প্রথম পাতা » শিক্ষা » ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতার ভুল পাঠ (!)

‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতার ভুল পাঠ (!)

Status of teacher

এদেশে শিক্ষকরা বেশি কথা বলে! হুমায়ূন আহমেদের নাটক ‘হাবলঙ্গের বাজার’ নাটকটি যারা দেখেছেন তারা এর মর্ম উপলব্ধি করতে পারবেন। একজন শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে জাহিদ হাসান ‘আপনি বেশি কথা বলেন’ উক্তিটি করেন। অভিনেতা ফারুক মুক্তিযোদ্ধার ভূমিকায় বন্দুক হাতে তাড়া করেন মাহফুজকে। এক পর্যায়ে মাহফুজের সঙ্গী হন শিক্ষক মহোদয়! একটা চমৎকার দাবুড়ের আয়োজন সম্পন্ন হয়! এদেশের শিক্ষক সমাজ জন্মাবধি দৌঁড়ের ওপর থাকেন। নজরুলের জীবনে তেমন কোনো শিক্ষকের প্রভাব নেই। রবীন্দ্রনাথের গৃহশিক্ষকরা আসতেন ভাঙা ছাতা মাথায় দিয়ে! শিক্ষকরা মহান হবেন কার লেখায়?

বাংলাদেশে অনেক দিবস পালন করা হয়। এসব দিবস পালনের গুরু দায়িত্ব থাকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর। কেউ আগ্রহ কেউবা বিরক্তি নিয়ে এসব দিবস পালন করে থাকেন। আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বাংলাদেশে সম্ভবত প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে এ দিনটি পালন করা হলো। বাংলাদেশের শিক্ষকদের জন্যও একটি দিন সংরক্ষিত হলো। সংরক্ষিত ব্যবস্থায় আমার বরাবরই আস্থা কম। অরক্ষিত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে সংরক্ষণের বিশেষ প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তবু এদেশের শিক্ষকমণ্ডলী একটা বিশেষ দিন পেলো। শিক্ষকতা পেশায় এমনিতেই তেজ কম। এদেশের শিক্ষকরা মেন্দামার্কা। ম্যারম্যারা জীবন তাদের। এখন থেকে একদিন তারা তেজ দেখাবেন। জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিবেন। কেউ কেউ দাবির ফিরিস্তি তুলবেন। কেউ কেউ কাঁদবেন। কেউ কেউ ‘শিক্ষকতা মহান পেশা’ বলে দাঁতে দাঁত কামড়ে পোড়াবেগুন হয়ে বাড়ি ফিরবেন। অনেকে বাদশাহ আলমগীরকে খুঁজবেন প্রতিষ্ঠানের আশে পাশে। আসলে তিনি পাবেন না। কারণ কাজী কাদের নেওয়াজ একটা ভুয়া কবিতা লিখে পগারপার! দিল্লির মৌলবির পায়ে হাত দিয়ে ময়লা সাফ করে দেয়নি বলে বাদশাহ তাঁর পোলার বিচার করতে বলছিলেন! বিচার তিনিও তো করতে পারতেন। পোলার কানের নিচে একটা কষে দিলেই তো হতো! তা না করে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মৌলবিকে! ‘আপনি কী শিখাইলেন মিয়া?’ দুনিয়ার সব শিক্ষা কি শিক্ষকই শিখাবে? যাকে শিখাবে সে কি শেখার মানসিকতা নিয়ে আসছে কি না সেটা তো পরিবারকেই নিশ্চিত করতে হবে। একজন শিশুর প্রথম প্রতিষ্ঠানতো পরিবার। পরিবার থেকে একটি শিশু কী শিখছে তার দায় বাদশাহ আলমগীর নেননি। বাদশাহ আলমগীর আরেকটা বিষয়ে মনোযোগ দেননি। তা হলো- মৌলবির পা ডলে ধোয়ার দরকার পড়লো কেন? মৌলবি তো রাজদরবারে থাকতেন। জায়গির মাস্টার! তার পায়ে এতো ময়লা লাগার কারণ কী? মৌলবি কি বাদশাহর ছেলেকে পড়ানোর পাশাপাশি ক্ষেতকাম করতেন কি না আমার সন্দেহ হয়!

আরেকটা বিষয়ে বাদশাহ যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারতেন। বাদশাহর কত দাসদাসী! মৌলবির জন্য একজনকে সেট করে দিলেও তো মৌলবির পা ডলাডলি করে দিতো! হুদাই পোলারে বিপদে ফেলার দরকার কী? মৌলবির বেতন দশগুণ বাড়িয়ে দিলেও সমস্যার সমাধান হতে পারতো! পেটে খেলে নাকি পিঠে সয়! টাকায় করে কাম হয় মর্দের নাম! বাদশাহ মহোদয় মৌলবির সুযোগ সুবিধা না বাড়িয়ে চটকদার কিছু কথা বলেছেন আর মৌলবির চোখে পানি এসে গেছে! ‘শিক্ষকতা মহান পেশা’ এ জাতীয় সংলাপ বলে একটি গোষ্ঠী এদেশের শিক্ষকদের নানাভাবে বঞ্চিত করে আধাপাগল বানিয়ে রেখেছে! বাদশাহ আলমগীর মনে হয় এদেরই পূর্বসুরি!

এদেশে শিক্ষক কতজন? কতজন এসেছেন শিক্ষকতার নেশায়? শিক্ষকতা যদি একটি ব্রত হয় তবে একে ব্রত হিসেবে নিয়েছেন কতজন শিক্ষক? শিক্ষক এদেশে ধর্ষক হয়, জাল সনদধারী হয়, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী হয়, মাদকাসক্ত হয়, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর হয়! শিক্ষক কি এমন হতে পারে? কিন্তু এদেশে শিক্ষক নামের কুলাঙ্গারের অভাব তো নেই। এদেশে প্রকৃত শিক্ষক আছে কত পারসেন্ট? শিক্ষক কাম পলিটিশিয়ান, শিক্ষক কাম ব্যবসায়ী, শিক্ষক কাম চাষীর সংখ্যাই এখানে বেশি।

শিক্ষককে অপমান করার প্রবণতাও এদেশের মানুষের কম নয়। ছাত্র কিংবা অভিভাবক, রিক্সাচালক থেকে বাসচালক কিংবা হেলপার, শ্রমজীবী যার কথাই বলেন শিক্ষকরা এদেশে তাদের কাছে কতটা মর্যাদা পান? একবার পরিচয় দিয়ে দেখবেন। এদেশের চায়ের দোকানে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির চেয়ে থানার কনস্টেবলের মূল্য বেশি! এদেশের প্রভাবশালী আসল স্যারেরা শিক্ষকদের নমশূদ্রের চোখে দেখেন আর অবসর পেলে ক্লাসরুমে ঢুঁ মারেন!

এদেশে ‘শিক্ষকরা বেশি কথা বলে’! তাঁদের কথা বলার জন্য আরেকটি দিন বরাদ্দ হলো! বিষয়টি খারাপ না।

তবে বেশি কথা না বলে এদিন তারা কবিতা লিখলে ভালো করবেন। কাজী কাদের নেওয়াজ টাইপ কবিতা না, মহান কোনো কবিতা!!!!

শিক্ষা থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Sujon Hamid
সুজন হামিদ
জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৮৭ খ্রি., শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম তাওয়াকুচায়। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পারিবারিক জীবনে তিন পুত্র আরিয়ান হামিদ বর্ণ, আদনান হামিদ বর্ষ এবং আহনাফ হামিদ পূর্ণকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। একসময় থিয়েটারে যুক্ত থেকেছেন। রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয় করেছেন অনেক পথনাটকে। মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শকে লালন করেন হৃদয়ে। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের। গ্রন্থ: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞানগ্রন্থ 'বাংলাকোষ'(২০২১)।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *