প্রথম পাতা » মতামত » রাজনীতিটা বেঁচে থাক

রাজনীতিটা বেঁচে থাক

Politics

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ বহুবার রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। সবশেষে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’র যে অরাজনীতিক মাংসন্যায় চলেছে তাতে বাংলার মানুষ বুঝতে পেরেছে একটি জাতির উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক সরকারই দরকার।

বিভিন্ন অলি-গলি দিয়ে অবৈধ পথে এদেশে ক্ষমতা দখলের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলেও দুর্বৃত্তরা এখনো সক্রিয় আছে। সুতরাং অবৈধ ক্ষমতা দখলের সবপথ বন্ধ হলেও লক্ষিন্দরের বাসরঘরের ফুটা কিন্তু বন্ধ হয় নাই! কালনাগ যে কোনো সময় হানা দিতে পারে। তাই সুস্থধারার রাজনীতি, কল্যাণের রাজনীতি, জনবান্ধব রাজনীতিই পারে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে। রাজনীতিটা বাঁচিয়ে রাখা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব বলে মনে করি।

রাজনীতি বাঁচিয়ে রাখার গুরু দায়িত্ব যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁদেরই হাতে । তাঁদের আচরণ-উচ্চারণ হবে জনকল্যাণমূলক, দেশবান্ধব ও প্রগতিশীল চিন্তাধারার। রাজনীতিবিদ যদি হোন রাজনীতিবদ তবেই বিপত্তি। তখন জনগণের সেবক হয়েও তারা হয়ে যান কথিত ‘দুর্বৃত্ত’!

এদেশে রাজনীতির শিক্ষাটা হয় ‘বড়ভাই’দের কাছে।

এখানে রাজনীতির কোনো শিক্ষক নেই, গুরু নেই। ছাত্ররা কলেজে এসে রাজনীতি শেখে না। বাজারে রাজনীতি শেখে, কলেজে এসে প্রয়োগ করে। পরে এরা শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে, পাশে বসার জায়গা চায়, আবার এরাই ওসির পাশে দাঁড়ায়, ইউএনওর সামনে কাঁচুমাচু করে, এসিল্যান্ড হয় তাদের আইকন! আফসোস! অথচ শিক্ষকরাই রাজনীতির পাঠটা ভালো বুঝে। বাংলামায়ের দামাল ছেলেরা পির চিনে না, বটগাছ সেলাম করে! এরপর পদে পদে ধাক্কা খায়, কেউ পাক্কা হয়, কেউবা খাদে পড়ে!

ভার্সিটির রাজনীতিও ‘বড়ভাই’ কেন্দ্রিক। রাজনীতি হয় হলে হলে, রাস্তায়, ক্যান্টিনে, ডাইনিং-এ, গেস্টরুমে আনাচে-কানাচে। শিক্ষকদের কাছে এরা যায় প্রতিদ্বন্দ্বী সেজে। তাঁদের কাছেও রাজনীতির কোনো পাঠ নাই। প্রভোস্ট হলে থাকেন নেতাকে সেলামি দিয়ে, হাউজ টিউটরের ভাগ্য লেখা পাতিনেতার স্লোগানে, পিকেটারের করতলে! হায়রে অভাগা জাতি!!!

এভাবে রাজনীতির পাঠ একদিন সমাপ্ত হয়। একসময় কর্মজীবন শুরু হয়। রাজনীতির নেতা কিংবা প্রশাসনের ছোকরা সকলের কাছেই নিপীড়িত প্রাণির নাম শিক্ষক সম্প্রদায়। শিক্ষককে লাথি মারা যায়, কলার ধরা যায়, পা ধরানোও যায় এদেশে ! পুরো জাতি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। শিক্ষক মানে এখানে কোচিং সেন্টারের শিক্ষকও যা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও তা। এখানে কিন্ডারগার্টেনও অধ্যক্ষ আছে, আবার কলেজেও অধ্যক্ষ আছে! এ সমাজ শিক্ষকে টইটম্বুর! এখানে ঘোলের দামে ঘি পাওয়া যায়! কোনো নিয়ম নাই, নীতি নাই। এদেশে শিক্ষা দিয়ে ডালভাতের ব্যবস্থা করা হয়! তাই এতো অবিচার, অনিয়ম, আদর্শহীনতা!

রাজনীতিতে সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হয়, রাজনীতির আদর্শের শিক্ষক থাকতে হয়। তা না থাকলে একসময় যে রাজনীতির পাঠ নিয়ে পরিচিত ছিলেন, কর্মজীবনে সাফল্যের মুখ দেখছেন সেই পূর্বসূরি/উত্তরসূরিরা হয়ে যাবে ‘দুর্বৃত্ত’! এই ধরনের রাজনীতি ব্যক্তির উপরে যাওয়ার সিঁড়ি তৈরি করে কিন্তু দেশ ও জনগণের কল্যাণে কোনো কাজে লাগে না।

প্রকৃত রাজনীতিবিদরাই রাজনীতি করুক, যাঁরা জনগণের সেবা দিতে অঙ্গিকারাবদ্ধ তাঁরা জনগণের ‘স্যার’ না সেজে সেবাদানের মানসিকতায় এগিয়ে গেলেই দেশ ও দশের কল্যাণ হবে।

মতামত থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Sujon Hamid
সুজন হামিদ
জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৮৭ খ্রি., শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম তাওয়াকুচায়। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পারিবারিক জীবনে তিন পুত্র আরিয়ান হামিদ বর্ণ, আদনান হামিদ বর্ষ এবং আহনাফ হামিদ পূর্ণকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। একসময় থিয়েটারে যুক্ত থেকেছেন। রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয় করেছেন অনেক পথনাটকে। মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শকে লালন করেন হৃদয়ে। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের। গ্রন্থ: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞানগ্রন্থ 'বাংলাকোষ'(২০২১)।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *