তাঁর নাম বেগম ফজিলাতুন্নেছা। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় রেণু। বিয়ে হয়েছিল অতি অল্প বয়সে। সর্বসহায়হারা ছোট্ট রেণুকে সেদিন পিতৃস্নেহে বুকে আগলে রেখেছিলেন শেখ লুৎফর রহমান। তারপর রেণু একদিন বড় হলেন।
শেখ মুজিব ছিলেন সংসার-উদাসী মানুষ। তাঁর ধ্যান-জ্ঞানে ছিল বাংলার রাজনীতি আর মুক্তিকামী অসহায় মানুষের জীবন বদলের ইশতেহার। তিনি সংসার ছেড়ে বাংলাদেশের মানুষকে বুকে টেনে নিয়েছেন। কিন্তু তাতে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে রেণুর ছিল না কোনো অভিযোগ, ছিল না কোনো আক্ষেপ।
শেখ মুজিবের চলার পথকে তিনি অবারিত করে দিয়েছেন। সংসারের হাল ধরেছেন তিনি। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখাসহ সকল দায়িত্ব একাই সামলেছেন। নিয়ম করে জেলে দেখা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির রোডম্যাপ তৈরি করে দিয়েছেন বেগম মুজিব। বছরের পর বছর বঙ্গবন্ধু জেল খেটেছেন কিন্তু বেগম মুজিব কখনো ভরসাহারা হননি। অন্তরে তাঁর বিশ্বাস ছিল- বঙ্গবন্ধু হবেন স্বাধীন বাংলার স্থপতি, জাতির পিতা।
১৯৬৯ সালের তীব্র গণ-আন্দোলনে সরকার বেকায়দায় পড়ে এবং বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। বঙ্গবন্ধু কী করবেন বুঝতে পারছেন না। এমন সময় ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সংবাদ পাঠালেন- প্যারোলে মুক্তি নিলে বাংলার মানুষকে সাথে নিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন। এ কথায় বঙ্গবন্ধু পথ খু্ঁজে পেলেন। বাংলার মানুষ নিঃশর্তভাবে মুক্ত করে আনলো তাঁদের অবিসংবাদিত নেতাকে।
৭ মার্চের ভাষণের আগের দিন বঙ্গবন্ধু পায়চারি করছেন। পরদিন তিনি কী বলবেন এই নিয়ে ভাবনা। রেণুকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি কী বলবেন। রেণু মুহূর্তকাল বিলম্ব না করে উত্তর দিলেন- তুমি যা বিশ্বাস করো তাই বলবে। বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত কণ্ঠের, গণসূর্যসম অঙ্গুলীয় প্রতাপ-প্রত্যয়ঋদ্ধ বিশ্বাস সেদিন মুক্তকামী বাঙালির মুক্তপথের পথ বলে দিয়েছিল।
শেখ মুজিব হয়তো কখনোই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার স্থপতি বা জাতির পিতা হতে পারতেন না যদি ফজিল্লাতুন্নেছা তাঁর জীবনে আলোকবর্তিকা হয়ে না আসতেন।
আজ এই মহীয়সী নারীর জন্মদিন। তাঁকে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণতি।