ভাঙছিল নৈঋত।
পদ্ম গুলঞ্চঝোপ চুপেচুপে এগুচ্ছে শ্যাওলা উঠোনে।
সহসা বজ্রনিনাদ—কাঁপে দৃশ্যসমূহ।
ভাঙছিল নৈঋত, ভুত ভাগানিয়া।
যে ঘোড়াটি নেই
তারও চার পা আছে।
(চারদিকে চার পা দৌড়ে হারিয়ে যাচ্ছে…)
০১.
ছাগলখেদানি বৃষ্টি।
আকাশ উপুর হয়ে ছাইরঙ ঝিরিঝিরি পতনোম্মুখ।
সফেদ গাভী মাঠে ঘাস ছেঁড়া শব্দ ছড়ালো। একটা মানবশিশু কয়েক কদম হেঁটে সংসারে মিশে যাচ্ছে।
একটা মানুষ তার হাঁসের ছানাগুলি ঝাঁকায় ভরে যেতে যেতে—মুছে যাচ্ছিল ওই হালটের বাঁকে।
জাংলার সবুজ থেকে একটা শ্যামল লাউ মানুষের হাতে ঝুলে মুছে যাচ্ছিল ওই হালটের বাঁকে।
একা
একজন লোক
নিজেরই ঘরে ঢুকে
কাউকে না পেয়ে—ফিরে যাচ্ছিল
০২.
দূর, তালাপের জল—সরল এবং এক ঝাড়ালো নিমগাছ রোদ হলে ওইপাড়ে ছায়া ফেলবে।
শ্যাওলার সর—হরিত্ মসৃণ ও হরিদ্রা নিমের ফল বিছানো জমি। ফলের বাইরে লাল পিঁপড়েরা ফিসফিস কথা বলছে।
একটা নিমের ফল—তালাপের জলে; জল অনন্তমুখী ছলকালো! গভীরের মাছগুলি বুদ্বুদ কথা বলছে।
ঝুলছিল আকাশ
তাতে কার ঘরপোড়া ধোঁয়া
তালাপের জলে তাই বিখণ্ড কিছু মেঘ
ভাসছিল, গভীরের মাছগুলি
ঠোকরাতে ঠোকরাতে
খাচ্ছিল তাই।
০৩.
দূরের বাদাড় হতে হঠাৎ সারসদল বাতাসে সাঁতার কাটছে।
‘দ্যাখ্ য্যান্ গলার হাঁসুলি!’ স্যাকরার বউটি বলতে গিয়েও যেন দরকারে আসল কথাটা হারালো। উঠোনে কদম ফেলে সে অতিদূর হারিয়ে গেল। মনে মনে। ঘর্মক্লান্ত দেহ—শ্যামবর্ণ; তাতে জল নুন আলাদা হয়ে ফুটছিল।
আর হাওয়ার টানে ঘাম জুড়িয়ে যেতে যেতে— চালতাগাছের তলা, ছায়ালো উঠোন।
চিরুনির দাঁতে সে
লম্বা চুল দেখে
স্বামীকে প্রশ্ন করে রোজ, ‘এসেছিল কেউ?’
০৪.
মাটির ঘইরাতে স্বর্ণ গলিয়ে সে জেনে নিচ্ছিল যেন সম্যক সোনার খনি। স্যাকরা, অথবা শিল্পী। পাশে কাসার পাত্র তাতে গুড়মুড়ি পূর্বাহ্নের। একটা নীলাভ মাছি উড়তে উড়তে তাই গুড়মুড়িতে : সাক্ষাৎ সোনার খনি—বলে মেনে নিচ্ছিল।
জানালার
কাঁচঘেঁষা আলোটুকু মুছে যেতে যেতে
বাইরে যে সন্ধ্যাটা
নামছিল ধীরে
আর
জানালাটা উঠছিল আয়না হয়ে, ক্রমশ
০৫.
ভাঙছিল নৈঋত।
বজ্রনিনাদ। কাঁপে দৃশ্যসমূহ। প্রাচীন বটের নিচে, শেকড় ছড়িয়ে গ্রাম। পৃথিবীর বয়সী ঋষি— ব্রহ্মচারণ শেষে সমস্ত প্রাণের প্রতি শিশুতোষ হাসি মেললেন।
সম্মুখে
পরপর দশটা মানুষ
রাবনের মাথা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল…