রাস্তায়, ফুটপাতে কত শিশুর দিনকাটে। অফিস আর কলকারখানায় কিংবা বাসা—বাড়িতে নিয়োজিত আছে হাজারো শিশু। পরিবারের অভাবের কারণে, পেটের দায়ে অনেক শিশু অপরিণত বয়সে বাধ্য হয়ে কাজ করছি। অথচ এই শৈশবের সময়টা তার পড়াশুনা আর খেলাধুলা করে কাটাবার কথা। আমাদের অধীনেই, আমাদের করণীয় কাজগুরেঅ করে দিচ্ছে ওরা। বিনিময়ে খাওয়া, থাকা, পোশাক আর সামান্য অর্থ পাচ্ছে এসবই সত্যি। কিন্তু সে হারাচ্ছে তার সোনালি শৈশব! বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার আলো থেকে। তাই আমাদের উচিত তাদের জন্য পড়াশুনার ব্যবস্থা করে দেয়া, সুযোগ সৃষ্টি করা। তার শেশবের অঅনন্দ কিছুটা হলেও উপভোগ করতে দেয়া। তোমরা জানলে অবাক হবে— আমাদের সমাজেরই কিছু মানুষ ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত—ছিন্নমূল শিশুদের পড়াশুনার ব্যবস্থা করেছে। আমরা আশা করবো এই চেতনা ছড়িয়ে পড়বে আপামর বাংলাদেশে। কোনো শিশুই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবেনা। নিজের গল্পগুলো পড়ে জেনে নাও শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে যারা তারা কারা….
সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা
সংগঠনটির নাম দ্য স্কুল অব হিউম্যানিটি। ২০১৭ সালের রমজান মাসে ১২০ জন শিশুকে নিয়ে একসাথে ঈদ উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে পথ চলা শুরু করে স্কুল অব হিউম্যানিটি। শুরুতে শীত বস্ত্র বিতরণ, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা ছাড়া নানারকম কাজ করছে তরুনদের এই সংগঠনটি। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফখরুল মজুমদারের তার স্বপ্নের পথচলা নিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের সাথে সে কাজ করে। তবে কোন সংগঠনেরই চুড়ান্ত কোন লক্ষ্য খুঁজে সংগঠনটির মাধ্যমে তারা ৪ থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত শিশুদের সাথে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিয়ে কাজ করেন। এ প্রতিষ্ঠানে ১৬০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র—ছাত্রী, গৃহিনী ও চাকুরীজীবি। তারা স্বেচ্ছায় বিনা বেতনে এ কাজ করে। ফখরুল জানায়, এখানকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মানবিকভাবে বিধ্বস্থ। তাই প্রথমেই মানষিক বিপর্যস্ততা কাটাতে পাশাপাশি তাদের মেধা বিকাশের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১০ জন শিক্ষার্থী কাজ করে যাচ্ছে। মাসে অন্তত: ১ দিন ডাক্তারদের ১টি টিম দিয়ে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা ও ঔষধ সররবরাহ করা হচ্ছে। ক্লাসের সময় হালকা নাস্তার পাশাপাশি বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে বিশেষ অনুষ্ঠান করে ঐ দিনের মাহাত্ম তুলে ধরা হয়। একই সাথে ঐ দিনে তাদের জন্য ভাল খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় আর্থিক ব্যয় সম্পর্কে ফখরুল জানান, ফেসবুকে ‘২ টাকার প্রজেক্ট’ নামে একটা আইডি খোলা আছে এবং সেখানে বিকাশ নম্বর দেয়া আছে। এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। যা ফেসবুকের এই আইডির মাধ্যমেই আসে। যার বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই দিয়ে থাকে। প্রতি মাসে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার বাহিরে তিনটি স্কুলের কার্যক্রম চলছে। স্কুলের উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন হলো, সকল শিশুর জন্য শিক্ষা বান্ধব সমাজ গড়ে তোলা।
আলোর পথ দেখাচ্ছে পথকলি পাঠশালা
অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার এ কাজটি করে যাচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার আখাউড়ার এ প্রতিষ্ঠানটি। বোরবার বাদে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আখাউড়া রেলস্টেশনের ২নং প্লাটফর্মে এ পাঠশালায় চলে পাঠদান চলে। ২০ জন শিক্ষক—শিক্ষিকা নিয়ে শুরু হয় সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য ব্যাতীক্রমধর্মী এ পাঠশালাটির যাত্রা। এখানে যারা পড়াশুনা করছে তারা সবাই কোন না কোন কাজের সাথে জড়িত। কেউ ভিক্ষা বৃত্তি, কেউ বা বাসা বাড়িতে কাজ করাসহ এমন কী অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত। এসব শিশুর জঘন্য কর্মকান্ড থেকে ফিরে আনার লক্ষ্যে এ পাঠশালার যাত্রা শুরু হয়। এখানে শিশুশিক্ষার্থীদের মায়ের মমতা ও বাবার স্নেহ দিয়ে পড়ানো হচ্ছে। দুই জন শিশুশিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে একজন শিক্ষক। বিনা পয়সায় এ পাঠশালায় পড়াচ্ছেন তারা। এ পাঠশালা থেকেই শিশুশিক্ষার্থীদের দেয়া হয় বই খাতাসহ শিক্ষা উপকরণ। যারা এখানে পাঠদান করছেন তারাই সবাই আখাউড়াসহ বিভিন্ন কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। তারা কলেজে যাওয়ার পূর্বে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে এখানে পাঠদান করেন।
পাঠশালাটি পরিচালনা করছেন আল—আমিন সজিব। তিনি বলেন, এখানে যারা পড়াচ্ছেন তারা সবাই বিনা পয়সায়, অর্থাৎ স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন। আমরা সবাই শিক্ষার্থী। আমাদের পকেটের পয়সা দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের বই খাতা কিনে দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হল সুবিধা বঞ্চিত ছিন্নমূল শিশুরা যাতে অপরাধের দিকে পা না বাড়ায়। তাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসা।
ছিন্নমূলের স্বপ্ন নিয়ে ‘জুম বাংলাদেশ’
ছিন্নমূল পথশিশুদের জীবনে শিক্ষার ছেঁায়া আনতে কিছু উদ্যমী তরুণের ভালোবাসা জুম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।
রাজধানীর সেগুন বাগিচার একটি বস্তিতে তারা গড়ে তুলেছেন জুম বাংলাদেশ স্কুল নামে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের স্কুলটি। স্কুল থেকে ঝরে পড়া, মাদকাসক্ত এ সব ছিন্নমূল শিশুদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার উপকরণ দিয়েও সহায়তা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এখানে বস্তির ছিন্নমূল পরিবারের শিশুদের সপ্তাহে তিন দিন বিকেলে খোলা আকাশের নীচে পাঠদান করছেন তারা। জুম বাংলাদেশ স্কুলের অন্যতম সমন্বয়ক এসটি শাহীন জানান, নিজস্ব ভাবনা থেকেই মুলত ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে কাজ করা। বস্তিতে বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে ঘুরে শিশুদের পাঠদান করাচ্ছি আমরা। পাঠদান শেষে প্রতিটি শিশুকে সামান্য খাবার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। যাতে করে লেখাপড়া করতে একটু লোভ জাগে। জুম বাংলাদেশ স্কুলের আরেক সমন্বয়ক মাহতাব শফি জানান, যারা পরিবার ও রাষ্ট্র থেকে শিক্ষার আলো বঞ্চিত, এমন কিছু পথশিশুদের নিয়ে আমাদের এ ক্ষুদ্র উদ্যোগ।
সুবিধাবঞ্চিতদের স্কুল ‘আলোর দিশারী’
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে ব্যতিক্রমী স্কুল ‘আলোর দিশারী’। সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হয়ে দুই ঘণ্টা ক্লাস চলে স্কুলটিতে। সপ্তাহে ছয় দিনের ক্লাস হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানবিক বাংলাদেশ’ এর স্বেচ্ছাসেবকদের প্রচেষ্টায় বরগুনা পৌর শহরের ডিকেপি সড়কে চলছে এ স্কুলটি। শিক্ষা উপকরণ ছাড়াও প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের রান্না করা খাবার দেয় সংগঠনটি। ২০২২ সালে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকদের পরিকল্পনা ও বাংলাদেশ বিমানে কর্মরত সাইফুর রহমানের পরামর্শে গড়ে উঠে এই স্কুল। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, স্কুলশিক্ষক ও কলেজ শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। ইমার্জিং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একটি কক্ষে সন্ধ্যার পর স্কুলটির ক্লাস শুরু হয়। বাংলাদেশ বিমানে কর্মরত সাইফুর রহমান বলেন, আলোর দিশারী স্কুলের মাধ্যমে আমরা বরগুনার সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল শিশুদের প্রাক—প্রাইমারি স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করি। এখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা পারিশ্রমিকে যে কেউ এসে শিক্ষকতা ও সহযোগিতা করতে পারবেন।
পার্কে পড়তে আসে ছিন্নমূল শিশুরা!
বগুড়ার চেলোপাড়া এলাকায় সকালের মাছবাজারের অঁাশটে গন্ধ বিকেলের দিকে খানিকটা থিতিয়ে আসে। পশ্চিমে ঢলে পড়তে থাকা রবির তেজেও পাশের মৃতপ্রায় করতোয়া নদীর পানির দুর্গন্ধ একইরকম থেকে যায়। ঠিক তখনই চেলোপাড়া শিশুপার্কে রেলবস্তির একদল শিশু আসে তাদের ‘পাঠশালায়’ হাজিরা দিতে। স্কুল ছুটির পর পার্কটিতে অন্য শিশুদের খেলা চলে। তার মধ্যেই খোলা আকাশের নিচে ‘ভিন্নদৃষ্টির পাঠশালা’য় পড়া চলে ছিন্নমূল শিশুদের।
২০১৮ সাল থেকে বগুড়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু উদ্যোমী শিক্ষার্থী এই পার্কে এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা পয়সায় পাঠদানের উদ্যোগ নেন। এখানকার নিন্ম আয়ের মানুষের যে ছেলে—মেয়েরা ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পায় না, অর্থাভাবে গৃহশিক্ষকের খরচ যোগান দেওয়া সম্ভব হয় না যাদের পক্ষে, তারাই এখানে পড়তে আসে।
ভিন্নদৃষ্টির পাঠশালার উদ্যোক্তারা বলছেন, ভিন্ন কোনো মত কিংবা পথের কথা বলতে তারা এই পাঠশালার এমন নামকরণ করেননি। এর অর্থ সমাজে ভিন্নভাবে থাকা সুবিধবঞ্চিত শিশুদের ওপর দৃষ্টি। এখানে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেনি পর্যন্ত পড়া শিশুদের পাঠ দেন তারা।
ভিন্নদৃষ্টির পাঠশালার কার্যক্রম চলে সপ্তাহে ৩ দিন। মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে পাঠদান। স্বেচ্ছাসেবী ৮ জন শিক্ষক ও তাদের বন্ধুদের টাকায় চলে সবকিছু। এ ছাড়া প্রতিবছর বইমেলায় এই শিক্ষকরা অমর একুশে গ্রন্থমেলায় একটি স্টল দেন। সেখান থেকে আসা মুনাফার অর্থও এখানে যুক্ত করা হয়।
আলো ছড়াচ্ছে ‘স্বপ্নসিঁড়ি’
যে শিশুরা শহরের আশপাশে, ফুটপাতে প্লাস্টিক, বোতল, পলিথিন কুড়াত। কেউ ভিক্ষা বৃত্তি করত, কেউবা বাসাবাড়িতে কাজ করত। এমনকি অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ত অনেকে। কারো আবার মা নেই, কারো নেই বাবা, কারো আবার মাথা গুজার ঠাঁইটুকু নেই। আর এমন অধিকার বঞ্চিত শিশুদের আলোর পথ দেখাচ্ছে স্বপ্নসিঁড়ি। ছিন্নমূল শিশুদের আলোর পথ দেখানোর এক উদীয়মান সূর্য, তারুণ্যনির্ভর সংগঠন স্বপ্নসিঁড়ি। শিশুদের নিয়ে অক্ষর জ্ঞানের পাশাপাশি নৈতিক বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার এ কাজটি করে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়া এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী। রংপুর বাবুপাড়া রেলস্টেশন এলাকার শুক্রবার এবং শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঠশালায় চলে পাঠদান। ‘হাত বাড়াই মানবতার সেবায়, লক্ষ্য মোদের আকাশ ছোঁয়ায়’ এই স্লোগান সামনে রেখে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় ৩ মার্চ ২০১৮ সালে পথশিশু এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বপ্নসিঁড়ি পাঠশালা।
যেখানে অধিকার বঞ্চিত শিশুদের জন্যে বিনামূল্যে পাঠদানের পাশাপাশি বিনামূল্যে বই, খাতা—কলম, ব্যাগসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়। নিয়মিত নেওয়া হয় পরীক্ষা, মেধাক্রম অনুসারে পুরস্কার প্রদান এবং খাবারের ব্যবস্থা করা হয় যাতে করে শিশু শিক্ষার্থী শিক্ষা থেকে দূরে সরে না যায়। পাশাপাশি অভিভাবকদের নিয়ে শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। যাতে করে তাদের শিশুদের পাঠদানের উৎসাহ দেন তারা।
রাজধানীর ফুটপাতে এফএনএফ স্কুল
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কাছেই বীর উত্তম সিআর দত্ত রোড ঘেঁষে পান্থকুঞ্জ পার্ক। পার্কের সংস্কার কাজ চলছে, তাই টিনঘেরা দেয়ালের পাশে ফুটপাতেটি পথচারীরা তেমন ব্যবহার করছেন না। এই ফুটপাতেই স্কুলড্রেস পরিহিত গোটাবিশেক ছেলে—মেয়ে সুর করে কবিতা পড়ছে। আর সামনে দুই যুবক তাদের পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন।
স্কুলের নাম ফিউচার নেশন ফাউন্ডেশন বা এফএনএফ স্ট্রিট স্কুল। যারা পড়তে আসে তারা সবাই ছিন্নমূল শিশু। পেটের দায়ে সারাদিন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে তারা। এরপর সোজা চলে আসে এফএনএফ স্কুলে। স্কুল চলে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। আলাদা কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই। সড়কবাতির আলোতেই দিব্যি পড়াশোনা চলছে।
সম্প্রতি এটি নৈশ বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে এ স্কুলের শিশুরা এখন থেকে সরাসরি এফএনএফ স্কুলের নামে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। ফুটপাত হলেও এসব শিশু যেন স্কুলের অনুভূতি পায়, অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে নিজেদের আলাদা মনে না করে, সে জন্য উদ্যোক্তারা সবাইকে স্কুলড্রেস দিয়েছেন। বই—খাতাসহ শিক্ষা উপকরণও বিনামূল্যে দেয়া হয়।