প্রথম পাতা » গল্প » জমিদার বাড়ির পরী, ময়ূর এবং আমার কাকের গল্প

জমিদার বাড়ির পরী, ময়ূর এবং আমার কাকের গল্প

Pakutia Zamindar Bari Close View

আমার ছেলেবেলার গুটিকয়েক বন্ধুরা প্রথম লেখাটা পড়েছে। পড়ে আবেগে কয়েকজন রীতিমতো আহ্লাদিত। আমাকে বলেছে আরও লিখতে। এই বলাকে অনুরোধও বলা যায় আবার দুর্বল প্রকৃতির হুমকিও বলা যায়। কারণ তারা পারলে দলেবলে লক ডাউন বাড়াতে আন্দোলনে নেমে পড়ে যাতে আমি ঘরে বসে বসে লেখার সময় পাই (এখন আমার সময়ের এমনিতেও কোন খামতি নাই)। আন্দোলনে নামা থেকে আমাকে ওদের থামাতে হয়নি। ওরাই আন্দোলন থামিয়ে দিয়েছে। এক দুইজন দিয়ে তো আর আন্দোলন হয় না।

আন্দোলন থামায় আমি আনন্দিত। বেশি আনন্দিত হয়ে রাতে ঘুমাতে পারলাম না পর্যন্ত। সকাল সকাল লিখতে বসলাম। এটাকে “অন-রিকুয়েস্ট” লেখা ভেবে আগাচ্ছি আরকি। অনুরোধের তোয়াক্কা করবে না নামিদামি লেখকেরা। আমি নামিও না দামিও না। আমি করোনা পরিস্থিতিতিতে উদ্ভূত লেখক, আগেই বলেছি। যাই হউক, বাল্যবন্ধুদের ভালোবাসাময় অনুরোধ ফেলে দিয়ে “পুরান পাগলে ভাত পায় না নতুন পাগলের আমদানি” “আবার এতো ভাব” তাও আবার বাল্যবন্ধুদের সাথে, এই তকমা গায়ে লাগাতে চাই না। লেখালেখিতে নতুন পাগল হরহামেশা আসা যাওয়া করে। কিন্তু তকমাওয়ালা নতুন পাগল হওয়ার ভয় সবারই আছে মনে হয়। কেউ কেউ আবার নির্ভীক। আমি তো থালা বাসন পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনলেও আঁতকে উঠি।

এখন বলা চলে কাক ডাকা ভোর। আসলেই কাক ডেকে যাচ্ছে। ঢাকায় কাক ডাকা আর গ্রামে কাক ডাকা এক কথা নয়। স্কুলে পড়ি তখন। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠাই নিয়ম। সকালে কাক ডাকতো অনেক। আমার আম্মা কাকদের আগেই উঠে যায়। মায়েদের সকাল বিকাল রাত বলে কোন কথা নাই। কাজই হচ্ছে তাদের একমাত্র ঘড়ি ও ঘড়ির কাটা। কাক ডাকাডাকি শুনলেই আম্মা আমাকে কাক তাড়াতে বলে নিজেও কাক তাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। যে বাড়িতে বেশি কাক ডাকাডাকি করে ওই বাড়ির কারও না কারও মৃত্যু আসন্ন। এই হল ব্যস্ততার  আসল কারণ। আমিও সত্য মিথ্যার ধার না ধেরে দাড় কাক, এঁড়ে কাক পূর্ণ উদ্যমে তাড়াতে লেগে পড়তাম। মৃত্যু হাতছানি দিয়ে ডাকছে বলে কথা। তাড়ানই খেয়ে কাকেরা সহজেই চলে যেত। মৃত্যুকে তাড়িয়ে দেয়া তো দেখি দুধ ভাত! আর এখন ক্যা -ক্যা  তো দুরের কথা ,শব্দহীন করোনার ভয়ে ঘরে বসেই “ঝাও ভাত” খাচ্ছি। মৃত্যুর পয়গাম বহনকারী কাক তাড়ানো সাহসী আমি প্রতিদিন বাড়ির সব জায়গায় ব্লিচিং ছিটিয়ে বেড়াই করোনা তাড়ানোর জন্য।

কাক তাড়ানো বাদ দিয়ে এবার জমিদার বাড়ির কথায় যাওয়া যাক।

প্রতিটা জমিদার বাড়ির ছাদের উপরে দুইটা করে পরীর মূর্তি। ডানাওয়ালা পরী। ডানাকাটা না। ডানা আগেও ছিল, আজও আছে। “ভবিষ্যতে থাকবে না খসে পড়ে যাবে” এরকম লক্ষণ নাই। দুই পরীর মাঝখানে একটা ময়ূর সাপের লেজ ধরে আছে। এই পরী, সাপ, ময়ূর এর ব্যাপারটা বুঝতেই পারছেন। না বুঝতে পারলে ওই সময়ের স্থাপত্য শৈলী কেমন ছিল সে ব্যাপারে গুগলে দেখে নিতে পারেন। এখানে তার অবতারণা করার ফুরসৎ নাই। জমিদাররা কোলকাতা থেকে আগত। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর আদলে নাকি তৈরি করতে চেয়েছিলেন এই জমিদার বাড়িগুলা। আরও অনেক ইতিহাস আছে। ইতিহাস গুগল এ পাওয়া যাবে আগেই বলেছি।  

সাপের লেজধরা ময়ূরকে মাঝখানে রেখে দুই পাশে পরী শুয়ে আছে হাতের তালুতে মাথা হেলিয়ে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পরীর দিকে তাকাতে পারি নাই। পরীর দিকে তাকালে রাতে স্বপ্নে এসে আঙুল কামড় দিয়ে নিয়ে যাবে। এই ছিল পোলাপান সোজা রাখার আরেক বিদ্যা। পরীর গায়ে কাপড় ছিল কম, আজো কম। এটাই আসল রহস্য। অন্য কোন রহস্য থাকলেও থাকতে পারে, আমার জানা নাই। এসব কম -বেশির জ্ঞান নিয়ে অত আলাপ করার দরকার নাই। আজো আমাদের পোলাপান সোজা রাখতে হয় কিনা।

জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে হেটে গেলে পরীর দিকে আঙুল দিয়ে দেখানোও নিষেধ ছিল এক রকম। ওই একি ব্যাপার আঙুল কামড়ে নেবে। কেউ যদি ভুলে আঙুল দেখিয়েই ফেলত তখন নিজেকেই নিজের আঙুল কামড় দিয়ে ফাড়া কাঁটাতে হতো আর কি। কামড়ে কামড় ক্ষয়। জমিদার বাড়ির আশেপাশে বড় হওয়া ঝামেলাও আছে।

আবার চলবে –

তবে “চলবে” কিনা বুঝতে পারছি না। আন্দোলনের ভয় দেখালে চলতে পারে!!! বাল্যবন্ধু বলে কথা। ওদের কথা ফেলে দেয়া কঠিন। বস্তায় পচে যাবে এরকম লেখা লিখার জন্য আন্দোলনের অপেক্ষা করতে হয় না।

এই লেখাটি পড়ে ভালো লাগলে বা না লাগলে আগের লেখাটি পড়তে পারেন (যদি আগেই না পড়ে থাকেন) নিচের লিঙ্কে। ওই লেখাটা ভালো লাগবে তার কোন গ্যারান্টি নাই। (আত্মপ্রচার )

পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি ও আমার ছেলেবেলার গল্প

গল্প থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *