এক টুকরো আকাশ দেখার জন্য
আমার বুক যখন আজ হুহু করে উঠলো, তখন
আমি দৌড়ে উঠি আমাদের চারতলা বাড়ির ছাদে।
সেখানে পৌঁছে দেখি
আমার উর্ধ্বমুখী দৃষ্টিসীমা ঘিরে রেখেছে
নানা প্রাসাদ, সুউচ্চ আর বিশাল।
অথচ, একসময় এই চারতলা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে
নিচের পৃথিবীটাকে মনে হতো আমার আপন রাজ্য।
কারণ, উপরে বিরাট এক আকাশ ছাড়া
আমার আর কোনো সুউচ্চ প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো না।
আর, উপর থেকে নিচে দেখা ছোট ছোট মানুষগুলোকে
আমার কল্পনার প্রজা বানিয়ে
তৈরি করতাম নানা অনুশাসন।
আমি আজ নির্ঘুম মধ্যরাতে
চারতলার কার্নিশে দাঁড়িয়ে একটু আকাশ দেখার আশায়
বুভুক্ষুর মতো আকাশে আমার চোখ তাক করলাম।
কোথাও আকাশ নেই,
আকাশ ঢেকে দিয়েছে মর্তবাসীরা।
আমি পশ্চিমাকাশে সিরিয়াসের খোঁজে তাকাতেই বুঝে গেলাম
ওখানে এই নামে কোনো নক্ষত্র নেই;
ছিলো হয়তো একসময়, এখন আর নেই।
এখন আছে নগরের এক বিরাট বিকট স্ট্রিটলাইট,
সূর্যের প্রতিদ্বন্দ্বী যেন।
পূর্বাকাশে আমি জুপিটার খুঁজি;
আকাশের যে অংশ জুপিটারের জন্য বরাদ্দ ছিলো,
সেখানে, দেখলাম, কোনো আকাশ নেই।
দাঁড়িয়ে আছে বহু চোখের এক ইটের দানব।
আমি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকাই,
ঝলসানো রুটির উপমা আমার কাছে বেখাপ্পা লাগে।
স্মৃতি উগড়ে বের হয়ে এলো
এককালে বহুব্যবহৃত আমার ছোট চার্জলাইটটির দৃশ্যকল্প;
আর, চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার আগের মুহুর্তের
টিমটিমে মৃত্যুপথযাত্রী আলোর কথা।
আমি আকাশ খুঁজতে থাকি তন্ন তন্ন করে।
কোথাও আকাশ নেই
আছে নগর;
আছে নগর-ফুসফুসের বিষাক্ত প্রশ্বাস,
যে প্রশ্বাসের অন্ধকার দুর্ভেদ্য পর্দা
ঢেকে দিয়েছে আমার আকাশ।
কোথাও আকাশ নেই।