প্রথম পাতা » শিক্ষা » শ্রীহীন সৃজনশীল!

শ্রীহীন সৃজনশীল!

creative question

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা হইল গিয়া আপনের গিনিপিগের মতন। যখন যার যা মন চায় তা-ই শিক্ষায় হান্দাইয়া দেয়। গবেষণা নাই, প্রশিক্ষণ নাই কিন্তু আজাইরা ব্যয় আছে প্রচ্চুর। আর আছে ব্যয়োত্তর ভাউচার ফর্মুলা ! উপজেলার সরকারি কলেজের স্যারদের প্রধান কাজ ভাউচার করা শিখন। প্রিন্সিপাল স্যাররে অডিট থেইকা বাঁচানোর নানান ডামিটামি শিখাই উপজেলার কলেজ শিক্ষককুলের মূল (?) কাজ! বিসিএস হইলে হারাজীবনে চাইরমাসের একটা ট্রেনিং আছে। বেসরকারি হইলে নাই। এইদেশের হাইস্কুলগুলা একবুক জ্বালা নিয়া খাড়ায়া আছে। প্রাইমারি স্কুল আমাদের এলাকায় ‘পুনাইমারি স্কুল’ নামে পরিচিত। পুনাই মানে পোলাপাইন!

এইদেশে ঢাকঢোল পিটাইয়া সৃজনশীলের চালান আইল। বঙ্গদেশে ব্যাঙের চাইতে টিচারের সংখ্যা বেশি। এদের মইদ্যে আকাইম্মা চিটারও কম নাই! তো এতো জনরে প্রশিক্ষণ দেওয়া সরকারের কম্ম না! মাথা গুইনা বিশ পঞ্চাশজন যারা সৃজনশীল শিইখা আসলেন তারা আবার স্যারদের স্যার। তিনারা ক্লাসেফ্লাসে যান না! ফলে সৃজনশীলের অন্ধকারে পড়ে থাকল এইদেশের মাস্টাররা, পোলাপাইনরাও! এইদেশের পোলাপাইন আবার বিশ্বচালাক। তারা অচিরেই সৃজনশীলের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আবিষ্কার করল। প্রশ্নের মইদ্যেই উত্তর পাইয়া তারা পরীক্ষার আগের রাইতেও বগল বাজাইতে শুরু করল। পরেরদিন উদ্দীপকের আগা-পাছা আর মাঞ্জা মাইরা উত্তর কইরা আসে। রেজাল্টের পর বেবাগতে পাশ দেয়! বুঝা গেলো, পড়ালেখার আর দরকার নাই! হারাবছর চিল কর। এই জাতি আগামি বিশ বছরের মইদ্যে চিলজাতিতে পরিণত হইবার পারে! আল্লাহ মাফ কর।

একবার এক স্কুলের বিজ্ঞান বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্ন আর উত্তর দেইখা টাস্কি খাইছিলাম। উদ্দীপকে বলা হইল :

“অন্ধকার রাতে রহিমকে সাপে কেটেছে। কয়েকজন এলো সাপটিকে মারতে। রহিমের দাদু সাপটিকে মারতে নিষেধ করলেন।”

গ নম্বরে প্রশ্ন হলো : রহিমের দাদু সাপটিকে মারতে নিষেধ করলেন কেন?

কয়েকজনের উত্তর ছিল : সাপের তো কোনো দোষ নেই। তাই সাপ মারতে নিষেধ করলেন। এরা পাইল এ গ্রেড!

যারা এ প্লাস পাইল তাদের উত্তর : সাপটিকে মারলে বিষ নামাবে কে? তাই দাদু সাপটিকে মারতে নিষেধ করলেন।

‘বেদের মেয়ে জোছনা’ আর ‘আলিফ লায়লা’ দেখে বড় হওয়া এইদেশের মানুষজন শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়া জাতিকে ফেলেছে দুর্বিপাকে! গলায় মাদুলি, তাবিজপড়া লোকজন বিজ্ঞান পড়াইলে সাপে বিষ না নামাইয়া যাইব কই?

এরা রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য পড়ায় আর নাউজুবিল্লাহ পড়তে পড়তে ক্লাস থেকে বের হয়! নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ পড়ে রামনাম জপে আর বুদ হয় বঙ্কিমে! সেক্যুলারিজমের গোষ্ঠী উদ্ধারকারী লোকজন সাহিত্য পাঠ করায় দরজা জানালা বন্ধ কইরা। মনের দরজা জানালা না খুইলা দিলে শিক্ষার আলো মনে ঢুকে না, সাহিত্যের আলো তো আরো দূরের ব্যাপার।

সৃজনশীলের একটা মহৎ উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু কাজে লাগে নাই। এই বিষয়টা সম্পর্কে একযুগ পরেও সবার মাঝেই আছে ধুয়াশা। এখনো অনেক শিক্ষকই প্রশ্ন করতে পারে না। কেউ কেউ আবার প্রশ্নের মইদ্যে এমন কিছু অপকৌশল করে পুরা জাতি যেন নড়েচড়ে ওঠে। এইবার ঢাকা বোর্ডের এইচএসসি বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উস্কানির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল আছেন। তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলেছেন। এ বিষয়ে আর কিছু বলব না।

তবে এ প্রশ্নটি পড়ে বুঝা গেলো ধর্মের আগাছা শুধু মুসলমানদের মধ্যেই নাই। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর আরেকটা উপন্যাস লেখার প্রয়োজন ছিল। ‘লালসালু’র সমান্তরাল এ উপন্যাসটির নাম কী হতো কে জানে?

শিক্ষা থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *