প্রথম পাতা » গল্প » তরমুজকথন

তরমুজকথন

Watermelon

হরমুজ আলী। জটিল মনের মানুষ। স্বভাব বেশি সুবিধার না। যারে তারে চড় থাপ্পর মেরে বসে হঠাৎ করেই। খুবই উগ্র মেজাজ তার। তার এক বন্ধু মরণাপন্ন হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। হরমুজের খুব শখ বন্ধুকে দেখতে যাবেন কাঁঠাল নিয়ে। সবাই আপেল কমলা নিয়ে যায়। হরমুজের শুভাকাঙ্ক্ষীরা টিপ্পনি কাটে- “কী মিয়া কাঁঠাল নিয়া কেউ রোগী দেখতে যায়? তোমার ধান্দা কী?” হরমুজ আলী সরল মনে উত্তর দেয়- “কাঁঠাল জাতীয় ফল। উপরন্তু কাঁঠালে যে কাঁটা আছে এমন জুতসই একটা ফল খুঁজতেছিলাম, বন্ধুর অসুখের পর থেকেই। কাঁঠাল দামেও সস্তা। ছোটকাল থেকেই এই মরণাপন্ন বন্ধুটা আমার খুব উপকার করছে কি না! উপকারী বন্ধুরে খাঁজকাটা কাঁঠাল দিতে পারা বড়ই আনন্দের ব্যাপার!”

কিন্তু এখন অসময়। মধুমাস আরো পরে। কাঁঠাল আসতে ঢের দেরি। হরমুজ আলী কাঁঠাল খুঁজতে গিয়ে বাঙ্গির দোকানে ঢুকে গেলো। দোকানিকে হরমুজ সব খুলে বললো। দোকানি বাঙ্গির নিচ থেকে বড় কায়দা করে বের করে আনলো একখান বিরাটাকার তরমুজ। বাঙ্গির নিচে তরমুজ রাখার কারণ জিজ্ঞেস করতেই দোকানি লালদাঁত সব কেলিয়ে দিল- “তরমুজের আর আগের দিন নাই! লুকায়ে রাখতে হয়। প্রতি কেজি সত্তর টাকা। সোনার চেয়েও তরমুজের দাম বেশি এহন। এইটা নিয়া যান। আপনের আশা অবশ্য পূরণ হইব না। কাঁটা নাই। সিলসিলা প্রকৃতির। তবে বেশ বড়। নিয়া যান। কাম হইব।”

“দাম কতো?” হরমুজ আলীর কথা শোনে দোকানি আফসোস শুরু করলো। “নেহায়েত টাকার দরকার না হলে এই জিনিস কেউ বেচে? সাইজ দেখছেন? সানাই, চাকুটা দে বাপ, ভাইরে কাইটা দেহাই। দেখছেন, লালে লাল দুনিয়া!”

ভিতরটা বেশ লাল। খালি কাঁটা না থাকার আফসোস হরমুজের ! “একটা জিনিস কাউরে দিলাম আর সে যদি টেরই না পাইল তাইলে আর কীসের গিফট! হাতে নিয়াই যেন বুঝতে পারে, জিনিস বটে!” হরমুজ ভাবছে। দাম জিজ্ঞেস করলো সে।

মিটারে তোলা হলো তরমুজ। পুরাই দশ কেজি। কত?
“বেশি না সাতশ!” হরমুজ প্রথমে বুঝে নাই। যখন কেজি সত্তর বলছিল তখনো সে বিষয়টা ধরতে পারে নাই। ভেবেছিল এক পিসের দাম সত্তর হয়তো। একটা তরমুজের দাম এই দেশে সাতশ টাকা! মাথাটা ঝিম ধরে গেলো তার। শালার রোইদও পড়ছে আজকা! খুব চড়া! মনে হয় হাশরের মাঠ!

“নিবেন না? মিষ্টি আছে। নিয়া যান একটা।” হরমুজ আলী বহু চেষ্টা করেও জুতসই কোনো কথা খু্ৃঁজে পেলো না। তার ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছিল।

“ভাই, নেন। এমন জিনিস পাইবেন না। ছোট থেকে দেখাই একটা, কম দামের ?”

হরমুজ জবাব দিল- “ছোট বড় বিষয় না। বন্ধুরে অন্যদিন দেখতে যাব। সিদ্ধান্ত বদলাইলাম। ভাই, আপনারে একটা তরমুজ দিব। আপনের পছন্দমতো একটা সাইজ বাইছা ওজন দেন।”

“কী কন আপনে? মাথা খারাপ নাকি? সানাই, বেটারে ধরতো বাপ! পাগল নাকি! সামনে আগাবি না কইলাম! তফাৎ যা! যা, যা, যা!”

হরমুজের চোখজোড়া লাল হয়। গলায় পেঁচানো গামছা কোমরে বাঁধে সে। সত্যই সে দোকানিকে তরমুজ ‘গিফট’ করতে যাচ্ছে নাকি ??

গল্প থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Sujon Hamid
সুজন হামিদ
জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৮৭ খ্রি., শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম তাওয়াকুচায়। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পারিবারিক জীবনে তিন পুত্র আরিয়ান হামিদ বর্ণ, আদনান হামিদ বর্ষ এবং আহনাফ হামিদ পূর্ণকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। একসময় থিয়েটারে যুক্ত থেকেছেন। রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয় করেছেন অনেক পথনাটকে। মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শকে লালন করেন হৃদয়ে। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের। গ্রন্থ: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞানগ্রন্থ 'বাংলাকোষ'(২০২১)।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *