মনীষী ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা তাঁর প্রগাঢ় পাণ্ডিত্যের জন্য অল্পবয়সে পেয়েছিলেন ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি। উপমহাদেশে তিনি ছিলেন ঋষিতুল্য মহামনীষী। বিশেষ করে বিধবা হিন্দু নারীদের পিতৃত্বের দায় নিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন তাদের মুক্তিদাতা, ত্রাতা। বিধবা বিবাহ নিয়ে বিস্তর আন্দোলন করে কট্টর হিন্দুদের কাছে তিনি ব্যাপক সমালোচিত হন। অনেক জায়গায় তিনি বাক-আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। অনেকে করেছেন অপমান, অপদস্ত। বহুবিবাহ নিয়েও তিনি প্রচুর কাজ করে গেছেন। বহুবিবাহ বন্ধে এবং বিধবা বিবাহ প্রচলনে তাঁর আপসহীন সংগ্রাম শেষতক সফল হয়। নিজ পুত্রের সাথে এক বিধবার বিয়ে দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেন। উপমহাদেশে আইন জারি হয় বিধবা বিবাহের। তৃপ্ত হয় বিদ্যাসাগরের মন-প্রাণ।
এ আন্দোলনে কারো কারো ব্যক্তিগত রোষের শিকার হন বিদ্যাসাগর। উপমহাদেশের প্রথম দুজন গ্রাজুয়েটের একজন বঙ্কিমচন্দ্র। বঙ্কিম বিএ পরীক্ষায় প্রথমবার ফেল করেন। খাতা দেখেছিলেন বিদ্যাসাগর। ১৪ নম্বর গ্রেস দিয়ে পরে তাঁকে পাশ করানো হয়। বিদ্যাসাগরের প্রতি বঙ্কিমের মনে সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড বিদ্বেষ। এই বিদ্বেষ তিনি আমৃত্যু লালন করেন। বিদ্যাসাগরের যেকোনো আন্দোলনে তিনি সর্বাত্মক বিরোধিতা করেন। বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ নিয়ে আন্দোলন করছেন এমন সময় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বঙ্কিম লিখলেন ‘বিষবৃক্ষ’ উপন্যাস। উপন্যাসটি রক্ষণশীল হিন্দুদের কাছে সমাদৃত হলেও বিধবা নারীর কাছে এটি অগ্নিদেবকে উপহার দেওয়ার লাকড়িতুল্য ছাড়া আর কিছু নয়। উপন্যাসটি হয়ে উঠলো ধর্ম প্রচারের কল। উপন্যাসটি হারালো কালোত্তীর্ণ হওয়ার মর্যাদা। বঙ্কিমের অন্য লেখাগুলো যতটা হৃদয়গ্রাহী হয়েছে এ উপন্যাসটি ততটাই নিগৃহীত হয়েছে। এর কারণ হলো অসূয়াবিষ! এ হিংসা একজন শিক্ষকের সাথে একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের। একজন অহঙ্কারী প্রশাসকের সাথে একজন মনীষী শিক্ষকের এ দ্বন্দ্ব চিরায়ত সত্য। এতে বিদ্যাসাগরের কিছুমাত্র ক্ষতি হয়নি, বঙ্কিম হারিয়েছেন তাঁর সৃষ্টির তেজ ও গ্রহণযোগ্যতা।
উপরের একজন শিক্ষক ও একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের দ্বন্দ্বের এ গল্পটির সাথে আমার লেখার মূল বক্তব্যের কোনো সাদৃশ্য বা যোগসাজশ নেই। তাই লেখাটির নাম ‘ধান ভানতে শিবের গীত!’ আমার লেখার উদ্দেশ্য শিক্ষা ক্যাডারের কর্মবিরতি প্রসঙ্গ :
সারাদেশের সরকারি কলেজগুলো আজ তিনদিন প্রাণহীন নিথর, নিষ্পন্দ। কর্মমুখরতার বিপরীতে ১৫ হাজার ক্যাডার সদস্য কর্মহীন হয়ে আন্দোলন করছেন তাদের যৌক্তিক, ন্যায্য পাওনা বুঝে নেওয়ার জন্য।
কার ব্যক্তিগত রোষানলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে? জনগণ যেহেতু সকল ক্ষমতার উৎস সেহেতু একদিন তাদের এ প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।