বিগত জীবনে দুইবার মাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। প্রথমবার ২০০৫ সালে ভর্তি পরীক্ষার জন্য। কিন্তু সম্ভবত পরীক্ষার আগেই ঢাবির রেজাল্ট হয়ে গিয়েছিল। যেহেতু চান্স পেয়েছি তাই পরীক্ষা দিতে যাওয়ার কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয়টি দেখে আসা। আমার গ্রামে পাহাড় আছে। তাই বন-জঙ্গল নিয়ে আমার তেমন আদিখ্যেতা নেই। আমার কাছে ক্যাম্পাসটি ভালো লাগলো না। আমি খুশি মনে ফিরে এলাম নগরে।
২০১২ সালে আমার স্নাতকোত্তর, বিয়ে সম্পন্ন হলো। সংসার জীবনের চেয়ে চাকরি জীবনে প্রবেশ দুরূহ ব্যাপার। চাকরির পরীক্ষা দিতে এখানে সেখানে যাই। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাবিদরা একত্র হন। ঢাবি, জাবি, জবি, চবি সবই একপালের গোদা। হালকা আলাপ হয়। চবি, জবি বিচ্ছিন্নতাবাদে আক্রান্ত। ঢাবির অহংকার তুঙ্গে। জাবির পোলাপাইন দেখলে মেজাজ খারাপ হয়। কোনো রকম দুইজন এক হলে মনে হয় জগতে এই দুজন ছাড়া আর কেউ নেই! পৃথিবীটা জাবিয়ান ফেডারেশনের। বাকিরা ভাড়া থাকি। সব জায়গায় মারাত্মক ইজম। অফিসের বস হোক আর পেটি অফিসার হোক এরা এক জায়গায় সব এক। গল্প, হাসি, তামশায় বাকিরা কিঞ্চিত শরমিন্দা, উপদ্রব মনে হয়। মনে মনে ভাবতাম এগুলো কি আন্তরিকতা নাকি আঞ্চলিকতা!
চাকরিতে প্রবেশের পর কয়েকজন জাবিয়ান সহকর্মী পেয়েছিলাম। এখনো আছে বৈকি! তবে ফেলে আসা মানুষগুলোর সকলেই আমার জীবনে পাওয়া সেরাদের কয়েকজন। তাদের মেধা, প্রজ্ঞা, আন্তরিকতা, কাছে টানার সম্মোহন শক্তি অসাধারণ। আপনি কিছুদিন মিশলে ক্যাম্পাসের কয়েকটি হল সম্পর্কে বিস্তর ধারণা পাবেন। ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে ধারণা পাবেন। ক্যাম্পাসটা আপনারও আপন মনে হবে। তারপর আপনি একদিন ছুটবেন পাখি দেখার অজুহাতে আল বেরুনী কিংবা মীর মশাররফ হলের দেখা পেতে! আপনি যাবেন নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের বকুলতলা দেখতে, বনানী আর বৃষ্টি দেখতে!
আমার এম.ফিল. ভাইভায় এলেন অনিরুদ্ধ কাহালী স্যার। চমৎকার মানুষ। সুন্দর পরামর্শ দিলেন। বিসিএসের ভাইভায় আমার বিষয়-বিশেষজ্ঞ আবু দায়েন স্যার। আমার ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখলেন। আমি চাকরি পেলাম।
২০১৯ এ এফিটিসি করতে গিয়ে পেলাম আমার রুমমেট এক জাবিয়ান। তারপর তো ইতিহাস। একদিন আমাকেও যেতে হলো পাখি দেখতে…!
জীবনে একবার হলেও কোনো না কোনো ভাবে আপনি জাবিয়ানের প্রেমে পড়বেন। বাঙালি হিসেবে এটি আপনার নিয়তি- এটা ভেবেই আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে!
আজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জন্মদিবস। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বব্যাপী। শুভকামনা নিরন্তর।