প্রথম পাতা » মতামত » জন্মেছিলেন বিদ্রোহী এক কবি

জন্মেছিলেন বিদ্রোহী এক কবি

Kazi Nazrul Islam on itol bitol

অসচ্ছল এক মুসলিম পরিবারে জন্মেছিলেন অন্যন্য এক বিদ্রোহী কবি। তিনি আমাদের জাতীয় কবি- কাজী নজরুল ইসলাম। দুঃখ—দুদর্শা, অভাব—ক্লিস্টতা দমাতে পারেনি তাঁকে। দ্রোহের আগুনের মতো অভাবের আগুনে পুড়ে মহা বিদ্রোহীর খেতাব নিয়েছেন আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামের দুখু মিয়া। সেই দুখু মিয়াই আমাদের কবি নজরুল ইসলাম।

কবি পিতা ফকির আহমেদের তিন ছেলে আর এক মেয়ে। প্রথম সন্তানের জন্মের পরপর চারটি সন্তানের মৃত্যু হয়। এরপর ১৮৯৯ সালের ২৫ মে এই দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন দুখু মিয়া। তাঁর মায়ের নাম জাহেদা খাতুন। দুখু মিয়ার জীবনের সাথে দুঃখ যেন পরম সাথী। হোটেলে কাজ করে পড়ার খরচ চালাতেন তিনি। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা ধমীর্য়। এক পর্যায়ে তিনি স্থানীয় মসজিদে মোয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথেও কাজ করতেন।

তাঁর জীবনটা খুবই বৈচিত্রময়। নানান ঘাত—প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই তিনি যেন হয়ে উঠেছেন গণমানুষের কবি। যৌবনে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতেও সৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন কিছুদিন। এসব নিয়মের ছকে বাধা জীবন—যাপন তাঁকে আকর্ষন করতে পারেনি। তাই তিনি চাকরি ছেড়ে যোগ দিলেন সাংবাদিকতায়। সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশ দিয়েছেন। এসময় বিদ্রোহী এবং ভাঙ্গার গান কবিতা লিখে কবি জেলও খেটেছেন।

কবি হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি থাকলেও ছোটদের জন্য তিনি লিখেছেন মজার মজার ছড়া। খুকি ও কাঠবিড়ালী, লিচুচোর, পিলে—পটকা’র মতো মজার মজার ছড়া খুব কম সংখ্যক কবিরাই লিখতে পেরেছেন। ছড়া কবিতার পাশাপাশি তিনি লিখেছেন গান ও ইসলামী সঙ্গীত বা গজল। অসম্ভব সুরেলা কবি নজরুলের গজল। তিনি অভিনয়ও করেছেন। গীতিকার, সুরকার, সাংবাদিক, সৈনিক, রাজনীতিবিদ এমনকি দার্শনিক হিসেবেও বিস্ময়কর বহুমুখি প্রতিভার স্মাক্ষর রেখেছেন তিনি।

অভাব, দুঃখ, বঞ্চনা, ঘাত—প্রতিঘাতে জর্জরিত নজরুলের কবি সত্তায় বারবার উঠে এসেছে অন্যায়ের প্রতিবাদ, বৈষম্য, দুঃশাসন আর শোষনের প্রতিবাদ। তাঁর লেখায় বিদ্রোহী মনোভাব প্রকাশের কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবির খেতাব দেয়া হয়েছে। খেয়ালী এই কবি সৈনিকের পোষাক পরে বিভিন্ন সভায় এসে হাজির হতেন। বড়ই বৈচিত্রময় তাঁর জীবন। কৈশোরে তিনি লেটোর দলে গান গেয়েছেন। যাত্রাপালায় অভিনয় করেছেন। যুদ্ধ করেছেন। মানুষ ও মনুষত্ববোধকে তিনি জাগরিত করেছেন। কিশোর নজরুল এসেছিলেন ময়মনসিংহের ত্রিশালে। সেখানে দরিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সপ্তম শ্রেণীর পাঠ শেষ করে আবারও বর্ধমানে চলে যান। তিনি বিয়ে করেছেন কুমিল্লায়।

নজরুলের কবিতা ও গান তরুণদের হৃদয়ে জাগরণের সৃষ্টি করে। ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম…’, ‘কারার ঐ লোহ কপাট’— এমনসব গানের কথায় রক্তে শিহরণ জাগে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে এসব গান ও কবিতা বিশেষ ভুমিকা রেখেছে। কবি কাজী নজরুল ইসলামকে একাত্তুরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে সপরিবারে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তখন তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান হয়। এসময় তাঁকে জাতীয় কবি’র সম্মানে ভুষিত করা হয়। তাঁর রচিত চল্ চল্ চল্…উর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল কবিতাকে বাংলাদেশের জাতীয় রণসঙ্গীতের মর্যাদা দেয় হয়। ১৯৭৬ সালে ২৯ আগস্ট বিস্ময়কর প্রতিভাধর এই কবি বাংলাদেশে মৃত্যুবরণ করেন।

মতামত থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

S M Mukul
এস এম মুকুল
লেখক-কলামিস্ট, হাওর ও কৃষি অর্থনীতি বিশ্লেষক

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *