়ে তিনি শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান করেছিলেন সেই ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি আবার অংশগ্রহন করেছিলেন।

কারন হিসেবে তিনি বলেন উক্ত ব্যাংকে আগে ৩৫ হাজার বেতন পেতাম এখন আরো বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে তবে শিক্ষা ক্যাডারে মাত্র ১৬ হাজার টাকা বেতন পাই সর্বসাকুল্যে যা দিয়ে সকল খরচ মেটাতে হিমসিম খেতে হয়। যদিও পূর্বের বেসরকারি ব্যাংকে ফিরতে পারেননি তবে পরবর্তী বিসিএসের মাধ্যমে তিনি কাস্টমসে যোগদান করেছেন।

আবার বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডার ছেড়ে বাংলাদেশ বাংকের সহকারি পরিচালক হতে দেখা গেছে ঠিক বিপরীত চিত্রও বিদ্যমান বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারি পরিচালকের পদ ছেড়ে বিসিএসের যে কোন একটি চাকরি পাওয়ার জন্য আপ্রান চেষ্টা।

প্রকৃতপক্ষে ৩৪তম বিসিএসে যোগদানের সমসাময়িক সময়ে তখন সমযোগ্যতা নিয়ে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে যোগদান করলে ৬০/৭০ হাজার টাকা বেতন পাওয়া যেত। ফেসবুক স্ক্রল করতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচমেটের একটি পোস্ট দেখলাম। যিনি লিখেছেন আজকের এইদিনে ৯ বছর আগে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেছিলাম আর্থিক বিচারে আজ যে বেতন পাই ৯ বছর আগে আমি সেই বেতন পেতাম। তিনি অবশ্য জুলাই আগস্ট আন্দোলন চলাকালে ফেসবুকে ‘এতো সোজা নারে পাগলা’ একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। এটি বোধ হয় আন্দোলন কে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা একটি পোস্ট। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী কর্মকর্তা এমন পোস্ট দিতে পারেন কিনা সেটি আজকের আলোচ্য বিষয় নয়।

উল্লেখ্য তিনি প্রথম সারির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগের দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে উচ্চ চাহিদা সম্পন্ন একটি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর।

কিছু দিন আগে ৪১তম বিসিএসের চুড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে শুধু ৪১তম নয় বিগত বেশ কয়েকটি বিসিএসের চুড়ান্ত ফলাফলে পররাষ্ট্র এবং প্রশাসন ক্যাডারে প্রকৌশল ও চিকিৎসা বিদ্যাসহ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকদের আধিপত্য দেখা যায় এবং কিছু গণমাধ্যমকে উক্ত ক্যাডার প্রাপ্তদের তথ্যচিত্র গুরুত্ব সহকারে প্রচার করতে দেখা যায়।

এমনকি প্রশাসনে কর্মরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসককেও অতি উৎসাহী হয়ে ফুল এবং উপহার সামগ্রী নিয়ে প্রার্থীর বাড়িতে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য উপস্থিত হতে দেখা যায়। কিছুদিন আগে নড়াইল জেলাস্থ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যিালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ঈদ পূর্ণমিলনে জেলা প্রশাসক বর্তমান শিক্ষার্থী এবং ভবিষ্যৎ চাকরি প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন পড়াশুনা করতে হবে বিসিএস এবং প্রশাসন ক্যাডার কে লক্ষ্য করে। কারন রাষ্ট্র যদি একটি গাড়ি হয় তাহলে প্রশাসন সেই গাড়ির ইঞ্জিন। সুতরাং এই ক্যাডার থেকে রাষ্ট্র এবং তার জনগনকে বেশি সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তাহলে কি গাড়ির চাকা, চ্যাচিজ ইত্যাদি ছাড়াও গাড়ি চলে উত্তর হলো নিশ্চয় না। সুতরাং গাড়ি সঠিকভাবে চালাতে হলে যেমন ইঞ্জিন, চ্যাচিজ, চাকা ইত্যাদি সবকিছুই গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে এবং যখনই সকল যন্ত্রাংশ সঠিকভাবে ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয় তখনই দূর্ঘটনায় কবলিত হয়। তেমন রাষ্ট্র পরিচালনা করতেও সব পেশার মানুষের গুরুত্ব রয়েছে কিন্তু যখন কোন রাষ্ট্রের একটি বিশেষ পেশাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং অন্যান্য পেশাকে অবহেলা করা হয় তখন সেই রাষ্ট্রের জন্যও দূর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে উঠে।

কোন পেশায় যখন কেউ নতুন যোগদান করেন হোক সেটি সরকারি কিংবা বেসরকারি উক্ত নতুন ব্যক্তিকে কর্ম উপযোগী করে তোলার জন্য মেধা, সময়, শ্রম, অর্থ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কিন্তু উক্ত ব্যক্তি কোন কারণে কিছু দিন পর যখন পেশা পরিবর্তন করেন তখন রাষ্ট্র বা সংশ্লিষ্ট সংস্থা উক্ত ব্যক্তিকে উপযুক্ত করতে যে সময়, শ্রম, অর্থ, মেধা ইত্যাদি বিনিয়োগ করেছিল তা অপচয় হয়।

আবার একজন প্রকৌশল বা চিকিৎসা বিদ্যায় স্নাতক যখন বিসিএস প্রশাসন বা পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগদান করেন তখন সে অনেক সময় রাষ্ট্রের জন্য সম্পদ না হয়ে দায় হয়। ফেসবুকে এমন একটি কমেন্ট সরকারের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকও করেছিলেন। নিয়োগ কৃত ঐ কর্মচারী বা কর্মকর্তার থেকে রাষ্ট্রের সেবা পাওয়ার কথা অথচ রাষ্ট্রকেই আবার নতুন বিষয়ের সাথে উক্ত স্নাতক কে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দিতে হয় এবং প্রস্তুত করার জন্য বিশাল বিনিয়োগ করতে হয়।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ের স্নাতক যদি নিয়োগ দেওয়া হয় এবং দীর্ঘদিন ধরে পেশা পরিবর্তন সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে রাষ্ট্রের এই প্রশিক্ষণ ব্যয় এবং অপচয় অনেকাংশে হ্রাস পাবে। তবে একটি নির্দিষ্ট পেশার প্রতি ঝোঁক কমাতে ‘বিষয় ভিত্তিক নিয়োগ, যোগ্যতা অনুযায়ী সুবিধা’ অর্থাৎ যিনি যে বিষয়ে শিক্ষার্জন করেছেন তিনি তৎসংশ্লিষ্ট চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন। আবার একটি নির্দিষ্ট চাকরিতে একজন স্নাতক যে সুবিধা পাবেন একজন স্নাতকোত্তর তার থেকে বেশি সুবিধা পাবেন পদ্ধতি অবলম্বন করলে চলমান সমস্যার সমাধান আশা করা যায়।

মতামত থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

মুহাম্মদ আল্-হেলাল
মুহাম্মদ আল্-হেলাল
এমফিল গবেষক (এবিডি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়মুহাম্মদ আল্-হেলাল ১৯৮৬ সালের ১লা মার্চ তারিখে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলাধীন রসুলপুর গ্রামে মুহাম্মদ কাঞ্চন সরদার এবং আনোয়ারা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহন করেন। তিনি তার পিতা-মাতার ১৪ সন্তানের মধ্যে দ্বাদশ। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের উপর স্নাতক সম্মান, স্নাতকোত্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে এমফিল(এবিডি)। পারিবারিক জীবনে তিনি ২ কন্যা সন্তানের গর্বিত জনক। কর্মজীবনে তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জনসংযোগ, প্রশাসন এবং মানবসম্পদ বিভাগ, গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন সেকেন্ডারি এডুকেশন কুয়ালিটি এন্ড অ্যাক্সেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট(সেকায়েপ) এর রিসোর্স টিচার(কৌশলগত প্রশিক্ষক) এবং প্রোগ্রাম অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি সামাজিক বিভিন্ন কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত। সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিকে তার অসংখ্য কলাম প্রকাশিত হয়েছে। তিনি পেশাগত কাজে এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলন অংশগ্রহনের জন্য আফঘানিস্তান, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ভারত ভ্রমন করেছেন। ২০১৯ সালে স্ত্রী বিয়োগের পর থেকে তিনি নিজ গ্রাম থেকে ওভারসিজ এ্যাসাইনমেন্ট, ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ডে ট্যুরিজম বিজনেস পরিচালনা করেন। তিনি বৈষম্যহীন সমাজ ও বিশ্বব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেন।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *