প্রথম পাতা » গল্প » একটি ভূতের গল্প

একটি ভূতের গল্প

ghost

পাকুটিয়া বাজার এখনকার মতো অতো শহুরে ছিলো না তখন। বিদ্যুত ছিলো তখনো কিন্তু একবার গেলে আর সহজে আসত না। বিদ্যুত চলে গেলে সব অন্ধকার আর শুনশান নীরবতা। বাজারের মাঝখানে আমাদের বাসা থেকে একটু দূরে একটা জমিদার আমলের পুরাতন পরিত্যাক্ত পায়খানা ছিলো। পায়খানার চারপাশে কলাগাছ আর জঙ্গল দিয়ে ভরা। এখানে এককালে হাই স্কুল ছিলো। বি সি আর জি হাই স্কুল। পরে স্থান পরিবর্তন করে বর্তমান জায়গায় নিয়ে যায়। পায়খানার পাশে অনেক আম গাছও ছিলো। এখনো দুই একটা আছে। কিন্তু মুমূর্ষু।পায়খানাটা জমিদার আমলের নাও হতে পারে। স্কুল যখন ছিলো তখনকার সময়ের হতে পারে । কারন পায়খানাটা টিনের । মরিচা পড়া আর এখানে সেখানে ভাঙা। জমিদাররা টিনের পায়খানা দেয়ার কথা না।

বঙ্গ মিস্ত্রি নামে কাঠ মিস্ত্রি ছিলো একজন। এখনো আছে। বয়স হয়েছে এই আর কি। তাকে বঙ্গ মিস্ত্রি বলেই সবাই চিনে। আসল নাম কি কেউ মনে হয় জানে না। কারো জানার আগ্রহও নাই। আমারও নাই। তখনো অনেকে ঐ পায়খানা মাঝেসাঝে ব্যবহার করতো। আমি তখন ক্লাস ওয়ান কি টু তে পড়ি মনে হয়। বঙ্গ মিস্ত্রির একদিন অনেক রাতে নাকি পায়খানায় যেতে হয়েছিল। সে বদনা হাতে নিয়ে আগাচ্ছে । হঠাৎ খেয়াল করলো নতুন বৌ এর মতো শাড়ি পড়া একজন পায়খানা থেকে বের হলো। বঙ্গ মিস্ত্রি কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। এতো রাতে নতুন বৌ এই পায়খানায় আসার কথা না। একা একা তো আরো না। আর কেউ এর মধ্যে নতুন বিয়েও করেনি। আর বিয়ে করলেও এই পায়খানায় কেউ নতুন বৌকে আসতে দেবে না। যে কেউ বিয়ে করলে আর কিছু না পারলেও একটা পায়খানা ব্যবস্থা করে বিয়ে করবে। নতুন বৌ এক একা কেনো এই পুরাতন, মাঝেমাঝে নিতান্তই দরকার না হলে ব্যবহার করা পায়খানায় আসবে!?

নতুন বৌ এর ঘোমটা দেয়া। মুখ দেখার উপায় নাই। আর ঘোমটা না থাকলেও অন্ধকারে চেনা যেতো না। বদনা হাতে বঙ্গ মিস্ত্রি এক কোনায় দাড়িয়ে রইল। দেখি বৌ কোথায় যায়?

বাজারের গা ঘেষে পশ্চিম পাশেই খাল। খালের ঐ পাড়ে দিঘুলিয়া গ্রাম। ঐ সময় বাশের সাকো ছিলো অনেক এই পাড় থেকে ঐ পাড়ে আসা যাওয়ার জন্য। এখন তো খালই নাই বলা চলে। নতুন বৌ আস্তে আস্তে খালের দিকে আগাতে লাগলো। কিন্তু ঐদিকে তো কোন বাশের সাকো নাই! কিভাবে পার হবে?খালের পাড়ে গিয়ে নতুন বৌ ঘোমটা খুলে ফেলল। ফিরে তাকাল বঙ্গ মিস্ত্রীর দিকে। চেহারা অশরীরীয় ভয়ংকর কিছু নয়। সাধারন নতুন বৌ। কিন্তু তার পরমুহূর্তেই নতুন বৌ এর এক পা চলে গেলো খালের ঐ পাড়। নিমিষেই বর্ষাকালের ভরা খাল এক কদমে ডিঙিয়ে পাড় হয়ে গেলো বদনা হাতে নতুন বৌ।

বঙ্গ মিস্ত্রিকে পরের দিন অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেলো আম গাছের নিচে। জ্ঞান ফেরার পর সব বললো। কেউ বিশ্বাস করলো কেউ করলো না। তারপর নাকি আরও কয়েকজন নতুন বউকে দেখেছে ঐ পায়খানায় আসা যাওয়া করতে । গল্প শেষ।

“যে বৌ টপকে ভরা খাল পাড় হতে পারে সে কেনো একটা ভাল পায়খানায় গিয়ে কাজ সারতে পারবে না আমি বুঝতে পারলাম না। এরকম ক্ষমতার কাউকে পায়খানায় যাওয়ারই বা দরকার হয় কেনো! সেটাও বুঝতে পারলাম না।”

“আরে গল্প তো গল্পই!”

“Willing suspension of disbelief” এর তত্ত্ব টা ছুড়ে দেয়া যায় এখানে এসে।”

“গ্রামীন নারীদের কষ্টের রূপক হিসেবেও গল্পটিকে খনন করলে আরেকটা তত্ত্ব উদ্ধার করা যেতে পারে।”

“তত্ত্ব তত্ত্ব করে তো গল্পের ভূতই তাড়ায়ে দিলেন! তার উপর আবার পনেরো ষোল বার পায়খানা আর পায়খানা”

“তত্ত্ব দিয়ে সত্য উঠে আসলে ক্ষতি কি!”

“ক্ষতি নাই, ভূতের গল্প থেকে ভূত চলে গেলে ক্ষতি আছে।”

ভূতে বিশ্বাস করলে আর না করলেও অন্য গল্পটি নিচেই-

আরেকটা ভূতের গল্প ও কিছু ডাইগ্রেশনাল কথাবার্তা

গল্প থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *