তখন গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্দা, বৌ-ছি, কানামাছি এরকম অনেক আউটডোর খেলা ছিল। কয়েকটা খেলা ছিল ইনডোর। সাধারণত বৃষ্টির দিনে এসব ইনডোর খেলার কদর ছিল বেশ। আমাদের ছোটবেলায় একটি খেলার নাম ছিল জামাই-বৌ খেলা। পরে জানলাম রবীন্দ্রনাথের ‘একরাত্রি’ গল্পের সুরবালা ও সেকেন্ড মাস্টার নায়কও বাল্যকালে এ খেলা খেলেছেন। খেলাটির প্রবক্তা কে তা জানি না। তবে যিনি প্রবর্তন করেছেন তার রসলীলা ভালো এটা বলা যায়।
জামাই-বৌ খেলায় আমি কেবল একবার একদণ্ড ছাড়া আর কখনো জামাই হতে পারিনি। বয়সে ছোট ছিলাম বলে বৌয়েরা জামাই হিসেবে মেনে নিত না সহজে। আমার মতো ছোটখাটো যারা ছিল তাদের প্রধান কাজ ছিল বাজার করা অথবা বৌজামাইকে পাহারা দেয়া। জামাই-বৌকে তাদের আত্মীয় স্বজন থেকে সেভ করাই ছিল আমার মতো বরযাত্রীদের মূল কাজ। একবার আমি গোঁ ধরলাম- আমাকে জামাই বানাতে হবে। না হলে খেলব না। সবাইকে বলে দিব। আমার মুখ বন্ধের জন্য জামাই বানানো হলো। কিন্তু বৌয়ের জামাই পছন্দ হলো না। সে কয়েকবার আমাকে মারতে এলো। গালি দিল। ধাক্কা মারল। আমি মরমে মরে গেলাম। খেলাই নষ্ট হচ্ছে ভেবে জামাই থেকে ইস্তফা দিলাম। পঞ্চাশ পয়সার একটা চকলেট দিয়ে নতুন জামাই বলল- বাজার করতে যেতে।
জামাইরা ছিল আমাদের চেয়ে বয়সে বড়। তাদের হুকুম আহকাম তামিল করাই ছিল আমাদের কাজ। তারপর চকলেটের ব্যাপার স্যাপার ছিল। আমরা দূরে বাজার করতে যেতাম। সব বাজার কাছেই পাওয়া যেতো। তবু জামাইরা আমাদের দূরে পাঠাত। নদীর ওপারের বাজারে। ফিরে আসতে যেন ঘণ্টা খানেক লাগে এমন দূরত্ব! একবার আমি দূরে গেলাম না! তাড়াতাড়ি ফিরে আসলাম। জামাই তখন আমাকে ধমকা ধমকি করতে শুরু করল। বৌ জামাই দুজনেই অভিশাপ দিলো: আমি কোনোদিনই জামাই হতে পারব না! জীবনে সুখ পাব না ইত্যাদি ইত্যাদি! মজা পেয়ে মাঝে মধ্যেই দূরে যাওয়ার কথা বলে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতাম। জামাইদের মুখগুলো ছিল দেখার মতো!!!
আমার কনিষ্ঠ পুত্র ইদানিং মাঝরাতে কেঁদে কোঁদে ওঠে। একবার জাগলে আর ঘুমায় না। আমার মনে বাল্যকালের স্মৃতি জাগে!
জামাইরা সব আমার দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে!