নামটা ধার করা। আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ স্যারের একটা বইয়ের নাম থেকে শিরোনামটা নেওয়া। এরচেয়ে ভালো নাম এ লেখাটার জন্য আর হয় না। কয়েকদিন থেকেই মনস্থির করছি ফেসবুক থেকে সাময়িক বিদায় নেব। ফেসবুকের ভবিষ্যত আমি বুঝে গেছি। এখানে পড়ে থাকার কোনো মানে নেই। যেকোনো সময়- বিদায়।
ফেসবুকে লিখব না। এটাও ঠিক করেছি। ফেসবুক আসলে কোনো প্রচারমাধ্যম না। এখানে ঘি আর ঘোল সবই এক। এটা ফেস দেখানোর একটা জায়গামাত্র। ফেসও তেমন সুন্দর না। দেখাবো কী?
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত আছি প্রায় বারো বছর। এক যুগ তেমন বেশি না হলেও একেবারে কমও নয়। এই বারো বছরে অসংখ্য শিক্ষার্থী পেয়েছি। তাদের জীবনের বিকাশে তেমন কিছু যোগ করতে পেরেছি বলে মনে হয় না। কিন্তু চেষ্টা করেছি অজপাড়াগা থেকে ওঠে আসা ছেলে মেয়েদের ভাষাটা যেন প্রমিত হয়। ওদের অনেকেই প্যান্ট পরতে পারে না ঠিকমতো। এমন ছেলেদেরও চেষ্টা করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পৌঁছে দেওয়ার। কথা আটকে যেতো, সার্ট প্যান্টের কম্বিনেশন জানত না। ভার্সিটিতে এসেই আবার বান্ধবিও জুটল কয়েকটা। ফেসবুকে ফেসের সয়লাব। তারপর তার হঠাৎ মনে হলো ধর্মের কথা। সে পড়ে সাহিত্যে! নিশ্চিত জাহান্নাম। তার বিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। নাস্তিক বুঝি হলো এবার। আগেই বলেছিল মানুষ বাংলা পড়লে ‘হামিদ স্যার’ হয়! ইশশশশশশশ…
এদেশের ছেলেমেয়েরা বুঝে ‘লালসালু’ মানে ইসলাম বিদ্বেষ। ওয়ালীউল্লাহ ছিলেন ইসলামের শত্রু! রবীন্দ্রনাথ বিধর্মী! নজরুল কার্যত কাফের! গল্পগুলোয় ছেলেমেয়েদের লদকালদকি! কবিতায় খালি রামরাবণশিবলক্ষ্মণ! এদের ক্লাসে বাংলা পড়াতে গেলে কাছা শক্ত করে যেতে হয়। বেকাপ ভালো না থাকলে মিছিলমিটিং হবে, মাইর হবে, হাজতবাস নিশ্চিত!
দেশে এখন শস্যের চেয়ে ডাবল টুপি, ধর্মের আগাছা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার সামনে বসে থাকা ছেলেমেয়েগুলো প্রচণ্ডরকম প্রতিক্রিয়াশীল। এরা চরমতম সাম্প্রদায়িক। কিন্তু এসব বলে লাভ নেই। দেশ এখন প্রবল অন্ধকারের দিকেই ধাবিত। কোথাও আলো নেই। কারণ আলোতে ডিজিটাল কাজ করে না। চাই অন্ধকার, আরো গাঢ়তর অন্ধকার। মনিটরটা চকচক করে উঠুক। আত্মকেন্দ্রিকতা আমাদের গ্রাস করুক। আমরা প্রবেশ করি অন্ধকারে।
নড়াইলের কালীদাস পুকুর বা ট্যাংক কী করে লালমিয়া পুকুর হয় এদেশে এখন এগুলো আর আলোচনার বিষয় না। এমনই হওয়ার কথা, এমনই হচ্ছে, আরো হবে…। জাস্ট ওয়েট।
আমিতো ক্লাসে মানুষকে ভালোবাসার কথাই বলেছি। সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে কী করে মহানুভবতা অর্জন করে জীবনকে বিকশিত করা যায় সেকথাগুলোই তো বলেছি বারো বছর। চণ্ডীদাস-লালন-রবীন্দ্রনাথ-নজরুলরা তো মানবতার গানই গেয়েছেন সারাটা জীবন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে খালি মানুষের চাষ হয় না, সেখানে যে গরুদের চাষও হয় এখন থেকে আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারব। গরু বলাটা ভুল হলো। গরু উগ্রবাদী ধার্মিক না। কেউ কেউ তারচেয়েও ভয়ঙ্কর হয়! তাদেরকে উগ্রবাদী পশু বলা উচিত।