প্রথম পাতা » গল্প » দিনাজপুরের শীত

দিনাজপুরের শীত

winter in Dinajpur

দিনাজপুরের শীত কেমন? এটা কাউকে বোঝাতে গেলে আমি আমার ছোটবেলার এক বন্ধুর বলা গল্প বলি। বন্ধু আমার স্কুলেই পড়তো। মহা খচ্চর ছিল সে।

দিনাজপুর শহরে ওদের বাসাটা ছিল মাটির দোতলা। বাসা না বলে প্রাসাদ বলাই ভালো। চারদিকে ঘর বেষ্টিত মাঝখানে আঙিনাওয়ালা দালান। ঠিক মাঝে একটা তুলসীগাছ।

এরকম মাটির দোতলা বাসা আপনি এখনো দেখতে পাবেন অনেক জায়গাতেই। এসব বাড়ির একেকটা দেয়াল প্রায় দেড় দুইফুট চওড়া। ভিতরে রডের বদলে কাঠ, বাঁশ- শতাব্দীপ্রাচীন। দো-মহলা বাড়ি বলে এগুলোকে।

এরকম এক শীতের সময় বন্ধুটি ভোর বেলায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে টয়লেটে ঢুকেছে। আগে তো সাপ্লাইয়ের পানির নল সব লোহার তৈরি ছিল। কাজ সেরে বদনায় পানি নিতে যাবে, দেখে যে নল দিয়ে পানি পড়ছে না।

তার বক্তব্য, ভোরে এতই ঠান্ডা পড়েছিল যে ট্যাংকির পানি জমে বরফে পরিণত হয়ে গেছিল। এমনকি তার মনে হচ্ছিল বদনার পানিগুলোও হালকা জমে গেছে। মুভিতে যেমন দেখা যায়, লেকের পানির উপরিভাগ হাল্কা বরফ হয়ে যায়৷

অবস্থাটা চিন্তা করেন।

পরদিন সকালে পুলিন স্যারের প্রাইভেটে এইকথা শুনে আমরা হেসেই খুন। সন্দেহ হওয়ায় ওইদিন ওকে আলাদা বেঞ্চে বসতে হয়েছিল।

winter in Dinajpur

দিনাজপুরে ঠান্ডা পড়ে, তবে লাইনের পানি জমে বরফ হওয়ার মতো ঠান্ডা নিশ্চয়ই পড়ে না। সেরকম হলে টেম্পারেচার মাইনাসে চলে যাইতো। এখনো ৩-৪ ডিগ্রির নিচে নামতে দেখি নাই।

তাছাড়া এধরনের বাড়িগুলোকে ‘ন্যাচারালি এয়ারকন্ডিশনড’ বলা হয়। দেয়ালের পুরুত্বের কারণে গরমকালে বেশ ঠান্ডা থাকে। ফ্যান চালানো লাগে না। আর শীতের সময়ে কিছুটা গরম থাকে বাইরের তুলনায়। বদনার পানি জমে যাবার কারণ নাই।

চিটাগাং শহরের প্রবর্তক মোড়ে দেখবেন এক জায়গায় লাল, নীল, সবুজ, হলুদ নানা রঙের বদনা বিক্রি হয়। লোকজন সেই বদনা কিনে নিয়ে মাজারে যায়। মানত করে।

আমরা আগে দেখতাম লোকে পিতলের বদনা হাত ধোয়ার কাজে ব্যবহার করে। কেউ কেউ পানিও খেত। কনফিউজিং ব্যাপার স্যাপার।

মানে বদনার রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার। এর শুধু একমুখী ব্যবহার চিন্তা করলে হবে না।

winter in Dinajpur

সম্প্রতি একটা কৌতুক পড়লাম। এটাও বদনা নিয়েই।

বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ’কে একজন যাত্রী চিঠি লিখেছে-

‘আপনাদের ট্রেনের অন্যসব সার্ভিসের কথা নাই’বা বললাম.. টয়লেটের বদনাটি যে শেকলে বাঁধা তা আরেকটু লম্বা রাখলে বদনাটি “মঞ্জিলে মকসুদে” সহজে পৌঁছাতে পারতো!’

নরম্যালি এসব উড়োচিঠির জবাব দেয়া হয় না। তবে চিঠির ইন্টারেস্টিং বিষয় বস্তু দেখেই কিনা এর জবাব দিয়েছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তারা লিখেছিল-

‘জনাব, বদনাটি বাঁধা ছিল, আপনি তো আর বাঁধা ছিলেন না! “মঞ্জিলে মকসুদ’কে” একটু টেনে বদনার কাছে আনলেই তো হয়ে যেত!’

গল্প থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *