প্রথম পাতা » কবিতা » ঋণ করেছি তোমার কাছে

ঋণ করেছি তোমার কাছে

My debt

ঋণ করেছি বনের কাছে,
লতার কাছে, গাছের কাছে
হাওয়ায় কাঁপা পাতার কাছে,
আম বাগানে বোলের কাছে
শিমুল ফুলের রঙের কাছে,
থোকা থোকা ফুলের ভীড়ে
একটি দুইটি ফলের কাছে।
আমি ঋণ করেছি গাছের কাছে।

নইতো ভ্রমর তবু আমি
ঋণ করেছি ফুলের কাছে।
গোলাপ, চাঁপা, সন্ধ্যাতারা,
গাঁদা, বেলি, নয়নতারা
শিমুল-পলাশ মনোহরা
কিংবা স্বর্ণচাঁপার কাছে।
আমি ঋণ করেছি ফুলের কাছে।

ঋণ করেছি বায়ুর কাছে
হাওয়ায় মাঝে ছড়িয়ে পড়া
বকুল ফুলের আয়ুর কাছে।
হঠাৎ করেই ধানের ক্ষেতে
শীষ দোলানো নাচের কাছে।
নদীর জলে পা ভেজানো
অগনিত ঢেউয়ের কাছে।
জৈষ্ঠ্য মাসের তপ্তদুপুর
পথের ধুলা পায়ের নূপুর
একচিলতে মেঘের কাছে।
আমি ঋণ করেছি বায়ুর কাছে।

ঋণ করেছি পাখির কাছে
দোয়েল, শ্যামা, ময়না নামে
অযুত শিসে নিযুত গানে
বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে।
শিমুল ফুলে বুলবুলি আর
কাঠশালিকের নৃত্য দেখে
পিউকাহা আর কোকিলা সুরে
ঋণ করেছি চিত্তে মেখে।

ঋণ করেছি মাঠের কাছে
কাঁচা ধানের গন্ধ নিয়ে
মুখ সাজিয়ে হলুদ রঙে
সরিষা ফুলের রেণু দিয়ে।
ঋণ করেছি তিলের ফুলে
আটকে দিয়ে মধুর মাছি
ঋণ করেছি পাটের পাতায়
ঠোঁটের ফু’য়ে বাজিয়ে বাঁশি।
ঋণ করেছি ধনিয়া ক্ষেতে
একটা ফরিঙ ধরতে গিয়ে
ঋণ করেছি মাঠের কাছে
লক্ষ-অযুত ফসল পেয়ে।

ঋণ করেছি ঘাসের কাছে
শিশির জলে পা ভিজিয়ে।
ঋণ করেছি নিশীথ রাতে
ঝিঁ ঝিঁ পোকার গান থামিয়ে।
ঝোঁপে জ্বলা জোনাক পোকা
বিলায় আলো থোকা থোকা
আঁধার রাতে গাঁয়ের পাশে।
আমি ঋণ করেছি তাদের কাছে।

ঋণ করেছি চাঁদের কাছে
কুঁয়াশা রাতের আঁধার মাখা
ঝাপশা আলোর তারার কাছে।
জানলা দিয়ে বিছানায় নামা
এক চিলতে আলোর কাছে।
ফর্সা নদীর ঢেউয়ে, তলায়
ঘুমিয়ে থাকা চাঁদের কাছে।
চৈতি রাতে হাওয়ায় হাওয়ায়
মেঠো পথে আলো খেলা
হাগরা বনের মলিন ঘাসে।
আমি ঋণ করেছি চাঁদের কাছে।

ঋণ করেছি নদীর কাছে,
স্নেহময়ী নরম নদী,
নরম নদী নারীর মতো
বুকটি জুড়ে দুঃখ ব্যাথা,
দুঃখ ব্যাথার কান্নাক্ষত।
নদী বয়ে চলে অবিরত,
বয়ে চলে মায়ের মতো।
স্বাধীন চলায় কতো মানা
বুকে ভবঘুরে কচুরিপানা।
কিংবা পাড়ে কাঁশেরবনে
চৈত্র এলেই শেষফাগুনে
আগুনগরম রৌদ্রপোড়া
ঘাসের মায়া, মুথার মায়া,
শরৎকালে সাদা মেঘের ছায়া।
ভুলে সকল কিছু জন্ম-অবধি
নদী চলছে দ্যাখো নিরবধি।
খুব নীরবে প্রেমের মতো,
ভালোবেসে প্রিয়ার মতো
জড়িয়ে মায়া অবিরত
বাংলাদেশের বুকের মাঝে।
আমি ঋণ করেছি নদীর কাছে।

ঋণ করেছি তোমার কাছে
একটা হৃদয় নষ্ট করার
একটা জীবন কষ্ট করার
একটা জীবন ভালোবাসার
একটা জীবন তোমায় দেওয়ার
সবই দেওয়ার, কেবল দেওয়ার
এক জীবনে যা-ই আছে।

শিমুল, আমি ঋণ করেছি তোমার কাছে।
ঋণ করেছি ভালোবেসে।

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২। জাদুনগর।

কবিতা থেকে আরও পড়ুন

লেখক পরিচিতি:

রাজু অনার্য
রাজু অনার্য
কবি, গল্পকার ও লোকসাহিত্য গবেষক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বর্তমানে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েই পিএইচ,ডি গবেষণা করছেন লোকসাহিত্য বিষয়ে। প্রকাশিত গ্রন্থ: কাব্য: লাশের মিছিল, অসামাজিক পদাবলী, ঈশ্বরের প্রেমিক ও জেগে ওঠো বিবশ বিবেক। অনুবাদ গল্প সংকলন: বোকাই চাচার ঘোড়া ভাড়া। সম্পাদনা: বঙ্গবন্ধু ও বাংলা লোকসঙ্গীত, শাহ আজাহার ও তাঁর গান, বাউলতত্ত্ব ও ওস্তাদ মফিজ দেওয়ানের গান। গবেষণা: বাউলতত্ত্ব ও বাউল শব্দকোষ। ছড়া: স্বর্ণার ভুটকো ছাগল, ইত্যাদি।

ইতল বিতলে আপনার লেখা আছে?আজই লিখুন



আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *