প্রথম পাতা » গল্প » স্টিকার

স্টিকার

Rose

ক্লাস সিক্সে উঠলাম। সাদা শার্ট আর নেভী ব্লু প্যান্ট ওয়ালা স্কুল ড্রেস বানালাম। কিছুদিন যেতেই সাইকেলে উঠতে গিয়ে প্যান্ট এর এক জায়গায় হাটুর কাছে ছিঁড়ে গেলো। সেলাই করার পর সেলাইয়ের দাগ বুঝা যেতো একটু একটু। দুই মাসের মাথায় নতুন প্যান্ট বানানোর প্রশ্নই উঠে না। পিতৃদেবের অবস্থা বেগতিক।

মামুন নামে এক লোকের (মামুন কাক্কা বলে ডাকতাম) ঘণ্টি ঘর ছিলো পাকুটিয়া বাজারে । স্টিকার, ভিউ কার্ড, ঈদ কার্ড কসমেটিক্স সহ আর অনেক কিছু বিক্রী করতো। বর্তমানে তার বিরাট কারবার। টিনের দুই তলা দোকান দিয়েছে। ঘণ্টি ঘরের ঘন্টার টুং টাং আর নাই। নামই বা ঘণ্টি ঘর কেন কে জানে। ঘন্টাও দেখি নাই আর ঘন্টার শব্দও শুনি নাই। টঙ ঘর আর কি।

ঘণ্টি ঘরে মামুন কাক্কা এক ধরনের স্টিকার বিক্রী করতো, ইস্ত্রি দিয়ে গরম গরম চাপ দিলে কাপড়ে লেগে যেতো শক্তপোক্ত ভাবে। গোলাপ ফুল মার্কা একটা স্টিকার কিনলাম। সুলভ মূল্য। কাক্কা বলে ডাক দেই বলে কথা। ঐদিন কাক্কার সুর আরো মিহি হইল।

রঞ্জিতের ইস্ত্রির দোকান ছিলো বাজারে। রঞ্জিতের বাপের নাম নিতাই ধোপা। ছাপরা তোলা ঘরে কাপড় ইস্ত্রির দোকান। এই নিতাই ধোপা, তার স্ত্রী ও ছেলে রঞ্জিত পাগলার কিচ্ছা আরেক বিশাল কাহিনী হবে। রঞ্জিত এককালে অনেক ভালো ছাত্র ছিলো। হাতের লেখাও ভালো। আমি দেখেছি। লিখে লিখে আমাদের দেখাতেন। আমার নিজের হাতের লেখা খারাপ বলে আগ্রহ নিয়ে দেখতাম। কিছু লেখা রঞ্জিত কাকা দোকানে টানিয়েও রেখেছিল। আমরা তাকে রঞ্জিত কাকা বলে ডাকতাম। লেখাপড়া করতে করতেই মাথায় নাকি ব্যামো হলো। আবার কেউ কেউ বলে গ্রামের এক ডাক্তারের মেয়েকে ভালবাসতো। ধোপার ছেলে আর ডাক্তারের মেয়ে, হউক না হাতুড়িওয়ালা ডাক্তার, বিষয়টা গেল না। রঞ্জিত পাগলাটে হয়ে গেলো। ম্যাট্রিক পাশ করেছিল মনে হয়। টেনেটুনে। প্রথম শ্রেণী পাওয়ার কথা ছাত্রের টেনেটুনে পাশ। মাথার ব্যামো বড় ব্যামো। আমার এক স্কুল বন্ধু আরিফ। তারও একই অবস্থা হয়েছিল। সে আরেক গল্প। কষ্টের গল্প। গল্পের ভেতরে আরেক গল্প আর ঢুকালাম না। এমনিতেই এদিক সেদিক অনেক ঘোরাঘুরি। ডাইগ্রেশন।

মামুনের দোকান থেকে স্টিকার কিনলাম আর রঞ্জিতের দোকান থেকে ইস্ত্রি দিয়ে প্যান্টে লাগিয়ে নিলাম। প্যান্টে জোড়াতালি দেয়ার করবার শেষ। স্কুল এ বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলে আমি বলি এটা একটা নতুন ডিজাইন। ভাব। আসলে তো ছেঁড়া প্যান্টের সেলাই ঢাকার তালি।

ভালো ছাত্ররা বেশি ডিজাইন করলে মানুষ মন্দ ভাবে। ভালো ছাত্রদের অন্যের ভাবাভাবির মূল্য দিতে হয়। আর স্যারদের ভাবাভাবির মূল্য তো আরও বেশি দিতে হয়। ধর্মের মৌলভী স্যার হলে তো কথাই নাই। কিছুদিন যেতেই টেনেটুনে তুলে ফেললাম গোলাপ ফুলের স্টিকার। ছেঁড়া প্যান্টের সেলাই দেখা যাওয়াই ভালো। গরিব, অনেক কষ্টে চেষ্টায় মানুষ হইছে আর ভালো ছাত্র তো বটেই, এই গল্প মানুষ বেশি পছন্দ করে।

গোলাপ ফুল স্টিকার লাগানো একজন বৃত্তি পাওয়া ভালো ছাত্র হলেও মানুষ বলবে,এই তো গোল্লায় যাওয়া শুরু হইছে ।প্যান্টে গোলাপ ফুল লাগাইছে । কিছুদিন পর গোলাপ ফুল নিয়ে গ্রামেও ভালবাসা দিবস উদযাপন করবে। তারপর রঞ্জিত পাগলার মতো এক কালে ভালো ছাত্র ছিলো এরকম ইতিহাস হয়ে থাকবে। মাথার ব্যামোর জন্য না।গোলাপ ফুলের ব্যামো। এরকম ইতিহাসে স্বেচ্ছায় কেই-বা নাম লেখাতে চাইবে।

গল্প থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *