শিমুল, পূর্ববসন্তেই তুমি ফুটেছো মনের জমিনে,
হৃদয় বৃক্ষের শাখায় শাখায়। এই বসন্তে।
তোমাকে ডেকেছে হাতছানিতে উদাসী আকাশ,
অনন্তনীল শাড়ির বুকে গোল্লাছুটের প্রাণান্ত দৌড়ে
দুরন্ত বালিকার মতো ছোটা মেঘফুলেরা।
উড়ে উড়ে ওড়ার পরীস্বপ্ন মেখে।
তোমাকে ডেকেছে রাঙা বুলবুল, কাঠশালিক ও শালিকেরা
চুমুতে ও চিৎকার ডাকে, গানে গানে লেজ নাড়িয়ে।
তোমাকে ডেকেছে পরপুষ্ট, কুহুমন্দ্র, কলকণ্ঠ কোকিল
দমকা হাওয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে মধুমাখা স্বর।
ফাগুনের সবুজ ভুলে রঙিন আগুন আহ্বানে তাই
তুমি সূর্যপ্রেমের আকাঙ্ক্ষাতে আকাশমুখী।
তোমাকে ডেকেছে মধুব্রত মধুকরেরা গুনগুনিয়ে
দিয়েছো সাড়া প্রণয়-পরাগায়ন লোভে ফলের আশায়।
বসনখুলে বুকচিতিয়ে ঊর্ধ্বপানে, দিয়েছো তাদের
ভালোবাসার মিথ্যে ছলে দুঃখ ব্যাথার হুল ফুটাতে।
শিমুল, মধুবসন্ত জুড়ে তুমি কেবল উচ্চাকাঙ্ক্ষী, ঊর্ধ্বমুখী
এড়িয়ে গেছো তোমার দিকে তাকিয়ে থাকা আমায় তুমি
এড়িয়ে গেছো নিম্নভূমির সবুজ কোমল, মাটির মায়া
মনের শেকড় গেড়ে এফোর ওফোর হৃদয়ভূমি,
পত্র-কাণ্ডে রস যোগানো, প্রাণভরানো ভালোবাসা
এড়িয়ে গেছো যত্নকরে, সযতনে আমায় তুমি।
শিমুল, তবুও তোমার আশায় বিছিয়েছি বুক, মেঠোপথে
ভুল মানুষদের অবহেলায়, ভুলস্বপ্ন ভাঙার গানে
যদি পরো মুখথুবড়ে ফের কোনদিন; স্বপ্নিত উচ্চাসন ভেঙে ধুলাকণায়,
ধূসরিত মলিন বালুকাময় পথে, অবহেলায়, অযতনে।
তারচে বরং ইচ্ছে হলে পরতে পারো আমার বুকে
তোমার দুঃখের সমান গভীর আঘাতে। সইবো আমি।
শিমুল, তোমার বসন্তে, বসন্তশেষে; উত্তরবসন্ত দিনে।
১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২। ফরিদপুর।