প্রথম পাতা » গল্প » বাক্সে বন্দী ছিল গল্পটি

বাক্সে বন্দী ছিল গল্পটি

লেখাটি লিখেছিলাম ২০০৭ সালে৷ আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেব৷ থাকি বিজয় সরণীর কাছে একটা বাসায়৷ নীলক্ষেত থেকে কেনা ছোট একটা প্যাডে লিখেছিলাম৷ আজকে অনেকদিন পর খোঁজে পেলাম৷ ঠিক যেভাবে লিখেছিলাম সেভাবেই টাইপ করলাম৷ কিছু কিছু জায়গায় পরিমার্জন করা উচিত ছিল৷ করি নাই ইচ্ছা করেই৷ আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে কিভাবে লিখতাম তা ঠিক রাখার জন্যই এই পরিমার্জন বিরোধিতা৷ যা বুঝতে পারলাম, আগেও খাপছাড়া লেখা লিখতাম এখনও খাপছাড়া৷ গল্পটার কোন নাম দিয়েছিলাম না৷ নামহীন গল্প৷ অসম্পূর্ণ গল্প৷ শেষ করা হয়ে উঠেনি তখন৷ এখন আর সম্ভব না শেষ করা৷ কলেজে পড়াকালীন সময়ে হুমায়ুন আহমেদ আর জাফর ইকবাল বেশি পড়ার ফল এই কিলিয়ে পাকানো কাঠাঁলের গল্প সেটাও ভাবা যেতে পারে৷ গল্পটি কোন এক তেপান্তরে রূপান্তরের৷ রূপান্তর সুন্দর কিন্তু কষ্টে ভরা—

জনমানবহীন এক এলাকা৷ চারদিকে অসীম নিরবতা৷ রাতের অন্ধকার যেনো একটু বেশিই কালো এখানে৷ জোনাকীর মিটমিট আলো এবং ঝিঁঝি পোকাদের অবিরাম গুনগুন ছাড়া আর কিছুই অনুভূতিতে আসে না৷ গাছের শাখায় শাখায় মাঝেমাঝে পেঁচার গম্ভীর আওয়াজ শোনা যায়৷ রাতের আকাশে হঠাৎই উড়তে দেখা যায় এক ঝাক বাঁদুর৷ সবচেয়ে উঁচু গাছের মগডালটি হঠাৎ নড়ে উঠে৷ মনে হয় যেন গাছটি ধীরে ধীরে আরো লম্বা থেকে লম্বাতর হচ্ছে৷

হঠাৎ চারদিক কাপিয়ে ভূমিতে ভূমিকম্পের আলোড়ন তুলে, মাটির বুক দ্বিধাবিভক্ত করে, লম্বা গাছটিকে উপড়ে ফেলে চাঁদের আলোকে ছাপিয়ে একটি কালো ছায়ামূর্তি দৃশ্যমান হলো৷ জনমানবহীন এলাকায় মানব সদৃশ কারো আবির্ভাব! মূর্তির আকৃতি আকাশছোঁয়া৷ দেহটা মসৃণ মনে হলেও পরে দেহ থেকে বের হয়ে আসে অক্টোপাসের মতো লম্বা দঁড়ির ন্যায় কতগুলো জিনিস যা তাকে ঘিরে ফেলে৷ প্রচন্ড চাপ দিতে থাকে৷ প্রচন্ড চাপে তার দেহের ভেতরের সবকিছু বের হয়ে আসতে থাকে৷ মনে হয় কে যেন চিপড়ে রস বের করে ফেলছে৷ চোখের কোটর থেকে অক্ষিগোলক যেন বের হয়ে দূরে ছিটকে পড়ে বিস্ফোরিত হল৷ বুকের মাঝখান থেকে গলেগলে পড়তে লাগলো সাদা ও কালো পুজঁ সদৃশ বস্তু৷ মাটিতে পড়ার সাথে সাথে তা মাটির বুককে ঝলসে দিচ্ছে৷ মূর্তিটি তারপরই বিকট শব্দে চিৎকার করতে থাকে৷ দেহের সমস্ত শক্তির বিনিময় এই চিৎকার৷ এই চিৎকার ছড়িয়ে পড়ে দূর থেকে দূরতম স্থানে৷ মনে হয় যেন এই তো কাছে কোথাও চিৎকার শোনা যাচ্ছে৷ দেহের প্রতিটা লোমকূপ দিয়ে বের হচ্ছে কালো পোকা৷ পোকাদের পেটে লাল রক্ত বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে৷ নিঃশেষ হয়ে আসতে চাইছে মূর্তিটার জীবনীশক্তি৷ তবুও মুক্তি নেই৷ এই শাস্তির পুনরাবৃত্তি হতেই থাকে৷ কানের ফুটো থেকে বের হয়ে আসতে থাকা কালো বিচ্ছুটা মুহূর্তে যেন তার যন্ত্রনা একাধিকগুন করে ফেলে৷

হঠাৎ থেমে যায় সব কোলাহল, চিৎকার৷ ঘাসের উপর শুয়ে থাকতে দেখা যায় উলঙ্গ এক মানুষকে৷ যার দেহ থেকে বের হচ্ছে সুন্দর ভূইচাঁপার গন্ধ৷ তার চোখ দুটি বুদ্ধিদীপ্ত৷ কপালের উজ্জ্বলতা সূর্যসম৷ দেহের গঠন সৌম্যদর্শন৷ অচিন্তনীয় বিশেষণে বিশেষায়িত তার দৈহিক গঠন ও দেহের ভেতরের শান্ত ও নিবিড় আত্মাটা৷ যেখানে শুধু শান্তি আর শক্তিই রয়েছে!

এমন স্বপ্ন প্রায় প্রতি রাতেই দেখছে খিজির৷ তার পুরো নাম খোয়াজ খিজির৷ অনেকে তাকে খোখি বলেও ডাকে৷ আজব এই স্বপ্ন শেষ হওয়ার সাথে সাথে তার ঘুমও ভেঙ্গে যায়৷ ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারে সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে৷ বালিশ চিপড়ে ঘাম বের করা যাবে৷ তোশকের কয়েক ইঞ্চি পর্যন্ত পৌছে গেছে ঘামের ভেজাভাব৷ ঘুম থেকে উঠেই কয়েক গ্লাস পানি খাওয়া, বাথরুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ানো প্রতিদিনকার রাতের স্বপ্ন পরবর্তী নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা৷ আয়নায় নিজের চেহারাটা অনেক বেশি উজ্জ্বল মনে হয় খিজিরের৷ মনে হয় অন্য কেউ আয়নার ভেতর৷ খিজির কালো ও লম্বা৷ বয়স ২৫ এর কাছাকাছি৷ পূর্ণ যুবক৷ এতই কালো যে বন্ধুরা সবাই ডাকে কালোজিরা বলে৷

আজকেও স্বপ্নটা দেখার পর কালোজিরা বাথরুমে ঢুকেই এক আশ্চর্য জিনিস আবিষ্কার করলো৷ সে আর কালো নেই৷ খিজির বাথরুমের আয়নায় তার নতুন রূপ দেখে খুবই বিস্মিত হয়৷ তার জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করতেছিল তা সে বুঝতে পারেনি তখনো৷ আয়নার ভেতর থেকে সাদা খিজির ধীরে ধীরে বের হয়ে আসতে থাকে৷ আয়নাটা যেন পানির আবরণ দিয়ে তৈরি৷ মূর্তিটা সহজে ও সাবলীলভাবে আয়নার ভেতর থেকে বের হয়ে আসছে৷ খিজিরের বিস্ময় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে যায়৷ তারপর তার কাছে সবই যেন স্বাভাবিক মনে হতে থাকে৷ মূর্তিটা খিজিরের সামনে এসে দাঁড়ায়৷ মনে হয় যেন একই হুবহু দেখতে দুটি মানুষ৷ শুধু মনে হয় কোন এক বিচিত্র কারনে একজনের গায়ের রঙ কালো হয়ে গেছে৷ মূর্তিটা কোন কথা না বলে হাত বাড়িয়ে দিতে থাকে খিজিরের বুকের দিকে৷ খিজির সরে যেতে চেষ্টা করে৷ কিন্তু না৷ সে যেন পাথরের মূর্তি হয়ে গেছে৷ তার পা দুটি যেন মাটির সাথে গেথে গেছে৷ চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করে সে৷ কিন্তু কোন আওয়াজ বের হয়না৷ হাত পা ছুড়তে চেষ্টা করে, কিন্তু মনে হতে থাকে, কে যেন হাত পা গুলো শক্ত করে ধরে রেখেছে৷ এদিকে হাতটি ধীরেধীরে তার বুকের একেবারে কাছে এসে পৌঁছেছে৷ কিন্তু সে কিছুই করতে পারছে না৷ অবশেষে হাতটি তার বুকের কাছে এসে পড়লো৷ হাতটি তার বুকে স্পর্শ করার আগেই যেন সে অনুভব করলো বরফের চেয়ে শীতল একটা স্পর্শ৷ সাথে সাথে জ্ঞান হারালো খিজির৷

গল্প থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *