প্রথম পাতা » বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি » সোনালী ই ওয়ালেট ব্যবহারের নিয়ম, সোনালী ই ওয়ালেট এর সুবিধা

সোনালী ই ওয়ালেট ব্যবহারের নিয়ম, সোনালী ই ওয়ালেট এর সুবিধা

sonali bank e-wallet

গ্রাহক সেবায় সোনালী ব্যাংকের অবস্থান নিয়ে আমরা অনেক কথাই বলি। তবে সোনালী ব্যাংক যে সেবাগুলো দিয়ে আসছে তা আর অন্যান্য ব্যাংকগুলোতে পাওয়া যায় না। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা থেকে শুরু করে সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনেক সেবা দিয়ে থাকে সোনালী ব্যাংক। এজন্য ব্যাংকে সবসময় ভিড় লেগেই থাকে। টাকা পাঠানো বা উত্তোলন করতে সোনালী ব্যাংকে গিয়ে লাইন ধরতে হবে এটাই যেন স্বাভাবিক।

বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে মুজিব শতবর্ষে সোনালী ব্যাংক তার গ্রাহকদের জন্য চালু করল ই-ওয়ালেট যা এখন প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির এই ইলেকট্রনিক ওয়ালেট ব্যবহার করে গ্রাহকরা ঘরে বসে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা লেনদেন করতে পারবে।

Sonali E Wallet

মোবাইলের প্লে স্টোরে গিয়ে “Sonali e Wallet” লিখে সার্চ করলে পাওয়া যাবে অ্যাপটি। তাছাড়া নিচের লিংকে ক্লিক করেও ইন্সটল করতে পারবেন।

এন্ড্রয়েড ফোনঃ
https://play.google.com/store/apps/details?id=bd.com.sonalibank.sw
আইফোনঃ
https://apps.apple.com/app/id1504192221

soanli e-wallet play store

সোনালী ই ওয়ালেট এর সুবিধা

  1. সোনালী ব্যাংকের এক একাউন্ট থেকে সোনালী ব্যাংকের অন্য শাখার যে কোন একাউন্টে ২৪ ঘন্টা যে কোন সময় টাকা পাঠানো।
  2. সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট থেকে BEFTN এর মাধ্যমে অন্য যে কোন ব্যাংকের একাউন্টে টাকা পাঠানো।
  3. সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট থেকে NPSB এর মাধ্যমে অন্য যে কোন ব্যাংকের একাউন্টে তাৎক্ষণিক টাকা পাঠানো।
  4. একাউন্ট থেকে Wallet এ টাকা নিয়ে মোবাইল রিচার্জ করা।
  5. ওয়ালেট থেকে ওয়ালেট সেন্ড মানি করা।
  6. ইউটিলিটি বিল প্রদান করা।
  7. ব্যালেন্স চেক করতে আর শাখায় যেতে হবে না। এক ক্লিকেই যে কোন সময় যতবার খুশি ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন।
  8. শেষ দশটা ট্রানজেকশন এর স্টেটমেন্ট চেক করা।
  9. ক্রেডিট কার্ড এর বিল প্রদান।
  10. ব্রাঞ্চ এর লোকেশন জানা যাবে।
  11. ATM বুথ এর লোকেশন জানা যাবে।

ধীরে ধীরে আরও অনেক ফিচার যুক্ত হবে।

আমি সোনালী ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব ব্যবহার করি। মাসের শুরুতে আমার একাউন্টে বেতনের টাকা জমা হয়। সোনালী ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে যেকোন বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করি। ঘরে বসেই এই অ্যাপটি দিয়ে আমি বাড়িতে টাকা পাঠাই। একাউন্ট টু একাউন্ট। তারা এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়। আমার ব্যাংকে যাওয়া লাগছে না।

সতর্কতা/শর্তসমূহ

  1. একাউন্টে দেয়া মোবাইল নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন এবং লগইন করতে হবে।
  2. যে মোবাইল দিয়ে রেজিস্টার করবেন শুধুমাত্র সেই মোবাইলে এই এ্যাপ ব্যাবহার করতে পারবেন। মোবাইল হারিয়ে গেলে ডিভাইস আপডেট করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে শাখায় যোগাযোগ করতে হবে।
  3. রেজিস্ট্রেশন করে ব্যাংকের এপ্রুভাল এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এপ্রুভালে দেরি হলে শাখায় যোগাযোগ করে এপ্রুভ করিয়ে নিতে হবে। আমার একাউন্ট পরের দিনই এপ্রুভ হয়েছিল।
  4. কেবলমাত্র ব্যক্তিক হিসাব (সঞ্চয়ী/চলতি) এ Sonali e-wallet সুবিধা পাওয়া যাবে।
  5. যৌথভাবে/ যৌথনামে (Joint Client) পরিচালিত হিসাব এবং কোম্পানি/ প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত হিসাবে এই সেবা প্রদান করা হবে না।
  6. কেবলমাত্র Android বা iOS ভিত্তিক স্মার্টফোন সমূহের মাধ্যমে এই সেবা ব্যবহার করা যাবে।
  7. Dormant/ Inoperative/ Deceased হিসাবে এই সেবা প্রদান করা হবে না।
  8. একজন গ্রাহক একই সাথে একাধিক মোবাইল Device -এ এই সেবা ব্যবহার করতে পারবেন না।

সোনালী ই ওয়ালেট ব্যবহারের নিয়ম

ক. সোনালী থেকে সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম

লগ ইন করার পর সেন্ড মানি অপশনে ক্লিক করুন।

sonali send money

একাউন্ট টু একাউন্ট (সোনালী ব্যাংক) নির্বাচন করুন।

sonali account to account

খেয়াল করুন আপনার ব্যাংকের ব্যালেন্স দেখাচ্ছে। এমাউন্টের ঘরে কত টাকা পাঠাবেন তা লিখুন। ব্যাংক একাউন্টের ঘরে প্রাপকের অর্থাৎ যাকে টাকা পাঠাবেন তার একাউন্ট নাম্বার দিন। এর পরের ঘরেই তার নাম দেখাবে। যদি নাম মিলে যায় তবেই কেবল পিন নাম্বার দিয়ে সাবমিট বাটনে ক্লিক করবেন:

Any Branch Banking

আপনার মোবাইলে OTP নাম্বার আসবে। সেই নাম্বারটি দিয়ে সাবমিট করুন।

খ. সোনালী থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম

সোনালী ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠাতে চাইলে আপনি ২টি উপায় অবলম্বন করতে পারেন:

  1. BEFTN ব্যবহার করে।
  2. NPSB ব্যবহার করে।

BEFTN মানে হচ্ছে Bangladesh Electronic Funds Transfer Network. এই পদ্ধতি ব্যবহার করে টাকা পাঠানোর সুবিধা হচ্ছে এটি সম্পূর্ণ ফ্রি এবং লেনদেনের কোন লিমিট নেই। অর্থাৎ যত বেশি টাকাই পাঠাতে চান না কেন, পাঠাতে পারবেন এবং কোন চার্জ দিতে হবে না।এবার আসি অসুবিধায়। BEFTN ব্যবহার করে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। আর যদি ব্যাংক বন্ধের দিনে টাকা পাঠান সেক্ষেত্রে ব্যাংক খোলার আগে টাকা পৌঁছবে না।

অন্যদিকে NPSB মানে হচ্ছে National Payment Switch Bangladesh. এই পদ্ধতি ব্যবহার করে টাকা পাঠানোর সুবিধা হচ্ছে আপনি তাৎক্ষণিক টাকা পাঠাতে পারবেন, ছুটির দিনেও টাকা পাঠাতে পারবেন। প্রাপক সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটের মধ্যে টাকা পেয়ে যাবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে প্রতি ট্রানজেকশনে ১০ টাকা চার্জ দিতে হবে এবং কিছু লিমিট রয়েছে। প্রতিটি লেনদেনে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পাঠাতে পারবেন এবং দিনে সর্বোচ্চ ১০ বার টাকা পাঠাতে পারবেন এবং একদিনে ১০ লাখ টাকার বেশি পাঠাতে পারবেন না।

১. BEFTN ব্যবহার করে টাকা পাঠানোর পদ্ধতি

লগ ইন করার পর BEFTN বাটনে ক্লিক করুন।

sonali e wallet BEFTN

যার একাউন্টে টাকা পাঠাবেন তার একাউন্টটি যে জেলায় অবস্থিত, প্রথমে সেই জেলাটি নির্বাচন করুন। এরপর ব্যাংকের নাম নির্বাচন করে নেক্সট বাটনে ক্লিক করুন।

sonali e wallet branch selection

যে শাখায় টাকা পাঠাবেন, সেই শাখার নাম নির্বাচন করুন।

যার একাউন্টে টাকা পাঠাবেন তার নাম (একাউন্টের নামের সাথে মিলতে হবে), তার একাউন্ট নাম্বার, টাকার পরিমাণ, টাকা পাঠানোর উদ্দেশ্য লিখে পিন নাম্বার দিয়ে সাবমিট বাটনে ক্লিক করবেন:

sonali e wallet ‍to other bank

আপনার মোবাইলে OTP নাম্বার আসবে। সেই নাম্বারটি দিয়ে সাবমিট করুন।

পরের দিন ঐ একাউন্টে টাকা জমা হয়ে যাবে। ছুটির দিন বা ক্ষেত্র বিশেষে দেরি হতে পারে।

২. NPSB ব্যবহার করে টাকা পাঠানোর পদ্ধতি

লগ ইন করার পর NPSB বাটনে ক্লিক করুন।

Sonali e Wallet NPSB

Select Bank থেকে যে ব্যাংকের একাউন্টে টাকা পাঠাবেন সেটি নির্বাচন করুন। যে একাউন্টে টাকা পাঠাবেন সেই একাউন্ট নাম্বারটি লিখুন। সতর্কতা: অবশ্যই পুরো একাউন্ট নাম্বারটি দিতে হবে। বর্তমানে নতুন একাউন্ট করলে যে নম্বরটি পাওয়া যায় তার শুরুতে ব্রাঞ্চকোড দেওয়া থাকে।

এবার টাকার পরিমাণ ও পিন নম্বর দিয়ে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন:

NPSB Sonali E Wallet

আপনার মোবাইলে OTP নাম্বার আসবে। সেই নাম্বারটি দিয়ে সাবমিট করুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঐ একাউন্টে টাকা জমা হয়ে যাবে।

ই-ওয়ালেট এর মাধ্যমে লেনদেনের সর্বোচ্চ সীমা:

১। ব্যক্তি ই-ওয়ালেট হিসাবে স্থিতি ৪,০০,০০০ টাকা।

২। জমা (Add Money) দৈনিক ১,০০,০০০ টাকা।

৩। ই-ওয়ালেট হিসাবে হতে স্থানান্তর (ব্যাংক হিসাবে/ পারসন টু পারসন) দৈনিক ১,০০,০০০ টাকা, মাসিক ৪,০০,০০০০ টাকা মাত্র।

অ্যাপটি চালুর ফলে সোনালী ব্যাংকের সেবার মান অনেক ধাপ এগিয়ে গেল। ব্যাংকে গিয়ে ভিড় করতে হবে না। শাখার পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভালো হবে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাজের চাপ কমে যাওয়ায় তারা গ্রাহকদের প্রতি আরো মনযোগী হওয়ার সুযোগ পাবেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

Bikul
বিকুল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। ভালোবাসেন ব্লগিং করতে এবং অন্যের লেখা পড়তে। অবসর সময় কাটান ভালো মুভি দেখে। সারা বিশ্ব ঘুরে দেখতে চান।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *