প্রথম পাতা » মতামত » সাম্প্রদায়িকতা ও অসাম্প্রদায়িকতার ব্যবচ্ছেদ

সাম্প্রদায়িকতা ও অসাম্প্রদায়িকতার ব্যবচ্ছেদ

Communalism

সাধারণভাবে অসাম্প্রদায়িকতা বলতে সম্প্রদায়হীনতা নয় বরং তার উর্ধ্বে উঠে মানবতার পক্ষাবলম্বন করাকে বুঝায়। ধর্মনিরপেক্ষতার ন্যায় অসাম্প্রদায়িকতাও ধর্মহীনতা নয় বরং সকল ধর্ম বা সম্প্রদায়ের প্রতি নিরপেক্ষ থেকে সকল সম্প্রদায়ের সমান অধিকার ভোগের প্রয়াসই অসাম্প্রদায়িকতা। সকল ধর্মের, সকল বর্ণের এবং সকল পেশার মানুষ যখন পারস্পারিক সম্প্রীতি বজায় রেখে আধুনিক সমাজ প্রতিষ্টার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিচালিত হবে এবং তা জীবনাদর্শ হিসেবে ধারন করবে তখন তাকে অসাম্প্রদায়িকতা বলে। অসাম্প্রদায়িকতা শব্দ চয়নের সাথে সাথে সাম্প্রদায়িকতা প্রত্যয়টি চলে আসে, যা অসাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে অনুধাবনের পূর্বশর্ত। তাই অদ্য আলোচনায় সাম্প্রদায়িকতা ধারণাটি প্রাধান্য পাবে।

সাম্প্রদায়িকতার ইংরেজি প্রতিশব্দ Communalism (কমিউনালিজম) সম্পর্কে অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধান বলেছে, “A strong sense of belonging to a particular community, especially a religious community, that can lead to extreme behaviour or violence towards others” (OLD, 2021). অধিকাংশ তাত্ত্বিকই সাম্প্রদায়িকতা অর্থে বিশেষ করে ধর্মীয় দ্বান্ধিক গোষ্ঠীসমূহকেই নির্দেশ করে, বিশেষ করে হিন্দু মুসলমানদের দ্বন্দ্ব বোঝাতে। তবে বিজ্ঞজনের মতে এই অর্থ ভারতীয় উপমহাদেশের পরিপ্রেক্ষিতেই সীমাবদ্ধ। সাম্প্রদায়িকতার উত্থানের উৎসের সন্ধানে অধিকাংশই ব্রিটিশ “ভাগ কর শাসন কর” নীতিকে দায়ী করলেও, হিন্দু-মুসলমান সত্তার তাত্ত্বিক সীমানা বিন্যাস করেছিল একটি প্রাচ্যবাদী জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রকল্পের অংশ, তবে ব্রিটিশরা এটিকে পূর্ণরূপে আপন স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছিল।

“‘হিন্দু’ শব্দের ইতিহাসের দিকে নজর দিতে পারি, যা মূলত ফারসি এবং ব্যুৎপত্তিগতভাবে সিন্ধু (ও ইন্ডিয়া, ইন্ডাস হিন্দ প্রভৃতি) শব্দের সাথে সম্পর্কিত। শব্দটি শুরুতে শুধু ভৌগোলিক পরিচিতিই বোঝাতো। অর্থাৎ সিন্ধু উপত্যকা তথা এর পূর্ব প্রান্তের অধিবাসীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। তার মানে একসময় এ উপমহাদেশের মুসলমানরাও ‘হিন্দু’ ছিল ‘ইন্ডিয়ান’ অর্থে” (ত্রিপুরা, ২০১৫, পৃ. ৮৩)। কিন্তু প্রশ্ন হলো ব্রিটিশ আমলে কিভাবে আমূল পরিবর্তন হয়ে ‘হিন্দু’ শব্দটি হিন্দু আর মুসলমান পরিচয়ের দলিল হিসেবে আর্বিভূত হলো। তবে যেভাবেই এর আর্বিভাব হোক না কেন? ব্রিটিশরা তা লুফে নিতে কুন্ঠিত হয়নি বরং ‘ভাগ কর শাসন কর’ নীতির আমূল প্রয়োগ করে হিন্দু-মুসলমানদের দুটি আলাদা সম্প্রদায় হিসেবে উপস্থাপন করে নিজেদের শাসন করার বৈধতা ধরে রেখেছে আকুন্ঠভাবে। এখানে ঊল্লেখ্য সাম্প্রদায়িকতা শব্দটি উপমহদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রজোয্য কিন্তু এটি শুধু ধর্মীয় গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং হিন্দু বর্ণ প্রথা কিংবা জাতের মধ্যে সংঘর্ষ বোঝাতে বা মুসলমান সিয়া-সুন্নি দাঙ্গা বা সংঘর্ষ বোঝাতেও সাম্প্রদায়িকতা শব্দটির প্রচলন অনেকাংশেই দৃশ্যমান।

সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে মত দিতে গিয়ে সুরঞ্জন দাস বলেন, “সাম্প্রদায়িকতা বাংলার হিন্দু-মুসলমান বিরোধের ফসল। ব্রিটিশ রাজের নাগপাশ থেকে উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই বিষয়টি এমন সব ঘটনাবলির ফল, যেগুলিকে অনেক সময়ই স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে স্ববিরোধী বলে মনে হয়। ভারতীয় জাতীয়তাবাদ শক্তিশালী হয়ে ওঠার সাথে সাথে সাম্প্রদায়িকতা আত্মপ্রকাশ করে। এর ফলে উপমহাদেশ ধর্মভিত্তিক দুটি রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়” (Das, 2014)। সুরঞ্জন দাসের সাথে সাথে জয়া চ্যাটার্জিও প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন, তিনিও ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সাথে সাম্প্রদায়িকতার এ ধরনের সূত্রতা দেখিয়েছেন। তাঁর মতে, “আদর্শ এবং রাজনৈতিক আচরণের দিক থেকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িতার মধ্যেকার সম্পর্ক জটিল এবং বিপরীতধর্মী শক্তির একটি সংশ্লেষিত রূপ”(চ্যাটার্জি, ২০১৪, পৃ. ১)।

বদরুদ্দীন উমর ব্যক্তি দৃষ্টিকোণ থেকে সাম্প্রদায়িতাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর মতকে বিবেচনায় নিলে বা বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিপাত করলে ধর্মগত বিদ্বেষই হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা এবং এটি এই উপমহাদেশের ভৌগোলিক সীমানায় আবদ্ধ এবং যার মূলে আছে প্রধানত হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়। আবার তিনি ধর্ম, ধর্মনিষ্ঠা ও সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে সম্পর্ক নিরূপণ এবং পার্থক্য করতে গিয়ে বলেন, “ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে যোগসম্পর্ক থাকলেও সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিষ্ঠা স্বতন্ত্র জিনিসি।…ধর্মের আচার বিচার এবং তত্ত্বের প্রতি নিষ্ঠা থাকলে তাকে আমরা বলি ধর্মনিষ্ঠা। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা পৃথক জিনিস। কোন ব্যক্তির মনোভাবকে তখনই সাম্প্রদায়িক আখ্যা দেয়া হয়, যখন সে এক বিশেষ সম্প্রদায়ভুক্তির ভিত্তিতে অন্য এক ধর্ম সম্প্রদায় এবং অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধাচারণ ও ক্ষতিসাধন করতে প্রস্তুত থাকে”(উমর, ২০১৫, পৃ. ১১)। তাঁর মতানুসারে ধর্মনিষ্ঠার সাথে যোগ আছে ধর্মীয় রীতি-নীতি, আচার, তত্ত্ব এবং বিশ্বাসের সাথে অন্যদিকে সাম্প্রদায়িতার সাথে সম্প্রদায়ের সম্পৃক্তি বিদ্যমান। সাম্প্রদায়িকতার জন্য তাই কোন মতেই ধর্মে নিষ্ঠাবান তথা ধর্ম পরায়ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। সাম্প্রদায়িকতার যে অভিব্যক্তি আমরা দেখলাম তাতে এটা অনুমেয় যে, এইভাবাবেগে যতোটা না স্ব-সম্প্রদায়ের প্রতি সম্প্রীতি, তার চেয়ে অনেক বেশি অপর সম্প্রদায়ের প্রতি অপ্রীতি; যতোটা না স্নিগ্ধ হৃদয়বৃত্তি, তার চেয়ে অনেক বেশি অসূয়াবৃত্তি।

বস্তুত অনুভব এবং কর্মে সাম্প্রদায়িকতা প্রধান উদ্দেশ্য স্ব-সম্প্রদায় নয়, বরং বিপরীত ধর্মীয় সম্প্রদায় (হক, ২০১৭, পৃ. ৭০)। একারণেই সাম্প্রদায়িকগণ আপন সম্প্রদায়ের উন্নয়নে নয়, বরং অপর সম্প্রদায়ের চেতনার আবেশে, অবসেশনে সাংঘর্ষিক রূপে আবিভূত হয়, সেবা পরায়নে নয়। আবার অপর সম্প্রদায়ের প্রপীড়িত সাধনে যতোটা ভাবাবেগশীল, স্ব-সম্প্রদায়ের সেবায় ততোটা ব্রতি এবং ক্রিয়াশীল নয়। যে কারণে সাম্প্রদায়িকতার অন্যতম একটি লক্ষণ হচ্ছে, ভাবাবেগ, আচরণ এবং ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় শুচিবায়ুগ্রস্ততা, এছাড়াও অপ্রীতি এবং অপর সম্প্রদায়ের মানুষের হাত থেকে আহার গ্রহণে অন্নপাপ, এমন কি অপর সম্প্রদায়ের স্পর্শে সুচি-অসুচিভাবও সাম্প্রদায়িকতার লক্ষণ। সাম্প্রদায়িকতার এমন আচরণেই হয়তো অনেকে মাংস ভক্ষণ না করে গোশত খাওয়া সমীচীন মনে করল, জলপানে তৃপ্ত না হয়ে পানি পান করল, এভাবেই হিন্দুর গান্ধী, মুসলিমের জিন্নাহ্; হিন্দুর মহাত্মা গান্ধী, মুসলিমের কায়েদে আযম; হিন্দুর রবীন্দ্রনাথ, মুসলিমের নজরুল; হিন্দুর গান্ধী টুপি, মুসলিমের জিন্নাহ্; হিন্দুর অবন ঠাকুর, মুসলিমের জয়নুল আবেদীন; হিন্দুর বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়, মুসলিমের আলীগর বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি রবীন্দ্রনাথের “আমার পণ”-“সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি/ সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি…” শিশু পাঠের এ কবিতা ইসলামীকরন করে পড়া হল, “ফজরে উঠিয়া আমি দিলে দিলে বলি/ সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি”(হাই, ২০১৯, পৃ. ৯৫)। উপনিবেশিক এই বিভাজন অদ্যাবধি বিদ্যমান, যার দরুন অতিসম্প্রতি রবীন্দ্রনাথের রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের বিকৃতির ঘটনা ঘটেছে, যা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যেখানে জাতীয় সংগীতের, ‘আমার সোনার বাংলা/আমি তোমায় ভালোবাসি’কে বিকৃত করে ইসলামীকরন করে বলা হয়েছে, ‘আমার সোনার মাওলা/আমি তোমায় ভালোবাসি।’ সুতরাং ঔপনিবেশিকতার সৃষ্টি সাম্প্রদায়িকতা অদ্যাবধি বহমান, যদিও এর সৃষ্টিকারীরা বহুকাল পূর্বে এভূখন্ড ত্যাগ করছে কিন্তু সঞ্জীবিত রয়েছে তাদের সৃষ্টি, এখনও ধর্মের নামে বলি হয় বহুপ্রাণ, সমাজ এবং সংস্কৃতি।

সাম্প্রদায়িতার কারণ হিসেবে প্রথমেই চিহ্নিত করা হয়, ঔপনিবেশিকতার সৃষ্টি “ভাগ কর শাসন কর” নীতিকে। জহরলাল নেহেরুসহ অনেকের অভিমত হলো, “সাম্প্রদায়িক সমস্যাটি ইংরেজি ভেদ নীতির পরিণাম।” তবে এক্ষেত্রে তিনি সাম্প্রদায়িকতাকে রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং স্বার্থের সাথে এক করে দেখান। তাঁর মতে, “In political matters, religion has been displaced by what is called communalism, a narrow group mentality basing itself on a religious community but in reality concerned with political power and patronage for the interested group”(Neheru, 1989, p. 380). তবে অধিকাংশ তাত্ত্বিকই সাম্প্রদায়িতার কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা বলেছেন।

মুসলমানদের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অবশ্য প্রদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়নি। সম্প্রদায় হিসেবে তারা জীবিকা নির্বাহ করত মূলত চাষি কৃষক এবং হিন্দু জমিদার কর্তৃক নিয়োজিত খেতমজুর হিসেবে। মুসলমান চাষীদের ওপর হিন্দু প্রাধান্য আরও দৃঢ় হয়েছিল ঋণের জন্য হিন্দু মহাজন-এর উপর মুসলমান খাতকদের নির্ভরতার মাধ্যমে। প্রচলিত খাজনা নিয়মিত পরিশোধ করা ছাড়াও পূজাবাবদ ও জমিদারিতে বিশেষ অনুষ্ঠানাদি, যেমন জমিদার পরিবারে নতুন শিশুর জন্ম কিংবা বিবাহানুষ্ঠান ইত্যাদির জন্য মুসলমান চাষীদের অতিরিক্ত চাদা এর বোঝা বহন করতে হতো(Das, 2014)। আবার বাংলায় কিছু মুসলিম জমিদার থাকলেও মহিলারা উত্তাধিকার হিসেবে অংশ হওয়ার ফলে তা ক্রমশ ছোট হয়েছিল অন্যদিকে হিন্দু জমিদারদের ক্ষেত্রে তেমনটি দৃষ্টিগোচর হয়নি। আবার সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলিম বৈষম্য ছিল চরম(Das, 1991, pp. 17–19)। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে এই অর্থনৈতিক বিভাজন এবং বৈষম্য কে অনেকেই সাম্প্রদায়িকতার কারণ বলে থাকেন। তবে কিছু তাত্তি¡ক সাম্প্রদায়িকতা বিষয়টি জটিল এবং ভারতীয় সমাজের একটি দীর্ঘকালের মজ্জাগত ব্যাধি বলে উল্লেখ করেন। তাদের মতে, হিন্দু সমাজে প্রচলিত বর্ণপ্রথা অনুযায়ী বর্ণাশ্রম থেকে বর্ণবিভেদ ও বর্ণসংঘর্ষ উদ্ভূত, যা প্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যমান ছিল। বর্ণভেদের কারণে হিন্দু সমাজে হানাহানি এবং সংর্ঘষকেই কেউ কেউ সাম্প্রদায়িকতার কারণ হিসেবে বলে থাকে(হাই, ২০১৯, পৃ. ৯১)।

সামগ্রিক বিচারে সাম্প্রদায়িকতার সাথে যারা জরিত তাদের ব্যক্তি স্বার্থকে অনেকেই সাম্প্রদায়িকতা বলবদ থাকার কারণ বলে উল্লেখ করেন, যাকে কেউ কেউ আবার রাজনৈতিক স্বার্থ হিসেবেই দেখে থাকেন। যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাম্প্রাদায়িকতার বোধকে জনগণের ভাবাবেগে তারিত করে স্ব-সম্প্রদায় ব্যতীত অপর সম্প্রদায়ের লোকদের উপর প্রপীড়ন অব্যাহত রেখেছেন, কিন্তু এর বিপরীত কার্যপ্রক্রিয়াও বিদ্যমান ছিল, যারা সাম্প্রদায়িতার ঊর্ধ্বে উঠে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ডাক দিতে পেরেছিলেন, যাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু অন্যতম।তাঁর অভিমত ছিল অনেকটা ডক্টর মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহর মতোই। শহীদুল্লাহ্ ১৯৪৮ সালে ঢাকায় একটি ভাষণে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন, “আমরা হিন্দু মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি। এটি কোন আদর্শের কথা নয়; এটি একটি বাস্তব কথা। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে তা মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-লুঙ্গি-দাড়িতে ঢাকবার জো-টি নেই”(উদ্ধৃত হাই, ২০১৯, পৃ. ৯৬)। যার সারমর্ম হলো হিন্দু বা মুসলিম নয় বরং রক্তের ধারার ধারক হিসেবে বাঙালিত্ব সকলের ঊর্ধ্বে, যেখানে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ নয় বরং সম্প্রীতিই প্রধান, যাকে অসাম্প্রদায়িকতা হিসেবে অভিহিত করা হয়। এ অর্থে অসাম্প্রদায়িতা পুরোপুরি ধর্মনিরপেক্ষ, যেখানে প্রত্যেকে তার নিজ ধর্ম পালন করবে কিন্তু অন্যের ধর্ম পালনে বাধা হয়ে দাড়াবে না।

তথ্যসূত্র:

উমর, বদরুদ্দিন (২০১৫) সাম্প্রদায়িকতা, নবম স:, ঢাকা: মাওলা ব্রাদার্স।
ত্রিপুরা, প্রশান্ত (২০১৫) বহুজাতির বাংলাদেশ: স্বরূপ অন্বেষণ ও অস্বীকৃতির ইতিহাস, প্রথম স:, ঢাকা: সংবেদ।
চ্যাটার্জি, জয়া (২০১৪) বাঙলা ভাগ হল: হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা ও দেশ বিভাগ ১৯৩২-১৯৪৭, তৃতীয় স:, ঢাকা: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড।
হক, আবদুল (২০১৭) বাঙালী জাতীয়তাবাদ এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ, বাংলা একাডেমি স:, ঢাকা: বাংলা একাডেমি।
হাই, মুহাম্মদ আবদুল(সম্পা)(২০১৯) বাঙালির ধর্মচিন্তা, তৃতীয় স:, ঢাকা: সূচীপত্র।
Das, S. (1991) Communal Riots in Bengal, 1905-1947. First ed. Delhi: Oxford University Press. doi: 10.2307/2166298.
Das, S. (2014) Communalism, Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh. Available at: http://en.banglapedia.org/index.php?title=Communalism (Accessed: 23 January 2021).
Neheru, J. (1989) The Discovery of India. Centenary. Oxford: Oxford University Press. doi: 10.2307/3018950.
OLD (2021) Communalism, Oxford Learner’s Dictionaries. Available at: https://www.oxfordlearnersdictionaries.com/definition/english/communalism (Accessed: 22 February 2021).

Disclaimer: আল-আমিন, মো:, (২০২০) “অসাম্প্রদায়িকতা: বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও বিবৃতি,” রুদ্রমঙ্গল জার্নাল, মুজিববর্ষ বিশেষ সংখ্যা, পৃ. ১২৬-১৫০. প্রবন্ধের অংশ বিশেষ

মতামত থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

মোঃ আল-আমিন
সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *