প্রথম পাতা » মতামত » পদ্মাসেতু : দক্ষিণ বাংলার মহাকাব্য

পদ্মাসেতু : দক্ষিণ বাংলার মহাকাব্য

Padma Multipurpose Bridge

আমার নাট্যগুরু এমএবি সুজন রচিত ‘চোরা’ নাটকের একটি সংলাপ:

‘…একবার গঞ্জ থেইকা ফিরার সময় লঞ্চডুবিতে পেঁচিবাড়ির ফজার বেটা জহু গেলো মইরা। লাশ খুঁইজা পাইল না। তহন মন্ত্রণালয় থেইকা ঘোষণা দিল – যেসব পরিবারের লোক মারা গেছে আমরা তাদের সমবেদনা জানাই। আপনারা চিন্তা করবেন না। আমরা প্রত্যেকটি লাশের বদলে একটি করে ছাগল উপহার দিব, ইনশাল্লাহ!’

নাটকটির এই সংলাপটি সেকালে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। এই জনপ্রিয়তার মূলে ছিল সমকালীন বাস্তবতা। প্রতি ইদের আগে – পরেই আমরা টিভিসেটের সামনে বসতাম লঞ্চডুবির সচিত্র প্রতিবেদন দেখার জন্য। ঐদিকে স্বজন-হারানো লোকদের হৃদয়ার্তি, আরেকদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত পদস্থ লোকদের কমিক সংলাপ! যারা কখনো লঞ্চে উঠেননি কিংবা নদীর উন্মাতাল রূপ স্বচক্ষে দেখেননি তারা কখনো এই অভিজ্ঞতা উপলব্ধি করতে পারবেন না।

আমি যে কয়বার সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়েছি লঞ্চযাত্রার সময়টুকুর পুরোটা খোলাচোখে যেতে পারিনি। প্রথমবারতো কয়েকশবার প্রায় লঞ্চ ডুবে গিয়েছিল! আমি পুরোপথ চোখ বন্ধ করে ছিলাম বলে দেখতে পারিনি! আশ্বিনের ঝড়ের রাতে কিংবা ভরা বর্ষায় যেসব মানুষ দক্ষিণাঞ্চল থেকে লঞ্চে পাড়ি দেন আমি মনে করি তাদের দেহের পুরোটাই কলিজা! পদ্মানদীকে নতুন করে পরিচয় করানোর প্রয়োজন নেই। পদ্মা প্রমত্তা, পদ্মা অনন্তযৌবনা। পদ্মার ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে গানও আছে:
‘সর্বনাইশা পদ্মা নদী, তোর কাছে সুধাই; বল আমারে তোর কি রে আর কুল কিনারা নাই…?’

‘সর্বনাইশা’ পদ্মা নদীতে সেতু নির্মাণের ঘোষণাটা তখন নির্বাচনি সংলাপ বলেই মনে হয়েছিল। পরে যখন বিশ্বব্যাংক টাকা ইনভেস্ট করবে না বলে দিল তখন পদ্মায় সেতু নির্মাণ অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছু না! তারপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিলেন : ‘নিজস্ব অর্থায়নেই হবে পদ্মাসেতু!’
বাংলার মানুষ আরেকবার হাসির খোরাক পেলো! ছেলেমেয়েদের টিফিনের টাকায় প্রমত্তা পদ্মায় বাঁধ হবে এ কাজটি বাংলাদেশ স্বাধীন করার চেয়েও দুরূহ মনে হয়েছিল বাংলার মানুষের কাছে। কিন্তু সেই কঠিন কাজটিও অবশেষে হলো।

বাতি জ্বলে উঠেছে পদ্মার বুকে। এ প্রদীপের আলোয় কেটে গেছে হাজার বছরের রাত্রির অন্ধকার। দক্ষিণবঙ্গের মানুষেরা স্বপ্ন দেখছে দিনবদলের। তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে এই সেতুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে। সবচেয়ে বড় যে অর্জন তা হলো ভয়ঙ্কর লঞ্চডুবির অনেক মর্মন্তুদ ঘটনা আমাদের হৃদয়কে আর হয়তো স্পর্শ করবে না। অনেকের জানমালের নিরাপত্তা তৈরি হলো নিশ্চয়ই। আমার কাছে পদ্মা সেতু কংক্রিটের তৈরি এক মহাকাব্য। এ মহাকাব্য দক্ষিণ বাংলার মানুষের হলেও কর্মযজ্ঞটি পুরো বাঙালি জনগোষ্ঠীর আত্মপ্রত্যয় ও প্রাতিষ্মিকতার এক উজ্জ্বলতম সাক্ষর। এদেশের মানুষকে স্বাধীনতার স্বপ্ন ও সাধ দিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁরই যোগ্য দুহিতা, বাঙালির প্রত্যয় ও স্বাতন্ত্র্যের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে গড়া পদ্মা সেতু বাঙালির বীররসের এক অমর মহাকাব্য।

সাহিত্যের ছাত্ররা সহজেই মহাকাব্যের স্বরূপটি জানবেন। যারা সাহিত্যের ছাত্র নন তাদের জন্য মহাকাব্যের একটি সাধারণ সংজ্ঞার্থ এমন:

‘স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল বিস্মৃত, ওজস্বী ভাব, ভাষা ও ছন্দে রচিত, যুদ্ধ-বিগ্রহের কাহিনি নিয়ে নায়কের বীরত্বগাথা রচিত হয় যে কাব্যে তাই মহাকাব্য।’

মহাকাব্যের সর্গ থাকে কমপক্ষে নয়টি। কংক্রিটের এ মহাকাব্যের সর্গগুলো নিম্নরূপ:

প্রথম সর্গ : ষড়যন্ত্রনামো

পদ্মায় সেতু হবে এটি হয়তো কোনো কোনো বাঙালি চাননি। ফলে তারা নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। দাতা প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংকও এ প্রকল্প থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সেতু নির্মাণ। বাঙালির প্রত্যয়ী নারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন: আমরাই করব পদ্মাসেতু। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা টিফিনের টাকা পাঠাতে থাকে এ প্রকল্পের জন্য। আজ আমরা গর্ব করে বলতে পারি : পদ্মাসেতু আমাদের এবং কেবল আমাদেরই। জয় বাংলা।

দ্বিতীয় সর্গ : পাতালেপাইলিংনামো

সর্বনাইশা পদ্মাকে বশে আনতে ৪০ তলা দালানের সমান পাইলিং করতে হয়েছে সেতুর জন্য, যা করতে বানিয়ে আনতে হয়েছে একেবারেই নতুন যন্ত্র। পদ্মার গড় গভীরতা ৪০ মিটার, অর্থাৎ পানির ৪০ মিটার নিচে নদীর তলদেশ। মিটার কিন্তু। ফিট না। চল্লিশ মিটার মানে ১৩১ ফিট প্রায়। সাধারণত প্রতি তলার উচ্চতা হয় দশ ফিট করে। সেই হিসাবে, পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে পানির পৃষ্ঠের হাইট হল ১৩ তলা বিল্ডিং এর সমান। তাহলে ব্রিজের কলামগুলো (যেগুলোকে আসলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ভাষায় পিয়ার বলে ) ১৩ তলা বিল্ডিং এর সমান হতে হবে। কিন্তু কলাম যদি মাটিতে গাঁথা না থাকে, পদ্মার যে স্রোত, কলাম তো ভেসে চলে যাবে। কি মনে হয়, ১৩ তলার সমান লম্বা কলাম ভেসে যাবে না? যাবে। এটা পদ্মা। এবং প্রথমে বেশকিছু নির্মাণ ভেসেও গিয়েছিল!

এ কারণে কলাম মাটিতে গেঁথে দিতে হবে। কতটুকু গাঁথবেন? পদ্মার তলদেশের মাটি হল বালি টাইপের, নরম কাদা টাইপ। পাথরের মত শক্ত না। বেডরক প্রায় ৮ কিমি নিচে বলে ধারনা করা হয়। ৮ কিমি হল মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা! তো বেডরক পর্যন্ত যাওয়ার স্বপ্ন না দেখাই ভাল। অনেক দেশেই বেডরক অনেক অল্প নিচেই পাওয়া যায়। তাদের দেশে যে কোনো সেতু বা স্ট্রাকচার বানানো অনেক কম খরচের ব্যাপার কারণ তাদের ফাউন্ডেশন বানানো অনেক সহজ, বেশি গভীরে যেতে হয় না বলে খরচও কম। কিন্তু আমাদের এদিক দিয়ে কপাল খারাপই বলা চলে। আবারো নদীর নাম পদ্মা!

তাহলে পদ্মা নদীর ব্রিজের পাইল কতটুকু দিতে হবে?

বর্ষাকালে যখন অতিরিক্ত স্রোত থাকে, এই পদ্মার তলদেশের বালির মতন মাটি, ধুয়ে চলে যায়। এটাকে scour হওয়া বলে। পদ্মা নদীর scour হওয়ার সর্বোচ্চ রেকর্ড হল ৬৫ মিটার (প্রায়)(বা ৬১ মিটার)। মানে কোন কোন মৌসুমে স্রোতের তীব্রতায় নদীর নিচ থেকে ৬৫ মিটার উঁচু মাটি ধুয়ে চলে যায়। মানে ২১৩ ফিট। মানে ২১ তলা বিল্ডিং এর সমান হাইটের মাটি ধুয়ে চলে যায়। পদ্মার এই প্রায় ২১ তলার সমান মাটি ধুয়ে চলে যাবার রেকর্ড বা এত বেশি পরিমাণ সেডিমেন্ট (মাটির কণা) ট্রান্সপোর্ট করার রেকর্ড অন্য কোন নদীর নেই। এ অবস্থায় পানির নিচে মাটি পেতে হলে আপনাকে নিচে নামতে হবে কমপক্ষে ১৩+২১=৩৪ তলা!

তাহলে আপনাকে ব্রিজের যে কলামগুলো দিতে হবে, সেগুলোকে ৪০+৬৫=১০৫ মিটারের বেশি লম্বা হতে হবে! মানে ৩৪ তলা বিল্ডিং এর চেয়ে লম্বা কলাম!

এখন, নদীর কোন জায়গায় scour বেশি হয়, কোথাও কম হয়। আপনি ঠিক সিওর না, কোথায় কতটুকু scour হয়ে আপনার সাধের পদ্মা ব্রিজের কলাম বের হয়ে যাবে (exposed হবে), মাটিতে গেঁথে থাকবে না, ফলাফল হিসেবে এ লম্বা কলামটা ভেসে যাবে! পদ্মা সেতু কলাপস করবে!

এজন্য মোটামুটি এভারেজ ১২০ থেকে ১২৮ মিটার পাইল দেয়া হয়েছে। ১২০ মিটার মানে প্রায় একটা ৪০ তলা বিল্ডিং! এই ৪০-৪২ তলা বিল্ডিং এর সমান লম্বা পাইল, বসানো হয়েছে। যেটা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে রীতিমত অবিশ্বাস্য।

তৃতীয় সর্গ : বিয়ারিংনামো

পিলার এবং স্প্যানের মাঝে যে বেয়ারিং থাকে, যেটা মূলত ভারসাম্য রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, পদ্মায় সেই বেয়ারিং-এর সহনক্ষমতা সর্বোচ্চ। ১০ হাজার ৫০০ টন সহনশীল বেয়ারিং বসানো হয়েছে, যা এই প্রথম। সানফ্রানসিস্কোর গোল্ডেন গেট ব্রিজের জন্য ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টন সহনশীল বেয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছিল। পদ্মায় ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ওজনের একেকটি বেয়ারিং ব্যবহৃত হয়েছে। পৃথিবীতে এর আগে এমন বড় বেয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি কোনো সেতুতে!

চতুর্থ সর্গ : স্পেনোনাম

পদ্মা সেতুর নদীর অংশ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এই অংশগুলোকে ৪০টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি ভাগের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ৪১টি পিলারকে ৪০টি স্প্যান দিয়ে জোড়া দিয়েই পদ্মা সেতু। স্প্যানগুলো হচ্ছে ভারী স্টিলের কাঠামো, যা দ্বিতলবিশিষ্ট। এর ভেতর দিয়ে যাবে ট্রেন। আর ওপরে কংক্রিটের স্ল্যাব জোড়া দিয়ে করা হয়েছে যানবাহন চলাচলের পথ। দুটি পিলারের মধ্যে একটি স্প্যান বসানো হয়েছে। এই নদীর অংশের বাইরে দুই পাড়ে ডাঙাতেও সেতুর অংশ থাকবে। এটাকে বলা হয় ভায়াডাক্ট। এর দৈর্ঘ্যও প্রায় ৪ কিলোমিটার। এটাতে আর স্টিলের স্প্যান বসবে না। এই অংশে যানবাহন চলার পথ হবে সাধারণ উড়ালসড়কের মতো। আর রেলের অংশ হবে সাধারণ রেলসেতুর মতো। নদী ও ডাঙার অংশ মিলিয়ে প্রায় ৯ কিলোমিটার অংশকে বলা হচ্ছে মূল সেতু। মূল সেতুতে পিলার ১১৮টি। এর মধ্যে নদীতে ৪২টি, ডাঙায় ৭৬টি।

পঞ্চম সর্গ : নদীশাসনামো

প্রমত্তা পদ্মার ভাঙ্গন থেকে সেতুকে রক্ষা করতে এবং নদী শাসনে এখানে দুই দিকে ১২ কিলোমিটার নদী শাসনের যে কাজটি আছে, সেটি সিঙ্গেল কন্ট্রাক্টে বিশ্বে সর্বোচ্চ। একচুয়ালি সব মিলিয়ে ১৪ কিলোমিটার (১.৬ মাওয়া+১২.৪ জাজিরা) এলাকা নদী শাসনের আওতায় আনা হয়েছে। এই নদী শাসনে খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি। এই নদী শাসন কার্যক্রমে নদীর তলদেশ খনন, ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলা ও পাড় বাঁধাইয়ের কাজ রয়েছে। এই কাজে ১ কোটি ৩৩ লাখ কংক্রিটের ব্লক ও ২ কোটির বেশি বালুভর্তি জিও ব্যাগ ব্যবহার হয়েছে। নদীশাসন ব্যাপারটি খুবই দুরূহ। কারণ নদীতে স্কাওয়ার (মাটি ধুয়ে যাওয়া) এত গভীরে যেতে পারে যে হয়তো ওপরের দিকে কিছু প্রটেকশন দেয়া হল। দেখা গেল নিচ থেকে মাটি ধুয়ে চলে গেছে। তখন উপর থেকে পাড় ভেঙে পড়ে যাবে। কারণ নিচে কোন সাপোর্ট নেই, সাপোর্টের মাটি ধুয়ে চলে গেছে পুরোটাই। এজন্য অনেক নিচে থেকে পাথর, কংক্রিট ব্লক আর কিছুটা নতুন প্রযুক্তির জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে পদ্মার মত একটা রাক্ষুসী নদী যে কিনা ৬৫ মিটার scour করে ফেলে, তাকে কতটা শাসন করা যায় এ ব্যাপারে আশংকা রয়েই যায়, সুতরাং এই নদী শাসনের কাজটা চালিয়ে যেতে হবে বছরের পর বছর।

ষষ্ঠ সর্গ : প্রবাহনাম

প্রতি সেকেন্ডে দেড় লাখ কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হবে। এ ধরনের পানিপ্রবাহ একমাত্র আমাজান নদীতে দেখা যায়। ওই নদীর ওপরে কোনো সেতু নেই। এ ধরনের শক্তিশালী নদীর ওপরে পদ্মা–ই হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম সেতু।

সপ্তম সর্গ : হ্যামারনামো

পদ্মা সেতু প্রকল্পের ২৯৮টি পাইল ড্রাইভ করার জন্য মোট ৩টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হাইড্রোলিক হ্যামার (আইএইচসি ৩০০) হ্যামার আনা হয় জার্মানি থেকে। যাদের ক্ষমতা ছিল ১৯০০ কিলোজুল, ২৪০০ কিলোজুল, ৩৫০০ কিলোজুল। এরমধ্যে ৩৫০০ কিলোজুল হ্যামারটি ছিল বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী হ্যামার।

অষ্টম সর্গ : কার্যোদ্ধারনামো

এতো এতো জটিল, দুরূহ কর্মযজ্ঞসম্পন্ন মেগা প্রকল্পটির কাজও শেষ হয়েছে। আগামী ২৫ জুন, ২০২২ সেতুটি উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মায় এখন গভীর রাতেও প্রদীপ জ্বলে। একসাথে জ্বলে ওঠে শতশত আলোকশিখা। রাজা রাবণ সমুদ্রে রাম লক্ষ্মণের পারাপারের সেতু দেখে অজেয় সমুদ্রের প্রতি অভিমান করে বলেছিলেন : ‘কী সুন্দর মালা আজি পড়িয়াছ গলে!’ পদ্মায় রাতের দৃশ্য দেখলে আপনারও রাবণের মতো অভিমান হতে পারে যদি আপনি ইস্ট পাকিস্তান কোম্পানির হন! আর দেশপ্রেমিক বাঙালি হলে হৃদয় ভরে উঠবে গর্ব আর অহঙ্কারে!

নবম সর্গ : মুখেছাইনামো

‘হবে না’, ‘সম্ভব না’, ‘হুদাই’, ‘টাকা মারার ধান্দা’ এইসব যারা বলেছিলেন তারা আজ মুখে কুলুপ দিয়েছেন! আর বলে বেড়াচ্ছেন : ‘এতো ভালো ভালো না!’ তবে এখন যাই বলেন, মুখে যে চুনকালি পড়েছে তা ঢাকবেন কী করে!

বাংলার প্রথম মহাকাব্য লিখেছিলেন দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন! তিনি বীররসের কাব্য লিখবেন বলে শুরু করলেও শেষ করেছেন করুণরস দিয়ে। মধুসূদন বাঙালির বীরত্ব দেখেননি বলে তিনি করুণরসে সিক্ত করেছেন তাঁর অমর সৃষ্টিকে। শেখ হাসিনা শেখ মুজিবের কন্যা! যে শেখ সাহেবের ‘হ্যাডম’ সম্পর্কে সারা বিশ্বই ওয়াকিবহাল। তাঁরই ঔরসে জন্ম নেওয়া কন্যার আত্মপ্রত্যয় বিশ্ব আরেকবার দেখল। বীরের ঔরসে জন্ম নেওয়া নারী কখনো করুণরসে সিক্ত হন না। পৃথিবীর সেতুভাণ্ডারে পদ্মাসেতু যুক্ত হলো অনেক রেকর্ড আর বিস্ময় নিয়ে। পদ্মা সেতু মহাকাব্যের অমর নায়ক শেখ হাসিনা।

রাজনীতিক কারণে নয়, পিতার কারণেও নয়, এই সেতু যতদিন থাকবে শেখ হাসিনার নাম ততদিন উচ্চারিত হবে ভক্তি ও ভালোবাসার সাথে।
দক্ষিণ বাংলার মুক্তদ্বার পদ্মাসেতু টিকে থাক শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে।
জয় বাংলা।

মতামত থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Sujon Hamid
সুজন হামিদ
জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৮৭ খ্রি., শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম তাওয়াকুচায়। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পারিবারিক জীবনে তিন পুত্র আরিয়ান হামিদ বর্ণ, আদনান হামিদ বর্ষ এবং আহনাফ হামিদ পূর্ণকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। একসময় থিয়েটারে যুক্ত থেকেছেন। রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয় করেছেন অনেক পথনাটকে। মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শকে লালন করেন হৃদয়ে। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের। গ্রন্থ: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞানগ্রন্থ 'বাংলাকোষ'(২০২১)।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *