বিশ্বব্যাপী ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ বা উষ্ণতা বৃদ্ধির ব্যাপারটা সব দেশের জন্য সমানভাবে ক্ষতিকর নয়। অনেকটা “কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ” টাইপের।
যদিও আমরা এতদিন শুধু এর খারাপ দিকটাই শুনে আসছি। কিন্তু এর কিছু উল্টো চিত্রও আছে।
কিরকম?
যেমন, জাপান, ফিলিপাইন, মাদাগাস্কারের মত দেশগুলোতে শুধু তাপমাত্রাই বাড়বে না, সুনামি হওয়ার সম্ভাবনা আর মুষলধারে বৃষ্টি পড়ার হারও বেড়ে যাবে।
শ্রীলঙ্কার কিছু অংশ আর মালদ্বীপের মত ছোট আর নীচু দেশগুলো সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। কেনিয়া, রুয়ান্ডা, নাইজেরিয়াতে খরা দেখা দেবে। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে।
জার্মানি, কানাডায় ‘হিট ওয়েভ’ বয়ে গিয়ে বহু লোকের মৃত্যু ঘটবে।
কিন্তু রাশিয়া, গ্রিনল্যান্ড, আইসলেন্ডের মত সুমেরু’র কাছাকাছি দেশগুলো এই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে কিছুটা সুফল পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তাপমাত্রা বাড়লে আসলে কি হয়? মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যায়। সে পানি স্থলভাগের দেশ বেয়ে গিয়ে সাগরে পড়ে।
এখন যত বেশি তাপমাত্রা, তত বেশি বরফ গলবে। উত্তর মেরু সংলগ্ন দেশ যেমন রাশিয়া, কানাডা আর গ্রিনল্যান্ড – এদের একটা বড় অংশের বরফ গলে গিয়ে সেই এলাকা বাসযোগ্য হয়ে যাবে।
এইসব দেশের জন্য গ্লোবাল ওয়ার্মিং কিন্তু এটা বেশ ভালো একটা সুযোগ হয়েই আসছে। আশীর্বাদ-ই বলা যায়।
বর্তমানে বরফ জমে থাকার কারণে বছরের বেশিরভাগ সময় উত্তর সাগরের পানিতে নৌকা জাহাজ কিছুই চলে না। কিন্তু ভেবে দেখেন, যদি তাপমাত্রা বেড়েই যায়, তাহলে সারাবছর এই সাগর দিয়ে জাহাজ চলাচল করতে পারবে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০৭০ সাল নাগাদ উত্তর সাগর পুরোপুরি নেভিগেবল অর্থাৎ নৌ চলাচলের উপযুক্ত হয়ে যাবে।
সাইবেরিয়ার মতো জনমানবহীন এলাকাগুলো মনুষ্য বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠবে ধীরে ধীরে। গাছপালা জন্মাবে, ফসল ফলবে।
রাশিয়াতে ইতিমধ্যেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। এর সাথে সাথে প্রতিদিন রিয়েল এস্টেটের চাহিদাও বাড়ছে।
“মানুষ আলাস্কায় গিয়ে থাকতে পারলে সাইবেরিয়া কেন নয়?” – এই প্রশ্ন করেছেন রাশিয়ার অন্যতম রাজনৈতিক নেতা ভ্লাদিমির ঝিরিনভস্কি। ৭৫ বছর বয়সী হোয়াইট সুপ্রিমিস্ট এই নেতার বক্তব্য, আমেরিকা এখন ক্ষয়ের পথে আছে।
মাল্টি কালচার কে প্রাধান্য দেয়ার কারণে তারা আর আগের মত টেকনোলজি, অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হাই স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করতে পারবে না।
সেখানে এখন হিস্প্যানিক, আফ্রিকান, এশিয়ানরা রাজত্ব করছে। আর দশ বছরের মধ্যেই শ্বেতাঙ্গরা হয়ে পড়বে সংখ্যালঘু।
তখন তাদের হয় কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না। এই কারণেই তিনি সাইবেরিয়া কে সেই শ্বেতাঙ্গদের বিকল্প আবাসস্থল হিসেবে বেছে নেয়ার কথা বলেছেন।
সাইবেরিয়া বিশাল এক ভূখণ্ড। প্রায় এক কোটি বর্গকিলোমিটার এলাকার এই ভূখণ্ডে মাত্র কয়েক লক্ষ লোক বসবাস করে। যার বেশিরভাগ শ্বেতাঙ্গ রাশিয়ান, কিছু আছে তাতার, ইউক্রেনিয়ান আর অন্যান্য।
এই ঝিরিনভস্কি ভদ্রলোকই ২০১৫ সালে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, রাশিয়ার জেলখাটা দাগী আসামীদের পরিবার সমেত সাইবেরিয়া পাঠাতে, যেন একদিকে এ জায়গার জমিও দখলে থাকে, আবার মূল ভূখণ্ডের আবর্জনাও দূর হয়।
এইসব শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা কখনও বলবে না যেসব দেশ জনসংখ্যার চাপে পিষ্ট, তাদের থেকে ম্যানপাওয়ার নিয়ে যেতে। বরং যতভাবে পারবে, ঝামেলা তৈরি করবে।
আজ থেকে ১২ হাজার বছর আগে সাইবেরিয়া থেকেই এস্কিমো রা বেরিং প্রণালী পেরিয়ে আলাস্কা হয়ে ঢুকে পড়েছিল উত্তর আমেরিকায়। ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা গেছে, রেড ইন্ডিয়ানরা তাদেরই বংশধর।
এটা সেই ‘আইস এজ (Ice Age)’ এর শেষের দিকের ঘটনা। সময় এসেছে রিভার্স মাইগ্রেশনের।