প্রথম পাতা » গল্প » সেদিন মা দিবসে

সেদিন মা দিবসে

এক.

টিউশনি বাসার আন্টি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড।

আজ থেকে বছর খানেক আগে যখন এ বাসায় টিউশনি শুরু করি তখনকার কথা।একদিন একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলো।নাম ‘পড়ন্ত বিকেলের শিশির’।আজব!এটা কেমন নাম আবার?প্রোফাইল দেখার জন্য ভেতরে গেলাম।তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না।একটা বৃত্তাকার চাকতির মতো কী একটা আছে।বেশ কষ্ট করে বুঝলাম এটা সাগরতীরে সূর্যাস্তের দৃশ্য।চাকতিটার ঠিক মাঝখানে আরবিতে আল্লাহু লেখা।দেখলাম সেটি আবার শ্যাডো করা আছে।যেহেতু প্রোফাইলে বেশি কিছু নাই,নাই মানে হয়তো আছে কিন্তু আমি দেখতে পারছি না।

ভাবলাম কোনো উটকো আইডি,ফেসবুকীয় পরিভাষায় যাকে বলে ফেইক আইডি।যাক,দিলাম ডিলিট করে।সেদিন সন্ধ্যায় পড়াতে গেলাম।অন্যদিন আন্টি নাস্তা নিয়ে আসেন,টুকটাক গল্পটল্প করেন।মেয়েটার ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা আলাপ আলোচনা করেন।কিন্তু আজ আন্টি আসলেন না।প্রতিদিন সেখানে এই সময় ভালোমন্দ নাস্তা খেয়ে পেটেরও একটা বদভ্যাস হয়ে গেছে।এই সময়টাতে ঘণ্টা বাজাতে থাকে।আমিও অপেক্ষায় থাকি আন্টি কখন আসবেন।আজ আর আন্টি আসলেন না।আধা ঘণ্টা চল্লিশ মিনিট পর ছাত্রীকে বলেই ফেল্লাম,আন্টি বাসায় নাই?

ছাত্রী ফিক করে হেসে ফেললো।তারপর হাসির শেষের দিককার কিছু অংশ হাত দিয়ে ঢেকে নিলো আর হাসির ভগ্নাংশটুকু গিলে নিয়ে বললো,বাসায় তো।আবার মুচকি মুচকি হাসলো।যৌবনের কিঞ্চিত আলোকরেখা মুখের উপর পড়িয়াছে,ফিনকি দিয়ে বারবার সেটি উপচে পড়ে।আমি সেগুলো বেশি বাড়তে দেই না।চুপচাপ আবার পড়াতে লাগলাম।ছাত্রী কানের ছাউনিটার পাশ দিয়ে একগোছা চুল এনে মুখের কাছে রাখলো।পড়ানোর মাঝখানে মাথা দুলিয়ে জ্বি জ্বি বলে।মাঝে মাঝে চুলগুলো ঠোঁটের উপরে পড়ে, ঠোঁট দিয়ে চুলের স্বাদ নেয়। তখন সে কেবল মাথা দোলায়।আমি বিষয়গুলো বেশ উপভোগ করি।অতি আবেগে বন্ধুদের সাথে বলেও ফেলেছি কিছু।সুযোগ পেলে ওরাও এখন আমাকে একটু ক্ষপিয়ে মজা লয়।

পড়ানোর ফাঁকে ছাত্রী জিজ্ঞেস করলো,ভাইয়া,আম্মু আপনাকে রিকু পাঠিয়েছিলো?

আমি চমকে গেলাম।কীসের রিকু?

ছাত্রী কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,ওহ,বুঝেন না,এফবিতে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে ছিলো কি না?

বুঝলাম এটা ওদের নিজস্ব পরিভাষা।তারা কি নিজেরা কথা বলার সময় নামগুলোকেও এ রকম নিজস্ব স্টাইলে উচ্চারণ করে কি না জানি নিা।যদি আমার নামও এ রকম উচ্চারণ করে তাহলে সারছে।সরোজ মানে সর! না না এসব কী?

যাক, ছাত্রীর দিকে তাকিয়ে বললাম,-না তো।নাম কী ওনার?

ছাত্রী আবার একটু একটু হাসছে।মোবাইলটা বের করে সাথে সাথে চেক করলাম।নতুন কোনো নোটিশ তো নেই।ছাত্রী আবার বলছে,ভাইয়া আরেকটু মনে করে দেখেন।

-ও হ্যাঁ,সকালে একটা রিকুয়েস্ট ডিলিট করেছি।কী যেন নাম দূর্বাঘাসের শিশির নাকি,না না না।‘পড়ন্ত বিকেলের শিশির’।

-ছাত্রী খুব উল্লসিত হয়ে বলে,-হ্যাঁ,হ্যাঁ,হ্যাঁ।ওইটাইতো আম্মু।আমাকে পড়াতে চাইলে তাড়াতাড়ি আবার রিকু পাঠান।

বললাম,বুঝলাম না বিষয়টা।ছাত্রী বলে,বুঝতে হবে না।আপনি এখনই রিকু দেন।আম্মু অনলাইনে আছে।

আমিও সাথে সাথে রিকুয়েস্ট পাঠালাম।সম্ভবত আন্টির ওখানে নোটিশ দেখেই ডাকলেন,

-লোপা,তোর স্যারকে চা দে তো।আমি বিজি আছি।ছাত্রী তার দৃষ্টিটাকে আমার দিকে স্থির রেখে,মাথাটাকে নাড়িয়ে দুলিয়ে বলতে লাগলো,আমার কথার প্রমাণ পেলেন? বলেই হাসতে লাগলো।উদীয়মান হাসির ফোয়ারা দেখে ভালো লাগলো।জীবনের সিজন পাল্টালে হাসিও এক সময় পাল্টে যায়।এই যে তার এখন কেবল-ই উদ্দেশ্যহীন নির্মল হাসি,জীবনের নানান ঘাতপ্রতিঘাতে একদিন কত রহম্যময়ই না হবে এসব হাসি।

সেই থেকে আন্টি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড।প্রতিদিন-ই আন্টি কিছু না কিছু দোয়া, ওজিফা শেয়ার করেন।যেদিন শুধু লাইক দিতাম সেদিন আন্টি নাস্তা দিয়ে চলে যেতেন।তেমন কথা বলতেন না।সালামের উত্তরও ঠিক মতো দিতেন না।আমি বুঝতে পারি নি ঘটনা কী।ছাত্রী-ই আবার হেসে হেসে আসল ঘটনা বলে,

-ভাইয়া আপনি আম্মুর পোস্টে লাইক দিয়েছেন।এখন থেকে কমেন্ট করবেন।রেজাল্ট হাতে হাতে পারেন।

একটু অবাকই লাগলো।বুড়া বয়সেও ফেসবুকে খ্যাতি কুড়াতে চান!

ওইদিন দুপুরে খেয়ে একটা ভাতঘুম দিতে যাবার আগে ফেসবুকে একটু ঢুঁ মারলাম। আন্টি আয়তুল কুরসি শেয়ার করেছেন।সাথে এটি আমল করার ফজিলত ও কখন কীভাবে আমল করতে হবে তাও।আমি ‘মাশাআল্লাহ দিয়ে শুরু করে বেশ লম্বা কমেন্ট করলাম।আর মনে মনে ভাবছি আজ আন্টির প্রতিক্রিয়া কেমন হয় তাই দেখবো।

মাশাআল্লাহ।আজ আন্টি নাস্তা দিতে আসলেন।বেশ হাসিখুশি।সেঁজেছেন,খোঁপায় বেলিফুলের মালা।একেবারে ফুরফুরা।নাস্তা দিয়ে চা আনতে গেলেন।

ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনা কী?তোমরা কোথাও বেড়াতে যাবে নাকি?

ছাত্রী বেশ রহস্যজনকভাবে কথাটাকে ইগনোর করলো এবং মুখটা কালো করে বলে,আপনি পড়াতে আসছেন পড়ান।

আর কথা বাড়ানোর সাহস পেলাম না।ছাত্রীর রহস্যজনক আচরণে নাস্তা খাওয়ায় মন নেই।এতদিন ভাবতাম সে কেবল কৈশোরোত্তীর্ণ একটি শিশু।আজ মনে হচ্ছে তার কাছে আমি-ই নেহাত একটা শিশু ছাড়া আর কিছু নই।

আন্টি আবার চা নিয়ে আসলেন।এসেই জিজ্ঞেস করলেন,

-কী ব্যাপার সরোজ,নাস্তা খাওনি কেন?

বললাম,আন্টি পড়াটা শেষ করে নিই।

আন্টি খুব জোর করেই বললেন,রাখোতো তোমার পড়া।এত পড়িয়ে কী হবে?এদেশে মেধার কোনো দাম আছে ?সব চোর বাটপার।মন্ত্রী আমলারা দেশটাকে লুটেকুটে খাচ্ছে।ফেসবুকে ঢুকলে মাথা ঠিক থাকে না।

বললাম,আন্টি আপনি ফেসবুকের কথা সব বিশ্বাস করেন?ফেসবুকে কি সব সত্য খবর আসে ?

আন্টি খুব জোর দিয়েই বললেন,সত্যি না হওয়ার তো কিছু নাই।

বললাম,আন্টি লুটুক আর পুটুক দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে এটাতো ঠিক।আপনার চেয়ে আপনার মেয়ে অনেক ভালো আছে না?আপনি কোথায় ছিলেন আর আপনার মেয়ে কেমন আছে?

ওনি আবার বললে লাগলেন

,-শোনো সরোজ,সেদিন দেখলাম কত হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হলো।বালিশের দাম আর আর….

বুঝলাম,তার সাথে তর্ক করে লাভ নাই।তাছাড়া এতদিনের অভিজ্ঞতায় এটা বুঝলাম তার কাছে ফেসবুকের চেয়ে বড় কোনো রেফারেন্স নাই।

আন্টি আবারও আমাকে আগের সে উপদেশটাই দিলেন।

-সরোজ,সুযোগ পেলে এদেশ থেকে চলে যাও।দেশটা শেষ,নষ্ট হয়ে গেছে।আমিতো সুযোগ পেলে কবেই চলে যেতাম।

আমার মাথায় কেবল বঙ্কিমের সে উক্তি কাজ করছে,‘মার্জারকে বোঝানো দায় হইলো।’

দুই..

ফেসবুকের কল্যাণে বুঝতে পারলাম আজ মা দিবস।সবাই মার সাথে ছবি দিচ্ছে।মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করছে।আমার মায়ের সাথে আমার কোনো ছবি নাই।মাকে ছবি তুলতে বললে মা কেমন লজ্জা পায়।লজ্জার অন্য কারণও আছে।ছবি তুলতে ভালো কাপড় লাগে,একটু সাজগোজও লাগে।এটা মা জানে।সারাদিন কাজ করে নিজের দিকে কোনো নজর নাই।তাছাড়া ছবি তুলে এত মানুষকে দেখাবো এটাও মার পছন্দ না।মার ছবি তুলতে তাই এত অনাগ্রহ।আরেকটা বিষয় ভেবে আমি মনে মনে হাসি।মা তো কোনোদিনও মুখে এনে বলতে পারবে যে সে তার ছেলেকে ভালোবাসে।আর আমি যদি কোনোদিন বলি,মা তোমাকে ভালোবাসি।মা তো লজ্জায় আর কথা-ই বলতে পারবে না।ভাববে,তার ছেলে কেমন বেশরম হয়ে গেছে।

যাক,দুপুরের দিকে একটু ফেসবুকে ঢুকেই দেখলাম আন্টি খুব সেজেগুজে বেশ কয়েকটা ছবি দিয়েছেন।বোঝা যাচ্ছে কিছু ছবি আগের।যেমন তার মায়ের সাথে যে ছবিটা আছে সেটা পুরোনো।আবার তার মেয়ে মানে আমার ছাত্রীর সাথে যে ছবিটা দিয়েছেন সেটি আজকেই তোলা।শিরোনামটা চমৎকার লাগলো।যার মর্মার্থ হলো,তিনি কেবল মা হওয়ার পরেই মায়ের অবদান বুঝতে পেরেছেন।তাই দুনিয়ার সকল মায়ের জন্যই শুভ কামনা জানিয়েছেন।জীবনের প্রথম প্রেম আর প্রথম বিদ্যা ভোলা যায় না।প্রথম প্রেমের মতো আবছা আবছা মনে থাকা বিদ্যা দিয়ে তিনি যেভাবে ক্যাপশন লিখলেন,আমি মুগ্ধ।তার প্রতিভা আমাকে ছুঁয়ে দিলো।আমিও আন্টির মা ও আন্টির মেয়ের মায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানালাম।রত্নগর্ভা দুই মা-সহ দুনিয়ার সব মাকে আন্টির পোস্টের মারফর শুভ কামনা জানালাম।

সন্ধ্যায় যথারীতি পড়াতে গেলাম।আন্টি আজও সাজুগুজু করে আছেন।আন্টি সাজলে ছাত্রী বিরক্ত হয়,এটা ওইদিন দেখলাম।তবে আজ ছাত্রীও ফুরফুরা মেজাজে আছে।

আমি বসতে না বসতেই বললো,ভাইয়া আপনার মোবাইলটা বের করেন।জিজ্ঞেস করলাম,কেন?-আহা,বের করেন না।এত কেন কেন করছেন কেন?

অনুরোধে ঢেঁকি গেলার মতো করে মোবাইলটা বের করলাম।ছাত্রী খুব ভণিতা করে বলছে,দেখেনতো নতুন কেউ কোনো রিকু পাঠিয়েছে কি না?

বললাম,দেখছি।আর শোনো,আমার সামনে কোনোদিন ফেবু,রিকু টাইপের শব্দ উচ্চারণ করবা না।এগুলা বিকৃতি।বিকৃতি কখনো আধুনিকতা নয়,স্মার্টনেসও নয়।পরিমার্জিত ও পরিশীলিত এক জিনিস আর বিকৃতি অন্য জিনিস।ছাত্রী চুপ করে বসে রইলো।মনে হয় এমনটা আশা করে নি।

নোটিশে দেখলাম নতুন একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট।ইংরেজিতে লেখা নাম।দুই তিনবার চেষ্টা করে অতিন্দ্রীলা,অ..লা,পারলাম না,নামটাকে উচ্চারণ করতে পারলাম না।প্রোফাইল লক করা।প্রোফাইল পিকচারটা বোঝার চেষ্টা করলাম।অল্প বয়সী অর্ধনগ্ন একটা মেয়ের সাথে একটা ছেলে একটা ছাতার নিচে বৃষ্টির ভেতর হাঁটছে টাইপের একটা কার্টুন ।

জিজ্ঞেস করলাম কার্টুনটা তুমি?সে কোনো উত্তর দেয় নি।দিলাম ডিলিট করে।

বিড়বিড় করে বললাম,নিজের নাম,ছবি এসব ব্যবহার করতে না পারলে ফেসবুক ব্যবহার করো কেন?আবার লক করে রাখো এটা কেমন ভদ্রতা?শোনো,পর্দা মানুষকে যেমন সেইফ করে আবার আড়ালও করে।

আন্টি নাস্তা নিয়ে আসলেন।বললেন,আজ সব খেতে হবে।আমি এখানে বসে থাকবো।হেসে বললাম,ঠিক আছে।

ভাবছি, এরপর এ ছাত্রী আমার কাছে পড়বে না নিশ্চিত।শিক্ষককে হাজারবার অপমান করতে পারা যায়,কথায় কথায় চাকরি যায়।ছাত্রীর মর্জির উপর টিউশন থাকা না থাকা নির্ভর করে।ভাবছি,প্রলয় যখন আসছে,সবই ধ্বংস হোক।আন্টি চা আনতে গেলেন।

ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম,এতদিন তোমাদের বাসায় পড়াতে আসলাম,তোমার দাদাদাদিকে কোনোদিন আসতে দেখিনি।

ছাত্রী প্রচণ্ড অভিমান করে বললো,আপনার সাথে কথা নাই।আপনি আমাকে অনেক হার্ট করে কথা বলেছেন।

বললাম,সরি।একটু রেগে গিয়েছিলাম।আর এভাবে বলবো না।

জানি এ মেয়ে কথা বলতে না পারলে আর কথার ফাঁকে ফাঁকে ফিকফিক করে হাসতে না পারলে মারা যাবে।

আমার কথা শেষ না হতেই ছাত্রী বলে ফেললো,দাদাকে আপনি কোথায় দেখবেন?আমিই তো দেখি নি।

-মানে?

-মানে ওনি নাকি বাবার অল্প বয়সেই মারা যায়।

-আর তোমার দাদি কোথায় থাকে?

-জানি না।

-কেন?

-কেন আবার কী।শুনেছি আমি যখন অনেক ছোট তখন এ্রখানে এসেছিলো।আম্মুর সাথে নাকি ঝগড়া করে চলে গেছে।

-এখন কোথাায় থাকে তোমরা জানো না?

-আমরা কীভাবে জানবো? বলে একটু অভাবনীয় ভঙ্গিতে মাথার দুইপাশের এলোচুলকে একপাশে নিয়ে আসলো।কাউকে বিমোহিত করার অনিচ্ছুক প্রয়াস হতে পারে।

-তোমার দাদার বাড়ি কোথায়?তোমার বাবার ভাই কয়জন?

-শুনছি লক্ষ্মীপুর।আমি কখনো যাই নি।আব্বুরতো নাকি আর কোনো ভাইবোন নাই।

আমারতো আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা।জিজ্ঞেস করলাম,তোমার বাবাও জানে না তোমার দাদু কোথায়?

-সেটা তার বিষয়।তার মায়ের খোঁজ রাখাটা তার ব্যাপার।এতে আমাদের এত মাথাব্যথা নাই।

জিজ্ঞেস করলাম,তোমার কখনো মনে হয় না খোঁজ নেওয়া উচিত?

সে এ ব্যাপারে তার অধিক কথা বলতে রাজি নয়।বয়স কম হতে পারে।এ ব্যাপারে পাকা খেলোয়াড়ই মনে হলো।টাকা দিয়ে টিচারেএনেছ শিখার জন্য,এসব শোনার জন্য নয়।আর বেশি না বলি।

আমি কল্পনা করছি একজন বৃদ্ধা রেলস্টেশনে অথবা বাসস্টেশনে অথবা মজুচৌধুরী লঞ্চঘাটে ভিক্ষা করছে।অথবা বহুত আগে মারা গেছে।তার একমাত্র ছেলে তাকে কবরটাও দেয় নি।আবার ভাবছি আমিও ভুল হতে পারি।তিনি অনেক ভালো আছেন হয়তো।

এতক্ষণ পরে মনে পড়লো আন্টি চা আনতে গিয়েছিলেন।আর আসেননি।অথবা এসেছিলেন,দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে ছিলেন।সব শুনে আমাকে আর চা দেওয়ার রুচি-অভিরুচি কিছুই ছিলো না।তার মানে কাল থেকে চাকরি নট।

তিন..

রাতে শুয়ে ছিলাম।মনটা খারাপ।টিউশনিটা গেলো।অবশ্য গেছে কিনা তাও জানি না।যা হোক,কাল আর যাবো না।ফোন দিলে যাবো।না হলে যাবো না।এটাই ফাইনাল।এসবই ভাবনায় খেলা করছে।টিউশনিটা গেলে চলবো কেমনে তাও ভাবছি।

এমন সময় লিনা ফোন করলো।

-তোমার সমস্যাটা কী বলতো? সন্ধ্যার পর থেকে একটা ফোন নাই,এতবার মেসেঞ্জারে নক করলাম,কোনো উত্তর নাই।ভালো না লাগলে বলো আর ডিস্টার্ব করবো না।মনে হলো এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললো।আমি কিছুই বলার সুযোগ পেলাম না।লাইন কেটে গেলো।

ভালোবাসা কোমায় চলে গেছে।তাকে বাঁচাতে বারবার ফোন করছি,কিন্তু পাত্তা পাচ্ছিলাম না।আবার মেসেঞ্জারে মাফ চাওয়ার পালা।বাকিগুলা আর না বলি।আমরা আমরাইতো।বন্ধু আরমানের কথাই ঠিক।যাকে ভালোবাসিস তার কাছে কোটিবার মাফ চাইলেও ছোট হওয়ার কিছু নাই।এই তত্ত্বই শেষ ভরসা।তাকে ফেরাতে পারলাম।

লিখলাম,এবার চলো আসল কথা বলি।

লিনা রিপ্লাই দিলো,-আসল কথা কোনটা?বরফ গলতে শুরু করেছে।এখন আস্তে আস্তে তাপ বাড়াতে হবে।

লিখলাম,আজ টিউশনির বাসায় কী হলো জানো?সাথে সাথে আবার দৃশ্যপট পাল্টে গেলো।প্রথমে অ্যাংরি রিএ্যাক্ট আসলো।তারপর আসল লেখা।তোমার খবিশ ছাত্রী আর তার মাকে নিয়ে কিছু লিখতে নিষেধ করি নি?মনে থাকে না কেন?বাই।

আবার আরমানতত্ত্ব প্রয়োগ করছি।ডাবল এক্সপেরিমেন্ট করছি।কাজ হচ্ছে না।আরমানতত্ত্বের উপর আমার অবিচল যে আস্থা,তা দেখলে আরমান নিজেও ভড়কে যেতো।অবশেষে আরমানতত্ত্বের জয় হলো।

ততক্ষণে লম্বা করে লিখলাম টিউশনি বাসার আজকের কাহিনি।শেষ প্যারায় লিখলাম,আসলে বাচ্চারা যদি বড় হওযার পথে বুড়ো মানুষ না দেখে তাহলে পিতামাতা যখন বুড়া হবে তখন তারাও বুড়া মানুষকে অবাঞ্চিত মনে করবে।বাস্তবেও তাই হচ্ছে।সবাইতো গৌতমবুদ্ধ নয় যে বুড়া মানুষ দেখলেই হৃদয় কেঁপে উঠবে।

এতবড় মেসেজ তার পড়ার কথা নয়।অন্তত,আমি তাকে যতটুকু চিনি তাতে হলফ করে এটা বলা যায়।তাতে যদি আমার ভয়াবহ খারাপ কিছুও লিখি তাও না।মনে হলো আমার ধারণাই ঠিক।

তার উত্তর আসলো,আমার কিছু ভালো লাগছে না।তিুমি একটা চাকরি জোগাড় করো।আমরা বিয়ে করে ফেলবো।একরাতে বহুত মাফ চাইছি।আর মাফ চাইতে পারবো না।তোমার কথাই ঠিক,লিনা।

আমিও লিখলাম,চেষ্টা তো করছি।আশা করি হয়ে যাবে।

তার এবার সুর আরও নরম।লিখলো,আরও ভালোভাবে চেষ্টা করো।

রিপ্লাই দিলাম,ওকে জান।তাতে সে লাভ রিএ্যাক্ট দিলো।

সে আবার লিখলো,বিয়ের পর আমরা একটা ছোট্ট বাসা নেবো।

আমার রিপ্লাই,ছোট্ট বাসা কেন?

তার উত্তর,শুধু তুমি আর আমি।আমরা বাসায় আর কোনো থার্ডপারসন এলাউ করবো না।রিপ্লাই দিলাম,থার্ডপারসন কথাটা ঠিক ক্লিয়ার না।তবে আমিও কোনো থার্ড পারসন এলাউ করবো না।আমি ফার্স্ট পারসন নিয়েই থাকবো।

সে কেনো আর কোনো জবাব দেয় নি জানি না।**

গল্প থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *